একটা ক্ষোভের আগুন ধিকিধিকি জ্বলছিলই। ক্ষমতায় আসার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইউক্রেনকে বাদ দিয়েই রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ থামানোর চেষ্টা রাশিয়া ছাড়া ইউরোপের কেউই ভালভাবে নেয় নি। এরপর ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রসিডেন্ট জেলেনস্কির নজিরবিহীন বাগ্বিতণ্ডার পর এবার ইউক্রেনে শান্তি ফেরানোর লক্ষ্যে হল ইউরোপ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মধ্যে হোয়াইট হাউসে তীব্র বাদানুবাদের দু- দিন পরই আয়োজিত হল শীর্ষবৈঠক।এই বৈঠকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি-সহ ১৮ জন শীর্ষনেতা যোগ দিয়েছিলেন। শীর্ষবৈঠকে যোগ দিয়েছিল ফ্রান্স, পোল্যান্ড, সুইডেন, তুরস্ক, নরওয়ে, চেক প্রজাতন্ত্র, ডেনমার্ক, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, রোমানিয়া, ফিনল্যান্ড, ইটালি, স্পেন এবং কানাডা। ‘সিকিউর আওয়ার ফিউচার’ শীর্ষক এই সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতা করতে একমত হয়েছেন ইউরোপের নেতারা। তবে এই সমঝোতার ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সঙ্গে নিয়েই চলতে চান তাঁরা। এ লক্ষ্যে চার দফা পরিকল্পনা প্রকাশ করা হয়েছে। এই চার দফা কর্মসূচি হলো –
১। ইউক্রেনকে সামরিক সাহায্য দেয়া হবে এবং রাশিয়ার উপর আর্থিক চাপ বহাল রাখা হবে।
২। ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা বজায় রেখে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি আনতে হবে এবং শান্তি আলোচনায় ইউক্রেনের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক।
৩। ভবিষ্যতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ ঠেকানোর লক্ষ্যে কাজ করবে ইউরোপ। ভবিষ্যৎ আগ্রাসন বন্ধ করতে এটা জরুরি।
৪। ‘কোয়ালিশন অফ দ্য উইলিং’ গঠন করা হবে যার লক্ষ্য ইউক্রেনের নিরাপত্তায় জোট গঠন ও দেশটিতে শান্তি নিশ্চিত করা।
কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ইউরোপের এত চিন্তা কেন? এই শঙ্কা প্রসঙ্গে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জানান যে এখন আমরা ইতিহাসের এক সন্ধিক্ষণে দাড়িয়ে রয়েছি। এটা কথা বলার কোনো সময় নয়। ইতিহাস আমাদের শিক্ষা দিয়েছে, ইউরোপের কোথাও যদি সংঘাত চলতে থাকে, তা একদিন সবার দড়জায় ধাক্কা দেবে। ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে সম্মেলনে যে পরিকল্পনা নেওয়া হল, তাতে বৈঠকে থাকা অনেক দেশ যুক্ত হতে চায় বলে জানান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। স্টারমার আরও জানিয়েছেন, ” ইউনাইটেড কিংডম ইউক্রেনকে ২০০ কোটি ডলার দেবে।এই দিয়ে তারা পাঁচ হাজার এয়ার ডিফেন্স মিসাইল কিনতে পারবে। এছাড়াও রাশিয়ার ফ্রিজ করা সম্পদের লভ্যাংশ থেকে ২২০ কোটি ইউরো ইউক্রেনকে ঋণ হিসাবে দেয়া হবে।”
এই বৈঠকে শুধুমাত্র ইউক্রেন সমস্যার সমাধানের দিকটাই ভাবা হয় নি। ভাবা হয়েছে ইউরোপের নিরাপত্তার কথাও। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লিয়েন বলেছেন, ”ইউরোপকে সামরিক দিক দিয়ে আরও সজ্জিত হতে হবে।” পাশাপাশি ন্যাটোর সেক্রেটারি জেনারেল মার্ক রুটে বলেছেন, ”যতদিন সম্ভব ইউক্রেন যাতে লড়তে পারে, সে জন্য এই বৈঠক ডাকা হয়েছিল।” বৈঠকের পর জেলেনস্কি রাজা চার্লসের সঙ্গে দেখা করতে যান।তারপর তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ”লন্ডনের শীর্ষবৈঠক থেকে তার মনে হয়েছে, ইউরোপ এক হয়ে ইউক্রেনের পাশে আছে।”
শুক্রবার হোয়াইট হাউসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের প্রবল তর্কবিতর্কের পরেই জেলেনস্কির পাশে দাড়ান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্টারমার। রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউক্রেনের আরও ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাওয়া ঠেকাতে পাশে দাঁড়ায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। পরবর্তী দিনে আমেরিকা যদি ইউরোপের সঙ্গ না দেয় তাহলে বিপদ একদম দোরগোড়ায়। অনেক আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক মনে করছেন ইউরোপ যদি এবার জেগে না ওঠে, তাহলে আর কখনোই জাগবে না।
তবে সম্মেলনে নজর রেখেছে রাশিয়া।রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ সম্মেলনের আগেই অভিযোগ করেন, ৫০০ বছর ধরে বিশ্বে ঘটে যাওয়া দুঃখজনক ঘটনা হয় ইউরোপ থেকে শুরু হয়েছে নয় ইউরোপীয় নীতির কারণে ঘটেছে।