বিজেপিতে যাচ্ছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়? এই জল্পনা বেশ কিছুদিন ধরেই শোনা যাচ্ছে। আজ নেতাজী ইনডোরে তৃণমূলের কর্মিসভা থেকে যাবতীয় জল্পনার উত্তর দিয়ে দিলেন খোদ অভিষেক বন্দোপাধ্যায় নিজেই। বিজেপির কাছে কোনওভাবে তিনি বশ্যতা স্বীকার করবেন না, সাফ কথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এ দিন নেতাজি ইন্ডোরে তৃণমূলের মেগা সমাবেশ থেকে দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড ২০২৬-র টার্গেটও স্থির করে দেন তিনি। সিবিআই-কেও আক্রমণ করে তিনি বলেন, “সিবিআই ভয় পেয়েছে। আমার নাম নিয়েছে। কিন্তু ঠিকানা-পরিচয় কিছু দেয়নি । বিজেপি নেতারা যেমন ভাববাচ্যে কথা বলেন, সিবিআই-ও ভাববাচ্যে কথা বলছে।”
এ দিন নেতাজি ইন্ডোর থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সাফ বলেন, “রটানো হচ্ছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নাকি বিজেপিতে যাবে। আরে আমার গলা কেটে নিলেও, আমার গলা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিন্দাবাদই বেরোবে। আমি বেইমান নই। বাজারে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, নতুন দল আসছে। বিজেপির হাতে কলকে আর তামাক খেয়ে কয়েকটা সংবাদমাধ্যম আর সাংবাদিক এই কাজ করছে। খবরে যা দেখবেন, আমি বলছি একশোয় একশো শতাংশই মিথ্যা।” এই সব কথা আপনারা একদম বিশ্বাস করবেন না।
সন্দেশখালির কথা মনে করিয়ে তিনি বলেন, “আজ ২৭ ফেব্রুয়ারি, এক বছর আগে এই দিনটার কথা ভবুন। কীভাবে বসিরহাটের একটা ঘটনা নিয়ে তৃণমূলকে, রাজ্যকে কালিমালিপ্ত করা হয়েছিল। ওদের রাগ, রাজ্যের মানুষকে ভুল বোঝাতে পারেনি। গুজরাট, উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ করতে পারেনি। তৃণমূলের লক্ষ লক্ষ কর্মী বুকের রক্ত দিয়ে রক্ষা করবে। বিজেপির কাছে বশ্যতা স্বীকার করব না আমরা। বিজেপির কাছে ইডি-সিবিআই আছে, বিচারব্যবস্থার একাংশ রয়েছে, সংবাদমাধ্যম আছে, লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা আছে। ইনকাম ট্যাক্স আছে, কিন্তু মনে রাখবেন, বুকের রক্ত দিয়ে দলকে আগলে রাখার মতো একটা কর্মীও ১০ বছরে এরা তৈরি করতে পারেনি। এটাই আমাদের আর তাদের মধ্যে পার্থক্য।”
২০২৬ সালের টার্গেট বেধে দিয়ে ডায়মন্ডহারবারের সাংসদ বলেন, “বিজেপি যে কীভাবে বাংলাকে কলুষিত করেছে। আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। ২০২১-এ ২১৪টা আসন পেয়েছিলাম, সেই লক্ষ্যে অবিচল থেকে আমাদের ২১৫-রও বেশি আসন নিয়ে চতুর্থবার যাতে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসে।”
এরপরই সিবিআইয়ের দিকে নিশানা দাগেন অভিষেক। বলেন, “সিবিআই ভয় পেয়েছে। আমার নাম নিয়েছে। কিন্তু ঠিকানা-পরিচয় কিছু দেয়নি । বিজেপি নেতারা যেমন ভাব বাচ্যে কথা বলেন, সিবিআই-ও ভাববাচ্যে কথা বলছে। আমার ভাল লেগেছে। খবরে যা বেরয়, একশোতে একশোটাই মিথ্যা খবর। ১২ লক্ষ মানুষকে বাড়ি দিয়েছে আমাদের সরকার, একটা খবর দেখেছেন? একদিনের জন্য সিবিআই দফতরে গিয়েছি, ১০ ঘণ্টা জেরা করেছে। তারপরের দিন আবার বাঁকুড়ায় গিয়ে জনজোয়ার শুরু করেছি। আপনি কী ভাবছেন, ধমকে চমকে দমিয়ে রাখবেন?”
দলীয় কর্মীদেরও ভোকাল টনিক দেন অভিষেক। বলেন, “নিজেদের কাছে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখলে হবে না। জননেত্রী মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়ের প্রকল্পগুলি মানুষের কাছে নিয়ে যেতে হবে। এটাই আমাদের লক্ষ্য থাকা উচিত। আমি দলের মুখপাত্র, আমি দলের সাংসদ, আমার কত ক্ষমতা, আমি টাউন চেয়ারম্যান, আমার কত ক্ষমতা দেখাতে গিয়ে আপনি দলকে ছোট করছেন। যারা এই কাজগুলি করেছেন, তাতে একটা ভাল হয়েছে, তাদের চিহ্নিত করা গিয়েছে।”
দলীয় কর্মীদের কাছে আর্জি জানিয়ে দলের সেকেন্ড ইন কম্য়ান্ড বলেন যে ৭০-৭৫টা আসন বিজেপি জিতেছিল, তার মধ্যে ১০টা তো চলে এসেছে। নির্বাচন যখনই হয়েছে, যারা বিজেপি থেকে তৃণমূলে এসেছেন, মানুষ দুই হাত তুলে আশীর্বাদ করেছে। আমি অনুরোধ করব, এক বছর সব ভেদাভেদ ভুলে মিলিতভাবে কাজ করুন। কোনো ভেদাভেদ নয় সবাই এক হয়ে লড়াই এর ময়দানে নামুন বিজেপির মত সাম্প্রদায়িক দলকে বাংলা ছাড়া করুন। দলের শৃঙ্খলা মেনে চলুন। যাঁরা বেঈমান তাদের আগেও চিহ্নিত করেছি আবার যারা দলের মধ্য থেকে এই কাজ করবেন তাদের ধরবো। এই মা মাটি মানুষের দলকে বুক দিয়ে আগলে রাখতে হবে সকলকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের এই দলকে সবাই মিলে রক্ষা করতে হবে।