শতাব্দী প্রাচীন এক রহস্যের পর্দা অবশেষে সরিয়ে দিলেন বিজ্ঞানীরা। লিয়োনার্দো দা ভিঞ্চির শিল্পকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এক অজানা সুড়ঙ্গের অস্তিত্বের প্রমাণ মিলেছে। ইতালির মিলানের ঐতিহাসিক স্ফোরজ়া দুর্গের নিচে মিলেছে এই রহস্যময় পথ।
দীর্ঘদিন ধরেই ইতিহাসবিদ এবং গবেষকদের মনে সন্দেহ ছিল যে, দা ভিঞ্চির চিত্রকলার মধ্যে কোথাও লুকিয়ে রয়েছে এমন এক গোপন পথের ইঙ্গিত। বিশেষ করে ১৪৯৫ সালের কাছাকাছি সময়কালে তাঁর শিল্পকর্ম ঘিরে বহু জল্পনা তৈরি হয়। আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে দীর্ঘ গবেষণার পর, বিজ্ঞানীরা সেই অনুমানের সত্যতা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন।
২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে দুর্গের নিচের কাঠামো নিয়ে বিশদ গবেষণা করা হয়। এই গবেষণার প্রধান উপকরণ ছিল গ্রাউন্ড পেনিট্রেটিং রেডার এবং লেজার স্ক্যানিং প্রযুক্তি। পরপর স্ক্যান চালিয়ে এবং প্রতিটি স্তরের ডিজিটাল বিশ্লেষণ করে অবশেষে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, দুর্গের নিচে একটি লুকানো সুড়ঙ্গ বিদ্যমান।
মিলানের অন্যতম প্রতিরক্ষা দুর্গ হিসেবে পরিচিত এই স্থাপনার নির্মাণ শুরু হয়েছিল ত্রয়োদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে। পরে, পঞ্চদশ শতাব্দীতে দা ভিঞ্চি এই দুর্গের ভেতরের অলঙ্করণ এবং স্থাপত্য উন্নয়নের দায়িত্ব পান। মনে করা হয়, শুধুমাত্র সৌন্দর্য বৃদ্ধির কাজ নয়, দুর্গের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করতেও তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
মিলান পলিটেকনিক ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিশেষজ্ঞ ফ্রাঞ্চেসকা বায়োলো জানিয়েছেন, “দা ভিঞ্চি শুধু একজন চিত্রশিল্পী ছিলেন না, বরং তিনি সেনা কৌশল ও দুর্গের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়েও দারুণ অভিজ্ঞ ছিলেন। তাঁর কাজের মধ্যে সেই দক্ষতার ছাপ স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে।”
এই গোপন সুড়ঙ্গের আবিষ্কার শুধু দা ভিঞ্চির সৃজনশীলতা ও বুদ্ধিমত্তার নতুন দিক উন্মোচন করেনি, বরং ইতিহাস গবেষণার জন্যও এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। এখন বিজ্ঞানীরা এই সুড়ঙ্গের প্রকৃত উদ্দেশ্য ও ব্যবহার কী ছিল, তা খতিয়ে দেখছেন। এটি কি শুধুই একটি গোপন পালানোর পথ ছিল, নাকি প্রতিরক্ষা কৌশলের অংশ? এর প্রকৃত রহস্য উন্মোচনের অপেক্ষায় রয়েছেন গবেষকরা।
Leave a comment
Leave a comment