– অভিজিৎ বসু।
ডুব ডুব আর ডুব। শুধুই ডুব দিচ্ছি আমরা। ডুব দিয়ে পাপ ধুয়ে মুছে সাফ করে দেওয়া। আসমুদ্রহিমাচল জুড়ে হৈ চৈ হুল্লোড় করে ডুব দেওয়ার নিরন্তর চেষ্টা করা। ডুব দিতে গিয়ে কেউ কোটি কোটি টাকা খরচ করছেন। আবার কেউ মাথায় বোঁচকা নিয়ে পায়ে হেঁটে প্রয়াগরাজের পথে দৌড়ে পৌঁছে গেছেন। শুধুই একটু পূণ্যি লাভের আশায়। কেউ চাটার্ড প্লেনে তো কেউ পায়ে হেঁটে দৌড়ে পৌঁছে যাচ্ছেন ত্রিবেণী সঙ্গমে।
পাপস্খালনের জন্যে কী লম্বা লাইন। সত্যিই এত পাপ চারিদিকে দেশ জুড়ে। পাপের কলস ভর্তি হয়ে উপচে পড়ছে। আর সেই পাপ ধুয়ে মুছে সাফ করতে শাহী স্নান ১৪৪ বছর পর হচ্ছে দেশে। বেশ ভালই ব্যাপার কিন্তু। কলিযুগের এই পাপ আর পূণ্যর হিসেব নিকেশ করে রাজনীতির সওদাগরদের বেঁচে থাকা। কেউ বলছেন এই স্নানের জুড়ি নেই। আবার কেউ বলছেন কে বলেছে এই স্নান আসল স্নান ১৪৪ বছর পরে হয়। এসব কথা ঠিক নয় একদম। এই সব ওদের মনগড়া হিসেব নিকেশ করে রাজনীতির মাঠে নেমে পড়ে কথা বলে জিগির তুলে দেওয়া একটা।
যে জলের দূষণ এর মাত্রা নিয়ে বার বার কথা ওঠে। সেই জলে স্নান কতটা যুক্তিযুক্ত সেটা নিয়ে কারুর তেমন মাথা ব্যথা নেই একদম। প্রতি একশো মিলি লিটারে ফিকাল কলিফর্ম এর পরিমাণ যেখানে ২৫০০ এম পি এন থাকলে সেই জল স্নানের যোগ্য বলা হয় বিজ্ঞানের ভাষায়। কিন্তু কেন্দ্রীয় দূষণ পর্ষদের অনুসন্ধানে জানুয়ারী মাসে তৃতীয় সপ্তাহে ছিল ৪৯০০০ এম পি এন। যা সত্যি ভয়াবহ। চিন্তার ভাঁজ ফেলে দেয়। তাহলে এই অবস্থা এই শাহী স্নান এর শেষ পর্বে কত পরিমাণ ছিল সেটা ভেবে শিহরিত হতে হয় আমাদের। তাহলে যাঁরা এত পূণ্য পূণ্য করে চিৎকার করলেন। সেই সব আয়োজকরা তাঁরা সবাই কি বলবেন এই অবস্থা দেখে। নিশ্চয়ই মুখে কুলুপ এঁটেছেন তাঁরা সবাই।
হ্যাঁ এই ডুবে নিশ্চয়ই ধর্ম আছে তো বটেই। না হলে আর এত উৎসাহ কিসের। সেই ধর্মীয় বিশ্বাস আমার আপনার। কিন্তু এই ডুবে যে বাণিজ্য আছে অনেক। এই ধর্মকে সামনে রেখে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করা। কোটি কোটি টাকা লাভ করা।আর্থিক ভাবে উন্নয়ন করা। কোটি কোটি টাকার অর্থনীতি। যে অর্থকে ছোঁয়া যাবে না কিছুতেই। সেতো এক বিশেষ কিছু মানুষের জন্য রাজনীতির আর ব্যবসায়িকদের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ। ডুবে পাপ মোচন হয় হিন্দু ধর্মে এই বিশ্বাস আছে। সেই বিশ্বাসকে ভর করেই এগিয়ে চলা।
আর ডুবে আছে ভোটও। ডুবে আছে হিন্দুত্বের জিগির তোলা। যে জিগিরকে ভোটের বাক্সে টেনে নিয়ে যেতে হবে যে কোনো উপায়ে। আমি আপনি সরল বিশ্বাসে ডুব দিয়ে যাবো। ভোট ব্যাংক অ্যাকাউন্ট যাদের অক্ষত রাখতে হবে তাঁরা সেটাকে নির্ধারণ করে রাজনীতি করে যাবেন। আর ব্যবসা করে ফুলে ফেঁপে উঠবে এক শ্রেণীর বানিয়ার দল। তাতে আমার আর আপনার কী লাভ বলুন তো। আমাদের বিশ্বাসকে সম্বল করে ব্যবসা হবে, বাণিজ্য হবে, ভোটের বাক্সে ভোট উপচে পড়বে। আর নেতারা এই ডুবের ধর্মে ভোটের অঙ্ক কষে যাবেন একমনে। এটাই তো আমাদের শাহী স্নান। আর আমরা মনে মনে গাইবো ডুব দে মন কালী বলে।