নদী থেকে বালি তোলা একটা বড় শিল্প গোটা বীরভূম জেলা জুড়েই। এই শিল্প অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান উৎস এই জেলার। নদীর বালি তুলে সেই বালির কোনো রয়ালটি সরকারকে না দিয়ে প্রশাসনের চোখে ফাঁকি দিয়ে বিক্রি করে দেওয়া হয় জেলার বিভিন্ন জায়গায়। ময়ূরাক্ষী, অজয়, দ্বারকা আর হিংলো এইসব নানা নদীর তীর ধরে হাজার হাজার লরি নেমে পড়ছে বালি তুলে ব্যবসা করতে এই এলাকায়। যে ব্যবসা করে টাকা উপার্জন করে ভালো ভাবেই এই বালি মাফিয়ারা। মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মাঝে মাঝেই সরব হন এই সব নানা বেআইনি বালি খাদ নিয়ে। খোদ জেলাশাসক এই বালি খাদ বন্ধ করতে উদ্যোগী হন মাঝে মাঝেই। পুলিশ নিয়ে পৌঁছে যান তিনি নদীর ধারে। কিছু দিন প্রশাসনের চাপে নদী থেকে বালি তোলা বন্ধ হয় আবার কিছুদিন পর শুরু হয় এই এক কাজ যে কে সেই অবস্থা।
এই নদী গর্ভ থেকে বালি তোলা একটা বড় শিল্প যে। যার সাথে জড়িয়ে আছে বহু মানুষ। সেই শিল্প বন্ধ হলে কি করে চলবে। কিন্তু এত গেলো একটা বিষয়। এই নদী গর্ভ থেকে বালি তোলার কারণে জনস্বাস্থ্য কারিগরী দফতরের যে সব রিভার বেড জল তোলার স্কীম আছে নদীর ধারের গ্রামগুলোতে জল সরবরাহের জন্য সেই গোটা স্কীম গুলোই এখন মুখ থুবড়ে পড়তে বসেছে জেলার বিভিন্ন এলাকায়। মহম্মদ বাজার ব্লকের এই নদীর ধারে গড়ে ওঠা রায়পুর জোন ওয়ান আর জোন টু, মালাডাঙা জোন ওয়ান আর জোন টু, হাটগাছা স্কীম, বলিহারপুর স্কীম এর অবস্থাও তথৈবচ।
নানা জায়গার এই সব জলের প্রকল্প গুলো ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে নদী থেকে বালি তোলার জন্য। আর তার ফলে নদীর তীরের বিভিন্ন গ্রামে জল জীবন প্রকল্পের উদ্যোগে জল পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না ধীরে ধীরে। কারণ একটাই নদী থেকে বালি তোলার জন্য নদী গর্ভের জলস্তর দ্রুত নেমে যাচ্ছে। যে পাম্প দিয়ে নদী থেকে জল তুলে পাইপ লাইনের মাধ্যমে রিজার্ভার এর মধ্যে এই জল তোলা হয় সেখানে জল পোঁছে দেওয়া যাচ্ছে না কারণ নদীতে একটুও জল নেই। আর নদীর ধারের যে বাঁধ দিয়ে পাইপ যাচ্ছে সেই মাটি দ্রুতই ক্ষয়ে যাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে জলের পাইপ লাইন। আর লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে তৈরি হওয়া এই জলের স্কীম এর মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে জল পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
শুধু মহম্মদ বাজার ব্লক নয়, সিউড়ি সদর, সাঁইথিয়া, লাভপুর, সহ জেলার বিভিন্ন ব্লকে নদীর ধারে গড়ে ওঠা এই সব জন স্বাস্থ্য কারিগরী দফতরের রিভার সাইড জলের প্রকল্পের এক অবস্থা। বালি মাফিয়াদের দাপটে অপ্রতুল পানীয় জল বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে। বার বার এই বিষয়ে পি এইচ ই তরফে জেলাশাসককে জানানো হয়েছে। কিন্তু বালি মাফিয়াদের হাত এতটাই লম্বা যে সেখানে প্রশাসন এর তরফে কোনও কিছুই করা সম্ভব হয় নি। আর তাই গ্রামে গ্রামে পরিশ্রুত পানীয় জল পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না কিছুতেই। যার ফলে এখন পি এইচ ই দফতর এই রিভার সাইড প্রকল্পের সাথে সাথে গ্রাম ভিত্তিক হান্ড্রেড হাউস হোল্ড স্কীম এর দিকে বিশেষ নজর দিচ্ছে। কারণ একটাই নদীর জল না দিতে পারলেও যে কোনোও উপায়ে গ্রামের মানুষকে পানীয় জল পৌঁছে দিতে হবে। সেই লক্ষ্যে কাজ করছে কাজ করছে জন স্বাস্থ্য কারিগরী দফতর।