জলবণ্টন ইস্যুতে ভারত-বাংলাদেশের উচ্চপর্যায়ের বৈঠক, সম্পর্কের উত্তাপ কমানোর চেষ্টা
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে গঙ্গা-পদ্মা নদীর জলবণ্টন চুক্তি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা চলছে। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ থেকে ১১ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল পাঁচ দিনের সফরে পশ্চিমবঙ্গে এসেছে। ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) আওতায় হওয়া এই সফরের মূল উদ্দেশ্য হলো জলবণ্টন চুক্তির বাস্তবায়ন খতিয়ে দেখা এবং ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণ করা। সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রকের প্রতিনিধিরাও এই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন।
সফরের অংশ হিসেবে প্রতিনিধি দলটি ফরাক্কা ব্যারাজ পরিদর্শন করবে। গঙ্গা থেকে পদ্মায় প্রবাহিত জলপ্রবাহের বর্তমান অবস্থা সরেজমিনে পরীক্ষা করে দেখবেন দুই দেশের বিশেষজ্ঞরা। ফরাক্কা ব্যারাজ ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে জলবণ্টনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রস্থল। তাই শুষ্ক মৌসুমে কীভাবে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে, তা বিশেষভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে।
এই আলোচনার মূল পর্ব অনুষ্ঠিত হবে ৭ মার্চ কলকাতায়। দুই দেশের প্রতিনিধিরা সেখানে জলবণ্টন ইস্যুতে বিস্তারিত আলোচনা করবেন। গঙ্গার জলবণ্টনের পাশাপাশি তিস্তা নদীসহ অন্যান্য আন্তঃসীমান্ত নদীগুলোর বিষয়ে মতবিনিময় হতে পারে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে তিস্তা চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চালিয়ে আসছে, কারণ এটি তাদের কৃষি ও অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৯৬ সালে স্বাক্ষরিত গঙ্গা-পদ্মা জলবণ্টন চুক্তির মেয়াদ ২০২৬ সালে শেষ হবে, ফলে নতুন করে পর্যালোচনা ও পরিবর্তনের সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের তরফে অভিযোগ রয়েছে যে, শুষ্ক মৌসুমে ফরাক্কা ব্যারাজ থেকে যথেষ্ট পরিমাণ পানি তারা পাচ্ছে না, যার ফলে কৃষিকাজ ও পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। অন্যদিকে, ভারতের দাবি, জলপ্রবাহের স্বাভাবিক ওঠানামার কারণে কিছু সময় পানির পরিমাণ কমে যায়। এই সফর ও বৈঠক সেই বিষয়গুলোর সমাধান খুঁজতে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল।
সম্প্রতি, রাজনৈতিক টানাপোড়েনের কারণে ভারত-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কে কিছুটা অবনতি হয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক দূরত্ব বাড়লেও, এই বৈঠকের মাধ্যমে সেই ব্যবধান কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে। জলবণ্টন ইস্যু নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি, পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সম্পর্ক পুনর্গঠনের দিকেও নজর দেবে দুই দেশ। বিশেষজ্ঞদের মতে, ফরাক্কা পরিদর্শন ও ৭ মার্চের বৈঠক জলবণ্টন নীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে, যা ভবিষ্যতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককেও প্রভাবিত করতে পারে।
Leave a comment
Leave a comment