অভিজিৎ বসু।
ভুতুড়ে ভোটার নিয়ে হৈ চৈ হুল্লোড় পড়ে গেছে পাড়ায় পাড়ায়, চায়ের দোকানে, বাজারে, হাটে, মাঠে, ঘাটে সর্বত্রই। এমনকি বাড়ীর কাজের লোক এসে বলছে যে বৌদি শুনেছ তো ভোটার লিস্টি দেখে নিও কিন্তু যা সব ভূতের উপদ্রব বেড়েছে, দিনকাল কিন্তু একদম ভালো নয় গো। কি যে হয় চারিদিকে কে জানে। কার ঘাড়ে শাকচুন্নি বা মামদো ভূত ভর করে কে জানে সেটা।
এই তো বাপু পাঁচ বছরে একবার ভোটের বাবুদের আনাগোনা হাসিহাসি মুখ করে হাত জোড় করে বাড়ীর দরজায় ঠকঠক করে আওয়াজ করা। সাথে জোর যার মুল্লুক তার এর মত সেই রাজনীতির বাবুর নানা ছোটো বড়ো, মেজো, সেজো, সব স্যাঙাত ভীড় করে দাঁড়িয়ে থাকা বাড়ীর দরজায়। ঠিক যেনো নন্দী আর ভিঙ্গীর মতই হাসি হাসি মূখে। আর ভোটের দিন নিশ্চিন্তে, নিরাপদে ,ঘুমিয়ে কাটিয়ে ছুটি পালন করে ভোট উৎসবে মেতে ওঠা এই বাংলার ভোটারদের। সে লাল পার্টির আমল হোক বা হাতের আমল হোক কিংবা ঘাস ফুলের মা মাটি মানুষের দলের আমল হোক।
আর তারও আগে সেই রাজত্ব শেষ না হয়ে যাওয়া বামেদের ৩৪ বছরের সেই সায়েন্টিফিক রিগিং এর আমলে তো এমন ভুতুড়ে ভোটার নিয়ে হৈ চৈ হুল্লোড় ছিল না একদম গোটা রাজ্যে জুড়ে। তখনকার আমলে বর্তমানের মুখ্যমন্ত্রী বারবার চিৎকার করতেন তিনি রিগিং রিগিং করে। সেই কাগজের ব্যালট,সেই টিনের বাক্স ভরে ভোটের কাগজ উপচে পড়া ব্যালট বক্স থেকে। যার যে এলাকায় ক্ষমতা বেশি ভোটের বাক্স উপচে পড়বে তার দিকেই এটাই তো রাজনীতির চেনা ছবি। আর সেই ছবিতে ভর করেই প্রতি বছর জিতে যাওয়া হাসি মুখে ক্ষমতা দখল করে।
কিন্তু এই দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলা ডিজিট্যাল ইন্ডিয়ার যুগে বন্দে ভারতের যুগে ভুয়ো ভোটার এর কথা ছড়িয়ে পড়তেই দিকে দিকে কেমন একটা সন্দেহের বাতাবরণ সৃষ্টি হয়েছে। কে ভুতুড়ে আর কে ভুতুড়ে নয় সেই নিয়ে জোর কদমে আলোচনা। কে এই বাংলার আর কে এই বাংলার মুখ নয় সেটা নিয়ে আলোচনা চলছে সর্বত্র। কেউ হরিয়ানা, কেউ দিল্লী, কেউ ভিন রাজ্যের ভোটার হয়ে এখানে সেঁধিয়ে গেলো কি না তার জন্য কড়া নজরদারি করা। একদিকে তৃণমূলের জেলায় জেলায় ব্লকে ব্লকে ভুয়ো ভোটার ধরতে হবে এই দাবিতে ডেপুটেশন দেওয়া আন্দোলন করা। আর অন্য দিকে নির্বাচন কমিশনের গায়ে ভুয়ো ভোটার এর নাম করে কালি লেপন করা হচ্ছে বলে বিরোধী দলের ঝাঁপিয়ে পড়ে নির্বাচন কমিশনকে ক্লিনচিট দেওয়া।
বেশ ভালই ব্যাপার কিন্তু এটা।
ভোটের অধিকার রক্ষা করে যে সব নাগরিকদের গণতন্ত্রকে রক্ষা করে চলতে হয় খুব সতর্ক হয়ে বেঁচে থাকতে হয় এই রাজনীতির কুশীলবদের রক্ত চক্ষু সামলে। তাঁদের কাছে কেউ বলেন রিগিং বন্ধ করতে হবে, কেউ বলেন ভূতুড়ে ভোটার ধরতে হবে। আবার কেউ বলেন আমি জানি বলেই ওদের খেলা ধরে ফেলেছি আগেই। এইসব নানা কথা শুনতে হয় এই সাধারণ মানুষেদের। যাঁরা শুধু ওই একটি দিন ভোটের দিন আঙুলে কালির ছাপ দিয়ে বুঝিয়ে দেন তারা সব আমলেই এই ভাবেই হাসিমুখে গণতন্ত্রকে রক্ষা করেই বেঁচে আছেন।