উত্তাল বাংলাদেশে রাজনীতি থেকে এই মুহূর্তে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে আওয়ামী লীগ। ছাত্র-জনতার জুলাই আন্দোলনের জেরে দেশ ছেড়েছেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। দলটির সরকারের পতনের সাত মাস হতে চললেও এই কমাসে দলটির দেশের ভেতরে কোনও স্পষ্ট অবস্থান তৈরি করতে বা দেখাতে পারেনি। তাই এই মুহূর্তে সেই দলের ফেরত আসা বেশ কঠিন বলে মনে করা হচ্ছে। শেখ হাসিনা দেশ ছড়তেই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বসানো হয়েছে বাংলাদেশের নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মহম্মদ ইউনুসকে।অনেক সময় পেরিয়ে গেলেও এখনও ঘোষণা হয় নি নির্বাচনের।তাই দ্রুত ভোট চাইছে সেদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। কিন্তু প্রশ্ন হল, এই ভোটযুদ্ধে কি নামতে পারবে আওয়ামী লীগ? ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন, “তারা (আওয়ামী লীগ) (নির্বাচনে অংশগ্রহণ) করতে চায় কি না, সেই সিদ্ধান্ত তাদেরই নিতে হবে। আমি সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারি না।” পাশাপাশি তিনি আরও জানিয়েছেন যে, এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন। তাঁর কথায়, “নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেয় কে নির্বাচনে অংশ নেবে।”
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নামে নতুন রাজনৈতিক দল সদ্য সে দেশের রাজনীতিতে পা রেখেছে। কয়েকদিন আগেই দলের উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমকে বলতে শোনা গেছে, “যতদিন না আমরা খুনি হাসিনাকে ওই ফাঁসির মঞ্চে না দেখছি, এই বাংলাদেশে কেউ যেন ভুল করেও ওই নির্বাচনের কথা না বলে।” তাঁর এই মন্তব্যের পর নানা বিতর্ক হয়। এর আগেও এই ছাত্রনেতারা বলেছিলেন, কোনওভাবেই আওয়ামি লিগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেবেন না। এছাড়া কয়েকদিন আগে ইউনুসেরই এক উপদেষ্টা জানিয়েছিলেন, আওয়ামিকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে সরকার। দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। অর্থাৎ আওয়ামী লীগ দেশের রাজনীতিতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেও সেই দল এখনও নিষিদ্ধ হয় নি।তবে এই দলকে নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে। অনেকের মতে দেশটির রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া আওয়ামী লীগের ফেরত আসা বেশ কঠিন কারণ তাদের জন্য বড় বাধা নৈতিকতার প্রশ্ন।
আবার কারও কারও মতে কিছুদিন আগেও দেশের জনগণের একটা অংশের সমর্থন ছিল আওয়ামী লীগের প্রতি। ভোট সিস্টেমে তারাই ছিল নিরঙ্কুশ সমর্থন নিয়ে আসা শাসক দল। গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হলেও সেই সমর্থন একেবারে শেষ হয়ে যাওয়ার কথা নয়। মাঝে ফেসবুক লাইভে এসে শেখ হাসিনা ফের ফেরার বার্তাও দিয়েছেন।তাই অনেকের শঙ্কা, এক ধরনের ভয় কাজ করায় হয়ত আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক বক্তব্য বাড়ছে।
কাজেই এখন যদি আওয়ামী লীগ সত্যিই নির্বাচনে লড়ার সুযোগ পায়,তবে কী ভাবে ঘুরে দাঁড়াবে তারা?কারণ মুজিবুর রহমান, শেখ হাসিনা,আওয়ামী লীগ নামেই একটা ঘৃণার বাতাবরণ তৈরি হয়েছে বাংলাদেশ জুড়ে। টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের পরেও কোথায় যেন আওয়ামী লীগ রাজনীতি ও জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন। অনেক বিশ্লেষকের মতে ক্ষমতার স্বাদ নিতে সুবিধাবাদীদের ভিড় জমেছিল হাসিনার দলে। কেউ বলছেন আওয়ামী লীগ তাদের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে মানুষের ক্ষোভ বা মনোভাবকে পাত্তাই দেয়নি। তাই আজ এই দিন দেখতে হচ্ছে দলের নেতা ও কর্মীদের।এই তলানিতে চলে যাওয়া গুটিকয় মানুষের সমর্থন নিয়ে আর যাই হোক এই রকম আন্দোলন পরবর্তী ভোটবাজারে মনে হয়না খুব একটা কাজ হবে।
Leave a comment
Leave a comment