যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার পুনর্গঠনে আরব নেতারা যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তা প্রত্যাখ্যানই করল আমেরিকা ও ইজরায়েল। যুদ্ধপরবর্তী গাজা পুনর্গঠনের জন্য ট্রাম্পের দেওয়া প্রস্তাবের বিকল্প প্রস্তাব গ্রহণ করতে মঙ্গলবার মিসরের রাজধানী কায়রোতে জরুরি বৈঠকে বসেছিলেন আরব বিশ্বের নেতারা। এতে মিসরের দেওয়া প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে মেনেও নেওয়া হয়। মিসরের দেওয়া ওই প্রস্তাবে পুনর্গঠনের জন্য গাজার প্রায় ২০ লক্ষ বাসিন্দাকে নিজেদের ভিটে মাটি ছেড়ে অন্য দেশে যাওয়ার ছাড়ার দরকার নেই। পাশাপাশি এই প্রস্থাবে বলা হয় এই পুনর্গঠনের সময়কালে গাজার শাসনভার অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে হস্তান্তর করবে হামাস।
কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র ব্রায়ান হিউস এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন যে আরব নেতাদের বর্তমান প্রস্তাবে গাজার বাস্তবতাকেই আমলে নেওয়া হয়নি। বর্তমানে গাজা বসবাসেরই অনুপযোগী। ব্রায়ান হিউসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে হামাসমুক্ত গাজাকে পুনর্গঠনের ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর নিজস্ব পরিকল্পনাতেই অটল রয়েছেন। ইজরায়েল আর আমেরিকার প্রস্তাবে গাজাবাসীরা জায়গা খালি করে চলে যাবে জর্ডন ও মিসরে। ফাঁকা জমিতে গাজাকে মধ্যপ্রাচ্যের চোখজোড়ানো পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত করা হবে যার নিয়ন্ত্রণ রাখা থাকবে সুদূর ওয়াশিংটনের হাতে।
আরব দেশগুলোর পরিকল্পনা অনুযায়ী গাজা তৈরি করতে লাগবে প্রায় ৫ হাজার ৩০০ কোটি ডলার। তবে ট্রাম্প যেমন সেখানকার বাসিন্দাদের মিসর ও জর্ডানে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা বলেছিলেন এই পরিকল্পনায় তা করা হবে না। মিসরের প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন গাজায় প্রশাসন পরিচালনা করবে—স্বতন্ত্র, পেশাদার টেকনোক্র্যাটদের সমন্বয়ে একটি কমিটি।
কিন্তু পুনর্গঠনে আর এক সমস্যা হল কাদের দখলে থাকবে এই জমি, এবং এই সমস্যা আজকেরও নয়।প্যালেস্তাইন ও আরব নেতাদের একাংশের দীর্ঘদিনের দাবি জেরুজালেমকে রাজধানী করে গাজা ও পশ্চিম তীর ( ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক) নিয়ে প্যালেস্তাইন রাষ্ট্র গঠন করতে হবে। কিন্তু ইতিহাসের গতিপথ যা বলে তা হল ইসরায়েল সরকার স্বাধীন প্যালেস্তাইন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিপক্ষে। ইসরায়েল নানা সময়ে বলেছে, গাজা ও পশ্চিম তীরের শাসনভার বা দখল তাদের হাতেই থাকবে। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের সময় এই দুটি অঞ্চলকেই ইজরায়েল দখল করে নিয়েছিল।
কাজেই আরব দেশগুলো যেভাবে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার পুনর্গঠনের কথা ভাবছে আমেরিকা-ইজরায়েল তা ভাবছে না।অথচ প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি বলেন, প্যালেস্তাইন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে সত্যিকারের শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।
এদিকে গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্তপূরণ নিয়ে দরকষাকষি থামছে না। গাজায় আটকে রাখা সব বন্দিদের শিগগির মুক্তি দিতে সশস্ত্র সংগঠন হামাসকে ‘চূড়ান্ত হুঁশিয়ারি’ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বলেছেন, তার কথা মতো কাজ না করলে একজন হামাস সদস্যকেও নিরাপদে থাকতে দেবেন না। ট্রাম্প তার নিজস্ব ট্রুথ সোশালে পোস্ট করে জানান, তিনি ‘হামাসকে নির্মূল করার কাজ শেষ করার জন্য যা যা প্রয়োজন, তার সবই ইসরায়েলকে দেবেন।
অন্যদিকে হামাসের দাবি তারা যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপের সব শর্ত পূরণ করেছে, কিন্তু ইসরায়েলি সরকার ‘দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে দরকষাকষি এড়িয়ে যাচ্ছে। হামাসের মুখপাত্র হাজেম কাসেম জানিয়েছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচিত চুক্তি অনুযায়ী ইসরায়েলকে দ্বিতীয় ধাপ বাস্তবায়ন করার জন্য চাপ দেওয়া।
Leave a comment
Leave a comment