গাজা মানেই যেন গোটা পৃথিবীর এক ক্ষতস্থান। হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু, রক্ত, ঘাম, ঘৃণা, আবেগ, ভালবাসা বুকে নিয়ে দাড়িয়ে থাকা ধ্বংসস্তূপে একখণ্ড জমি। এতদিন বেশ চলছিল। ধ্বংস হতে হতে শেষই যাচ্ছিল গাজা। কিন্তু সেখানে চোখ গেল সদ্য ক্ষমাতায় আসা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। প্রায় ধ্বংসের কাজেই নিযুক্ত ইজরায়েলের পরম মিত্র দেশ। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া গাজাকে পুনর্গঠনের পরিকল্পনার কথা জানান ডোনাল্ড ট্রাম্প। কেমন হবে সেই নতুন গাজা তা নিয়ে একটা এআই ভিডিও তাঁর নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দেন।
এবার গাজা উপত্যকাকে নতুন করে তৈরি করতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া প্রস্তাবের বিকল্প প্রস্তাব গ্রহণ করেছে আরব দেশগুলো। মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি জানিয়েছেন যে কায়রোতে অনুষ্ঠিত জরুরি আরব সম্মেলনে মিসরের দেওয়া এ পরিকল্পনা সর্বসম্মতভাবে গৃহীতও হয়েছে।
আরব দেশগুলোর পরিকল্পনা অনুযায়ী গাজা তৈরি করতে লাগবে প্রায় ৫ হাজার ৩০০ কোটি ডলার। তবে ট্রাম্প যেমন সেখানকার বাসিন্দাদের মিসর ও জর্ডানে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা বলেছিলেন এই পরিকল্পনায় তা করা হবে না। মিসরের প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন গাজায় প্রশাসন পরিচালনা করবে—স্বতন্ত্র, পেশাদার টেকনোক্র্যাটদের সমন্বয়ে একটি কমিটি।
গাজা নিয়ে মিসরের পরিকল্পনা আরব দেশগুলো পুরোপুরি সমর্থন দিয়েছে বলে জানিয়েছেন আরব লিগের মহাসচিব আহমেদ আবুল গেইত।বাসিন্দাদের বাস্তুচ্যুত না করেই গাজাকে এই নতুন করে তৈরির পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছেন প্যালেস্তাইনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস।এমন এক মানবিক পরিকল্পনায় সমর্থন জানাতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছে প্যালেস্তাইনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসও। জানা যাচ্ছে প্যালেস্তাইনের জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে তোলার পদক্ষেপকে সমর্থন করার পাশাপাশি দ্রুত প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি। আর এমনটা হলে গাজার শাসনভার ছেড়ে দেওয়ার ইঙ্গিতও দিয়েছে হামাস।
এর আগে ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে গাজা নিয়ে পরিকল্পনার কথা বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি ঘোষণা করেন, আমেরিকা গাজা ‘দখল’ করবে এবং এটি পুনর্গঠন করে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেবে।তিনি বলেন, ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া এই উপত্যকা পুনর্নির্মাণ করে ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটানো হবে, যা বিপুলসংখ্যক কর্মসংস্থান ও আবাসন সৃষ্টি করবে।
গাজাবাসীদের স্থানান্তর ও প্যালেস্তেনীয় উপত্যকাটির অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিয়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনা ‘জাতিগত নিধন’র সামিল বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব বলেছেন, গাজার জনসংখ্যা স্থানান্তর এবং উপত্যকার উন্নয়নে ট্রাম্পের পরিকল্পনা ‘জাতিগত নিধন’র সামিল হবে।
তবে মিসর ও জর্ডান দাবি করেছে যে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকা দখলের পরিকল্পনা থেকে সরে আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।তাদের দাবি অনুযায়ী, তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অবরুদ্ধ ও যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকা থেকে প্যালেস্তেনীয়দের জোর করে উচ্ছেদের পরিকল্পনা থেকে বিরত রাখতে সফল হয়েছে। রাষ্ট্রসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বিশ্বব্যাংকের যৌথ মূল্যায়নে বলা হয়েছে, গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরের পুনর্গঠনে পাঁচ হাজার কোটি ডলার লাগবে। প্রথম তিন বছরে লাগবে কমপক্ষে দু হাজার কোটি ডলার।
Leave a comment
Leave a comment