বাংলাদেশে সেনাবাহিনী ও সরকারের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর নতুন করে প্রশ্ন তুলছে। বেশ কিছুদিন ধরে সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামান মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যক্রম নিয়ে অসন্তুষ্ট। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং দেশের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি।
বিশ্লেষকদের মতে, সেনাবাহিনীর বর্তমান ইউনূস সরকারের প্রতি আস্থা ক্রমশ কমছে। সেনাপ্রধানের অসন্তোষের অন্যতম কারণ হলো, শেখ হাসিনার সরকারের পতন ও ইউনূস সরকারকে ক্ষমতায় আনতে সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও বর্তমান প্রশাসনের নীতি-নির্ধারণে সেনাবাহিনীর প্রভাব সীমিত হয়ে পড়েছে।
সম্প্রতি, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর প্রধানের ঢাকা সফর এবং সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার বৈঠক নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। এই সফরে আইএসআই প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোহাম্মদ ফয়জুর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন, যিনি বর্তমানে সেনাবাহিনীর জ্যেষ্ঠতা তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, ওয়াকার উজ জামানকে দুর্বল করতে পাকিস্তান সক্রিয়ভাবে কাজ করছে এবং রেহমানকে সেনাপ্রধান করার পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে।
রাজনৈতিক মহলে আলোচনা চলছে, ইউনূস সরকার ও পাকিস্তান মিলে জামানকে সরিয়ে দিয়ে তাদের অনুগত কাউকে সেনাপ্রধান করার চেষ্টা চালাচ্ছে। বিশেষ করে লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোহাম্মদ ফয়জুর রহমানকে এই পদে বসানোর পরিকল্পনা চলছে বলে গুঞ্জন রয়েছে।
সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামান দেশের আগাম নির্বাচন চাইলেও, ইউনূস সরকার নির্বাচন স্থগিতের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। বিএনপিও ইউনূস সরকারের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। জামান মনে করেন, সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন জরুরি। তবে সরকারের অনীহার কারণে সেনাপ্রধানের অবস্থান আরও কঠোর হতে পারে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সেনাবাহিনী ও সরকারের মধ্যে এই মতপার্থক্য যদি আরও তীব্র হয়, তাহলে তা বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। সেনাবাহিনী ও সরকারের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাড়তে থাকলে, তা দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারে। আগামী কয়েকটি দিন বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেনাবাহিনী ও সরকারের সম্পর্ক কোন দিকে মোড় নেয়, তা নজরে রাখছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।