দিল্লি ও মহারাষ্ট্র জয়ে ভোটার তালিকায় ব্যাপক কারচুপি করেছে বিজেপি। কিভাবে ও কাদের কাজে লাগিয়ে এই দুই রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছে বিজেপি তা ফাঁস করলেন তৃণমূল নেত্রী তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একইসঙ্গে দিল্লি মহারাষ্ট্রের পর এবার “টার্গেট বাংলা” বলেও জানালেন মমতা। বিজেপির এই চক্রান্ত রুখতে নির্দিষ্ট রোড ম্যাপ তৈরি করে ২৬ এর বিধানসভা নির্বাচনে টার্গেট বেঁধে দিলেন তৃণমূল নেত্রী। মমতার চ্যালেঞ্জ
“দিল্লি বা মহারাষ্ট্র যে কারচুপি ধরতে পারেনি বাংলা বিজেপির সেই কারচুপি ধরেছে। চ্যালেঞ্জ করে বলছি এবার বাংলা থেকে বিজেপিকে পগার পার করব। ২৬ এর বিধানসভায় দুই তৃতীয়াংশের বেশি আসন পাবে তৃণমূল।”
আজ কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূল কংগ্রেসের মেগা কর্মীসভায় মমতার অভিযোগ, ভোটে জেতার জন্য ভোটার তালিকায় নিজস্ব এজেন্সি ব্যবহার করে একই এপিক কার্ডে ভিন রাজ্যের ভোটারদের নাম ঢোকানো হয়েছে। মূলত হরিয়ানা গুজরাট রাজস্থান এবং পাঞ্জাবের একাংশের বহিরাগতদের নাম ভোটার তালিকায় ঢুকিয়ে বহিরাগতদের দিয়ে ভোট করাতে চায় বিজেপি। এজন্য তারা নির্বাচন কমিশনকে সঙ্গে নিয়ে ডেটা অপারেটরদের সরাসরি কাজে লাগাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন মমতা। নির্বাচন কমিশন যে পক্ষপাত দুষ্ট আচরণ করছে তা বোঝাতে তিনি সদ্য নিযুক্ত দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারের নিযুক্তি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। কেন্দ্রীয় সমবায় মন্ত্রক যার মন্ত্রী অমিত শাহ সেই দপ্তরের প্রধান সচিব জ্ঞানেশ কুমারকে নির্বাচন কমিশনের মাথায় বসানোর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। শুধু এপিক কার্ড নয় এমনকি আধার কার্ড নিয়েও কারচুপি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। যে দুর্নীতির দোসর হিসেবে কাজ করছে স্বয়ং নির্বাচন কমিশন বলে অভিযোগ মমতার। পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ ও দক্ষিণ দিনাজপুর এই দুই জেলার ভোটার তালিকা হাতে নিয়ে এ ধরনের বহু অভিযোগ সামনে আনেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। “বাংলার লোক যাতে ভোট দিতে না পারে তাই বহিরাগতদের এনে বাংলা দখলের চেষ্টা করছে বিজেপি। ” এই অভিযোগ তুলে মমতার সাফ কথা ” বাংলার মানুষ অতিথিপরায়ণ। বাইরের মানুষকে বাংলা সবসময় স্বাগত জানায়। কিন্তু বহিরাগতদের দিয়ে বাংলার কৃষ্টি সংস্কৃতি দখল করতে দেবে না বাংলা।”
বাংলার ভোট রাজনীতিতে বহিরাগত ঠেকাতে নেতা-কর্মীদের নির্দিষ্ট রোড ম্যাপ তৈরি করে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর নেতৃত্বে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সহ একাধিক মন্ত্রী- সাংসদ- বিধায়ক ও জেলা নেতৃত্বদের নিয়ে একটি রাজ্য স্তরের কোর কমিটিও গঠন করে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। সময়সীমা নির্দিষ্ট করে দিয়ে চারজন করে একেকটি দল তৈরি করে আজ থেকেই এই ভোটার তালিকায় কারচুপির বিরুদ্ধে রাজ্যজুড়ে