মালিকানা নিয়ে বিতর্কে সরগরম রাজনীতি
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই নতুন বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর ব্যবহৃত গাড়ি নিয়ে। বাম ছাত্র সংগঠন এসএফআই অভিযোগ তুলেছে, শিক্ষামন্ত্রী যে গাড়িতে যাদবপুর গিয়েছিলেন, সেটির দূষণ নিয়ন্ত্রণ নথিপত্র মেয়াদোত্তীর্ণ। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, নির্দিষ্ট সময় অন্তর দূষণ সংক্রান্ত শংসাপত্র নবীকরণ করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু পোর্টালে গাড়ির তথ্য খুঁজতে গিয়ে দেখা গেছে, নির্ধারিত মেয়াদ পেরিয়ে গেলেও সংশ্লিষ্ট নথি আপডেট করা হয়নি। ফলে নিয়ম লঙ্ঘন করেই সেটি চলাচল করেছে বলে দাবি তুলছে এসএফআই।
এখানেই শেষ নয়, বিতর্কের আরেকটি দিক গাড়ির প্রকৃত মালিকানা। সরকারি তথ্যভান্ডারে গাড়ির মালিকের নাম আংশিকভাবে গোপন রাখা হয়েছে, যা নিয়ে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা। এসএফআইয়ের অনুমান, ওই গাড়ির মালিক তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ হতে পারেন। সংগঠনটির তরফে দাবি করা হয়েছে, প্রকাশ্যে আসা নামের অংশ বিশেষ কুণাল ঘোষের নামের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। যদিও এর কোনো নিশ্চিত প্রমাণ তাদের হাতে নেই।
এই অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় কুণাল ঘোষ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘‘এই গাড়ির সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই। আমার নামে কোনও গাড়ি সরকারি কাজে ভাড়ায় খাটে না। শুধুমাত্র কিছু অংশ মিলে গেলেই সেটা আমার বলে চালিয়ে দেওয়া সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আসলে যাদবপুরের ঘটনায় এসএফআই নিজেদের ভূমিকা আড়াল করতে চায় বলেই এমন কৌশল নিচ্ছে।’’
এসএফআই পাল্টা অভিযোগ তুলেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষামন্ত্রীর উপস্থিতিই অশান্তির সূত্রপাত করেছে। রবিবার সাংবাদিক বৈঠকে সংগঠনের নেতারা দাবি করেন, শিক্ষামন্ত্রী ছাত্রদের আন্দোলনকে দমন করতে গিয়ে সংঘাত বাড়িয়েছেন। এমনকি এক প্রতিবাদী ছাত্রকে গাড়ি দিয়ে ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগও উঠেছে। পাশাপাশি, বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃণমূলপন্থী কর্মী সংগঠনের অফিসে আগুন লাগানোর ঘটনাও এই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। যদিও এসএফআই বলছে, তারা এতে জড়িত নয় এবং নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করা হোক।
এ ঘটনায় পুলিশের তরফে পাঁচটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে এবং এক ছাত্রকে আটক করা হয়েছে। তবে এসএফআই নেতারা বলছেন, ‘‘আইনি ভয় দেখিয়ে ছাত্র আন্দোলন দমানো যাবে না। যাদবপুরে বহিরাগতদের এনে শিক্ষামন্ত্রী সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি করেছিলেন, কিন্তু ছাত্রছাত্রীরা সেটি রুখে দিয়েছে।’’
এরই মধ্যে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ভাস্কর গুপ্তের হেনস্তার অভিযোগ নিয়ে নতুন বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এসএফআই-এর দাবি, উপাচার্য রাজনৈতিক চাপের কারণে কিছু নির্দিষ্ট মন্তব্য করছেন। সংগঠনের তরফে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলা হয়েছে, ‘‘সত্য জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করা হোক, তাহলেই আসল ঘটনা স্পষ্ট হবে।’’
এই ঘটনা ঘিরে রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। প্রশাসন কী পদক্ষেপ নেয় এবং তদন্তের পর সত্যিই কার গাফিলতি সামনে আসে, এখন সেটাই দেখার।
Leave a comment
Leave a comment