অপহরণ করে মুক্তিপণ নয়,তার কাছে এসে থাকতে হবে। তিন বছরের শিশুকে অপহরণ করে ঝাড়খন্ডে নিয়ে গিয়ে শিশুর মাকে এমনই হুমকি ফোন করেছিল অভিযুক্ত। অপহরনে অভিযুক্ত যুবক শিশুর মায়ের পুরনো প্রেমিক। সেই ফোনের সূত্র ধরেই ঝাড়খণ্ডে গিয়ে অপহৃত শিশুকে উদ্ধার করে অপহরণকারী যুবককে ধরে নিয়ে গারদে পুরে দিল পুরুলিয়ার পুলিশ।
প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খণ্ডের চন্দনকিয়ারী থানার পাশাপাশি দুই গ্রাম বদমা ও গণকচাষ। বদমা গ্রামের বিনা গণকচাষের হরেন দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক। একেবারে রগরগে প্রেম, মাঠে-ঘাটে দেখা হতো দুজনের। কয়েকটা বছর দুজনের কেটেছে এভাবে। কিন্তু বিনা হরেনের প্রেমের সম্পর্ক বিয়ে পর্যন্ত পৌঁছায়নি।পালিয়ে বিয়ে করাও হয়নি। বিয়েতে পারিবারিক মত না থাকায় বিনার বিয়ে ঠিক হয়ে যায় পুরুলিয়ার কেন্দা থানার পুনুড়া গ্রামে। কিন্তু দুজনের যোগাযোগ ছিলই। লুকিয়ে চুরিয়ে দুজনের দেখাও হতো। মাঝে হরেনের সাথে তিন মাস পালিয়ে ছিল বিনা। মাস পাঁচেক আগে বিনার বাবা বিনাকে আবার পৌঁছে দিয়ে যায় পুনুড়া গ্রামের শ্বশুর বাড়িতে। বিনা জানায় তখন থেকেই হরেনের সাথে তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আর কোন সম্পর্ক ছিল না। কিন্তু সোমবার দিন করেন তার বন্ধুকে নিয়ে মোটরসাইকেলে হাজির হয়ে যায় পুনুড়া গ্রামে। সে সময় বিনা বাড়ির অদূরের পুকুরে বাসন ধুতে গিয়েছিল। সুযোগ বুঝে খাটে শুয়ে থাকা বিনার তিন বছরের ছেলেকে নিয়ে দ্রুত গতিতে মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায় ঝাড়খন্ডের উদ্দেশ্যে। বাড়ির শিশুকে অপহরণ করে পালিয়েছে দুষ্কৃতীরা। পরিবার,পাড়া প্রতিবেশি সহ পুরো গ্রামে খবর চাউর হয়ে যায়।এরই মাঝে রাস্তা থেকে হরেন বিনাকে ফোন করে হুমকি দেয় তাকে এখনই তার সাথে ঝাড়খণ্ডের গ্রামে চলে আসতে হবে। তা না হলে তার ছেলেকে মেরে ফেলবে এবং সেও আত্মহত্যা করবে। বিনা তার স্বামী এবং শ্বশুর বাড়ির লোকেদের বিষয়টি জানায়। সকলে ভয় পেয়ে যায়। এই অবস্থায় কেন্দা থানার দ্বারস্থ হয় বিনা এবং তার স্বামী। অভিযোগ দায়ের হতেই কোমর বেঁধে নেমে পড়ে কেন্দা থানার পুলিশ। হরেনের ফোনের সূত্র ধরে ঝাড়খণ্ডের চন্দনকিয়ারি থানা এলাকায় পৌঁছে যায় পুলিশের একটি দল। হাতে নাতে ধরা পড়ে যায় হরেন। উদ্ধার হয় অপহৃত শিশুটিও। কেন্দা থানার পুলিশ ঘটনায় অভিযুক্ত হরেন গরাই এবং সৃষ্টিধর গরাইকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসে পুরুলিয়ায়। শিশুটিকে দেবেন মাহাতো গভর্নমেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার পর মঙ্গলবার বিকেলে তুলে দেওয়া হয় মা বাবার হাতে। অভিযুক্ত হরেন গরাই এবং তার সাগরেদ সৃষ্টিধর গরাইকে পুরুলিয়া জেলা আদালতে তোলা হলে,বিচারক ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।
এই ঘটনায় পুরো নাটকীয় পরিবেশ তৈরি হয় কেন্দা থানা এলাকায়। পুলিশের তৎপরতায় ২৪ ঘন্টার মধ্যেই উদ্ধার হয়ে যায় শিশুটি। কিন্তু ঘটনার মোড় নেয় অন্যদিকে। কেন্দা থানায় লিখিত অভিযোগে বীনার স্বামী জানান। তার স্ত্রীর সাথে হরেনের বিয়ের আগেও সম্পর্ক ছিল। বিয়ের পরেও ছিল অবৈধ সম্পর্ক। তিনমাস হরেনের সাথে পালিয়ে ছিল।তারপরে বিনার বাবা তার কাছে তুলে দেয়। হাসপাতালে শিশুকে কোলে নিয়ে সাংবাদিকদের বিনা জানায়।তার পুরনো প্রেমিক হরেনেই তার শিশুকে অপহরণ করে নিয়ে গেছিল। হরেনের সাথে তার সম্পর্ক ছিল। সে কথাও অকপটে স্বীকার করে নেয় বিনা। স্বীকার করে নেয় পাঁচ মাস আগেই তার সঙ্গে সম্পর্ক শেষ হয়ে গেছে। শিশু অপহরণের এই ঘটনায় ধ্বন্দে পড়েছেন দুঁদে পুলিশ আধিকারিকরাও। হরেনকে আবার কাছে পেতেই কি অপহরণের নাটক তৈরি করেছিল শিশুর মা?পুরনো প্রেমিককে কি ডেকেছিল বিনাই?
এখন এইসব প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে পুরুলিয়ার পুনুড়া এবং ঝাড়খণ্ডের বদমা গণক চাষ গ্রামে।