অভিযানে নামার নির্দেশ দিয়েছেন দলনেত্রী। তিন দিনের মধ্যে কি কি কাজ হলো প্রতিটি জেলা কমিটি গুলোকে রাজ্য সভাপতির কাছে রিপোর্ট পাঠাতে হবে। মমতার কথায়, “বিজেপির নিযুক্ত এজেন্সি গুলো সরাসরি নির্বাচন কমিশনের ডেটা অপারেটরদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে কিন্তু ফিল্ড সার্ভে করেনি। নিজেদের মনগড়া ভুয়ো বহিরাগতদের নাম ভোটার তালিকায় ঢোকানো হয়েছে।” তাই বুথ স্তরের যারা নেতাকর্মী আছেন তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে রাজ্য ও জেলা স্তরের নেতাদের আরও বেশি করে মানুষের সঙ্গে জনসংযোগ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন দলনেত্রী। এদিনের কর্মী সমাবেশ থেকে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে একটি পাঁচ দফা গাইডলাইন বেঁধে দেন মমতা।
1) ব্লকে ব্লকে ভোটার তালিকা খতিয়ে দেখতে হবে
2) বুথ স্তরের কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে স্থানীয় মানুষজনের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে হবে
3) এলাকায় এলাকায় বহিরাগতদের আনাগোনা বাড়ছে কিনা নজরদারি বাড়াতে হবে।
4) বিজেপিকে পঙ্গার পাড় করতে হলে যেখানে যেখানে বিজেপির ভোট বেড়েছে সেখানে মানুষের সঙ্গে কথা বলতে হবে মানুষকে বিজেপির বিপদ বোঝাতে হবে
5) কর্মী সভায় দল যে বার্তা দিয়েছে তা খাতায়-কলমে লিখে নিয়ে সাধারণ মানুষকে গিয়ে বোঝাতে হবে।
নেতাকর্মীদের কি করতে হবে সেই গাইডলাইন তৈরি করে দিয়ে মমতার হুঁশিয়ারি— ” দেখি কার ক্ষমতা বেশি? এজেন্সি না মানুষের”। ২৬ এর বিধানসভা নির্বাচনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এর বক্তব্যকে সমর্থন করে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দেন ২১৫-র বেশি আসনে জিততে হবে তৃণমূলকে। ২৬ এর বিধানসভায় দুই তৃতীয়াংশের বেশি ভোটই লক্ষ্য তৃণমূলের। পাশাপাশি দলীয় সাংসদ বিধায়কদের উদ্দেশ্য করে মমতার সাবধান বাণী ” বিজেপিকে বিশ্বাস করি না। জোর করে এক দেশ এক ভোট চাপিয়ে দিয়ে বিধানসভা নির্বাচন করতে পারে বিজেপি। সে কথা মাথায় রেখেই সবাইকে কাজ করতে হবে।”
মমতার স্পষ্ট বক্তব্য, তৃণমূল পুকুরের জলে সাঁতার কাটতে জানে। বিজেপির মত ঘটি নিয়ে সাঁতার কাটে না। তবে সেজন্য ব্যক্তি নয় দলকেই বড় বলে মানতে হবে, বলেও জানান তৃণমূল নেত্রী। দলের বেশ কিছু নেতা দলের প্রতীক নয় নিজেকেই বড় বলে মনে করছেন। তাদের উদ্দেশ্যে মমতার সাবধানবাণী ” ফেসবুক থেকে টুইটার এবং সব নেতাকর্মীর কাজকর্ম আমার নজরে থাকে। মনে রাখতে হবে দলের প্রতীক সবচেয়ে বড়। যারা প্রতীকের থেকে নিজেকে বড় ভাবছেন তারা সাবধানে থাকুন।” অর্থাৎ সংগঠন থেকে মন্ত্রিসভায় রদবদল নিয়ে যে জল্পনা ইতিমধ্যেই তৃণমূলের অন্দরে তোলপাড় তুলেছে সেদিকেই ইঙ্গিত তৃণমূল নেত্রীর। “যারা দলের বদনাম করেন তাদের জন্য আমার কোন মায়া দয়া নেই। কিন্তু যারা ভালো কাজ করছেন তাদের পদোন্নতি করব” জানান তৃণমূল নেত্রী।
মমতার কথায় ” যে দলের কাছে কিছু চায় না কিন্তু ভোটের দিন বুথে বন্ধুকের সামনে দাঁড়িয়ে দলের এজেন্ট হয়ে কাজ করে আমি সেই কর্মীই চাই।”