গত কয়েকদিনের অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগের বিস্তর টানাপোড়েনের পর ফের শুরু হল ইসরায়েল প্যালেস্টেনীয় বন্দী বিনিময়। ৬০০ প্যালেস্টেনীইয়কে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল এবং চার বন্দীর মরদেহ ফেরত দিয়েছে হামাস।গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত অনুযায়ী গত শনিবার ছয় ইসরায়েলি বন্দীকে মুক্তি দিয়েছিল হামাস। তাঁদের সঙ্গে চার বন্দীর মৃতদেহও হস্তান্তর করা হয়। বিনিময়ে ৬২০ জন প্যালেস্টেনীয় কারাবন্দীকে মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল ইসরায়েলের। কিন্তু প্রতিবার বন্দিদের মুক্তির সময় হামাস একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে, যা ‘অপমানজনক’ এমন অভিযোগ তুলে বন্দীদের মুক্তি থামিয়ে দেয় ইসরায়েল।
এর পর বন্দী বিনিময় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে।ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর দাবি করেন প্রতিবার বন্দিদের মুক্তির সময় হামাসের এই ‘অপমানজনক’ ব্যাপারটা বন্ধ করতে হবে। প্রতি বার মুক্তি দেওয়ার সময় বন্দিদেরদের পদযাত্রার মাধ্যমে মঞ্চে নিয়ে এসে হামাস সদস্যরা তাদেরকে উপস্থিত গাজাবাসীর উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে অভিবাদন জানাতে বাধ্য করে – এমনটাই অভিযোগ ইজরায়েলের। অর্থাৎ জোর করে ভাল আছি দেখানো বা হামাসের প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখানোর চেষ্টা করা হয় এর মাধ্যমে। হামাসের এই কায়দা একেবারেই না পছন্দ ইজরায়েলের। গত ১৯ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে হামাস এ পর্যন্ত ২৫ জন বন্দিকে এভাবেই মুক্তি দিয়েছে বলে অভিযোগ। অন্যদিকে ইজরায়েলের পাশে থেকে হোয়াইট হাউসও ইসরায়েলের এই সিদ্ধান্তে সমর্থন জানিয়ে বলে প্যালেস্তেনীয় কারাবন্দীদের মুক্তি পিছিয়ে দিয়ে যথাযথ কাজই করা হয়েছে। শনিবার সপ্তম দফায় বন্দি বিনিময়ের অংশ হিসেবে ছ’জন বন্দিকে ও চার মৃতদেহ হামাস প্রত্যর্পন করলেও বিনিময়ে কিন্তু ৬০০ জনেরও বেশি বন্দিকে মুক্তি দেয় নি ইজরায়েল। উল্টে নেতানিয়াহু হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন “যেকোনো মুহূর্তে তীব্র যুদ্ধ পুনরায় শুরু করতে আমরা প্রস্তুত,”
সেই জটিলতা কেটে গেল এবার।৬০০ জনেরও বেশি প্যালেস্টেনীয় বন্দীকে মুক্তি দেওয়ার পর বৃহস্পতিবার ভোরে চার ইসরায়েলি বন্দীর মৃতদেহ হস্তান্তর করে হামাস। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর অফিস নিশ্চিত করেছে যে তারা চারজন নিহত বন্দীর কফিন পেয়েছে এবং ইসরায়েলে তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে শনাক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অন্যদিকে রামাল্লায়, সাংবাদিকদের সামনেই ইসরায়েলে ৬০০ জনেরও বেশি বন্দীর প্রথম দলকে একটি বাস থেকে নামিয়ে আনন্দোৎসবকারী জনতার সামনে নিয়ে আসা হয়।হিসেব মত এখন পর্যন্ত ইজরায়েলের ২৫ জন বন্দীকে জীবিত অবস্থায় মুক্তি দেওয়া হয়েছে ১,১০০ জনেরও বেশি প্যালেস্টেনীয় বন্দীর বিনিময়ে।
গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী ১৯ জানুয়ারি শুরু হওয়া যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ বা প্রথম পর্যায়টি শনিবার শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু পরবর্তী পর্যায়ের আলোচনা যা ফেব্রুয়ারির শুরুতেই শুরু হওয়ার কথা ছিল – এখনও বাস্তবে পরিনত হয় নি। দু- পক্ষের মধ্যে দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা শুরু হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে মধ্যস্থতাকারী দেশগুলো। ওয়াশিংটনে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যের শীর্ষ দূত জানিয়েছেন যে যুদ্ধবিরতির পরবর্তী পর্যায়ে আলোচনার জন্য ইসরায়েলি প্রতিনিধিরা প্রস্তুত হচ্ছেন। এই আলোচনা হয়তো দোহা বা কায়রোতে হবে, যেখানে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে থাকবে মিশরীয় এবং কাতার।
Leave a comment
Leave a comment