যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃণমূলের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির বার্ষিক সমাবেশে যোগ দিতে গিয়েছিলেন রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু। বক্তৃতা শেষ করে যখন তিনি বেরিয়ে আসছিলেন, তখন তিনি এক অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির মুখে পড়েন। বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলির বিরোধিতায় আটকে পড়েন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তার গাড়ি আটকে দেয়া হয় এবং বিক্ষোভকারীরা শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ির চাকার হাওয়া খুলে দেয়। পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যখন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপেন থিয়েটারে সমাবেশ শেষ হওয়ার পর তৃণমূল ও বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের মধ্যে তুমুল বাকবিতণ্ডা ও মারামারি শুরু হয়।
ব্রাত্য বসু শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন এবং তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেন, তবে তার কথায় কোনও ফল হয়নি। ক্ষুব্ধ শিক্ষামন্ত্রী এক পর্যায়ে মন্তব্য করেন, “যারা এখানে বিক্ষোভ দেখায়, কয়েকদিন পর তাদের আর রাজ্যে খুঁজে পাওয়া যায় না। তারা তখন আমেরিকাতে চলে যায় বা বেঙ্গালুরুতে থাকে। এই ধরনের ব্যক্তিরা তৃণমূল বিরোধিতার নামে অক্সিজেন পেতে চান, কিন্তু তাদের মতবাদ দুনিয়া জুড়ে অবলুপ্ত হয়ে গেছে।”
ব্রাত্য বসু তার বক্তব্যে আরও জানান, তৃণমূলের বামপন্থা হলো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বামপন্থা, যা স্ট্যালিনপন্থী নয়। এই মন্তব্যের পর পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে ওঠে। তৃণমূল এবং বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের মধ্যে তুমুল বাকবিতণ্ডা এবং মারামারি শুরু হয়, যার ফলে শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ির পাশাপাশি তার সঙ্গে আসা দুটি পাইলট কারের কাচও ভাঙচুর করা হয়। ঘটনাস্থলটি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে এবং পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে যায়।
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি একটি শান্তিপূর্ণ আবেদন জানান, “কেউ প্ররোচনায় পা দেবেন না। যা ব্যবস্থা নেওয়ার তা উপাচার্য নেবেন।” তিনি আরো বলেন, “যারা এই ধরনের কাজ করল, তারা কি সব ছাত্র? ভাবতে লজ্জা হয়। যদি তারা বিজেপির কোনো রাজ্যে গিয়ে এমন কাজ করত, তবে তাদের কী ঘটত?” ব্রাত্য বসু স্পষ্টভাবে জানান, “এটি সঠিক কাজ নয়।”
এদিকে, শিক্ষামন্ত্রী পুলিশ ডাকার পক্ষেও নন। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চান না যে কোনও শিক্ষাঙ্গনে পুলিশ আসুক। তবে এটা ঠিক যে, রাজ্য সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আছেন, তারা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন।” শিক্ষামন্ত্রী অভিযোগ করেন, শিক্ষায় বৈরিীকরণের বিরুদ্ধে ওয়েবক কুপার সেমিনার চলাকালীন ছাত্র সংগঠনের নামে একদল হোলি গান গিরি ঘটিয়েছে, যা দুঃখজনক।
শিক্ষামন্ত্রী এও মনে করেন যে, এই ধরনের হুল্লোড় এবং সহিংসতা কোনও ভালো উদ্দেশ্য সাধন করতে পারে না। তিনি উল্লেখ করেন, “গত বছর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে প্রথম বর্ষের এক ছাত্রের ব্যালকনি থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছিল। ওই ছাত্রের সঙ্গে যারা এই ধরনের হুল্লোড় করেছিল, তারা কি তাকে ঠেলে ফেলে মারেনি তো?”
এদিকে, এই অস্থির পরিস্থিতির মধ্যে, ব্রাত্য বসু তার দলের সদস্যদেরও সতর্ক করেছেন এবং সাধারণ ছাত্রদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব আইন অনুযায়ী পরিস্থিতি মোকাবিলা করবে এবং পুলিশ আসবে না।” যদিও শিক্ষামন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে আক্রান্ত হয়েছেন এবং তার গাড়ির ক্ষতি হয়েছে, তবুও তিনি পুলিশকে অন্তর্ভুক্ত করার বিপক্ষে।
সমগ্র ঘটনা থেকে স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃণমূল ও বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলির মধ্যে রাজনৈতিক সংঘর্ষ এখনো তীব্র। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর অভিযোগ, এই ধরনের বিক্ষোভ এবং সহিংসতা শিক্ষাঙ্গনে গ্রহণযোগ্য নয় এবং এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের একটি চেষ্টা।