বুদ্ধদেব পাত্র,পুরুলিয়া
গাছ থেকে সংগ্রহ করে নয়, মাটিতে পড়ে থাকা পলাশ ফুল থেকে তৈরি করা হচ্ছে ভেষজ আবির।
পলাশ, সিঁদুরি বিজ,পালং শাক, নিম পাতা ,শিম পাতা,পেঁপে পাতা এবং কাঁচা হলুদ দিয়ে ভেষজ আবির তৈরি করছে জঙ্গলমহলের অযোধ্যা পাহাড় কোলের প্রত্যন্ত এলাকার একটি মডেল স্কুলের ছাত্র ছাত্রীরা। নাম না জানা ফুল পাতা দিয়ে তৈরি হচ্ছে হারিয়ে যাওয়া গ্রিটিংস কার্ড। সহায়তায় পুরুলিয়ার সিধ কানহো বিরশা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগ। দোলে এই ভেষজ আবির দিয়েই রঙ খেলায় মাতবে পড়ুয়ারা।
জেলার আনাচে কানাচে পলাশ গাছ। বসন্তে পলাশের সাজে অপরূপ হয়ে ওঠে রাঙামাটির এই জেলা। অযোধ্যা পাহাড় কোলের আড়ষা ব্লকের কাঁটাডি এলাকার চার পাশে পলাশ গাছে ঘেরা টিলা ডুঙরির মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে ২০১৭ সালে তৈরি হয়েছে নিউ ইন্টিগ্রেটেড গভর্নমেন্ট স্কুল। আসে পাশের প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলেমেয়েরাই এই মডেল স্কুলের পড়ুয়া।অনেকেই আছে যারা প্রথম প্রজন্ম স্কুলে আসছে। সেই সব ছেলে মেয়েরাই স্কুলের আসে পাশে পড়ে থাকা পলাশ ফুল সংগ্রহ করে গত বছর থেকে তৈরি করছে ভেষজ আবির। স্কুলের পড়ুয়াদের এই অভিনব কাজে প্রযুক্তিগত সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সিধো কানহো বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সুব্রত রাহা। তবে তারও আগে স্কুলের মধ্যে এই ভেষজ রঙ তৈরি করার পরিকল্পনা নিয়ে জেলা প্রশাসন এবং সিধো কানহো বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের সাথে আলোচনা করে বিষয়টি চূড়ান্ত করেন স্কুলের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা রীনা মুখার্জি। রীনা মুখার্জী জানান। বিদ্যালয় আসার পথে দেখতাম প্রচুর পলাশ ফুল পড়ে রয়েছে।সেটা দেখেই প্রথম ভেষজ রঙ তৈরি করার বিষয়টি মাথায় আসে। মূলত কেমিক্যাল ফ্রি এই রঙ দিয়েই গত বছর দোলেই প্রথম রঙ খেলেছিল ছাত্র-ছাত্রীরা। এবারও দোলে এই ভেষজ আবির দিয়েই রঙ খেলা হবে। পরবর্তীকালে এই ভেষজ আবিরকে কিভাবে বাজারজাত করা যায় তারও পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।
গত বছরের সেই রেশ ধরে রেখে এবার দ্বিতীয় বছরেও ভেষজ আবির তৈরির কর্মশালা করে পড়ে থাকা পলাশ ফুল,বাড়ি থেকে নিমপাতা,শিম পাতা ,পেঁপে পাতা,পালং শাক, সংগ্রহ করে বাজার থেকে কাঁচা হলুদ এনে শুরু হয়েছে ভেষজ আবির তৈরির কাজ।শুধু আবির তৈরিই নয় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নাম না জানা ফুল পাতা শুকিয়ে তা দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে হারিয়ে যাওয়া গ্রিটিংস কার্ড। স্কুলের কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন SKBU এর উপাচার্য ডঃ পবিত্র কুমার চক্রবর্তী, বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সুব্রত রাহা, জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) মহুয়া বসাক সহ অন্যান্যরা। সকলেই প্রত্যন্ত এলাকার এই মডেল স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের ভেষজ আবির তৈরি নিয়ে অনুপ্রেরণা দেন। SKBU এর উপাচার্য ডঃ পবিত্র কুমার চক্রবর্তী বলেন। জেলার চতুর্দিকে পলাশ গাছ। ঠিক মতো ব্যবহার না হয়ে পলাশ ফুল পড়ে পড়ে নষ্ট হয়। আগামী দিনে পলাশ ফুল নিয়ে বৃহৎ আকারে যাতে ভেষজ আবির তৈরি করা যায় তারও পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। এই ভেষজ আবির শুধু দোল উৎসব নয় বিভিন্ন কাজে যাতে লাগানো যায় তারও উদ্যোগ নেওয়া হবে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বারকোড সহকারে জেলার বিভিন্ন গাছ গাছালি নিয়ে মেডিসিনাল প্ল্যান্ট তৈরি করারও পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের প্রধান সুব্রত রাহা জানান। বর্তমানে কেমিক্যাল আবির বাজার ছেয়ে গেছে। এখনো ভেষজ আবির সম্পুর্ন ভাবে কেমিক্যাল আবিরকে প্রতিস্থাপন করতে পারেনি।তবে যেভাবে প্রচার হচ্ছে আগামীদিনে মানুষ সচেতন হয়ে ভেষজ আবিরই বেশি ব্যবহার করবে। ভেষজ আবির শুধু রঙ খেলার জন্যই যে নয় এসব রঙের যে বিভিন্ন গুনাগুন রয়েছে তাও তুলে ধরেন।বাজারের চকচকে রঙ মানেই কেমিক্যালে ভর্তি,ক্যান্সারের মতন মরণব্যাধি রোগ তো আছেই তার আগেই চামড়া, চোখ সব নষ্ট হয়ে যাবার সম্ভাবনা প্রবল বলে ব্যাখ্যা করেন অধ্যাপক সুব্রত রাহা। আগামী দিনে এই ভেষজ আবির ঘিরে ব্যাপক ব্যবসায়িক সম্ভাবনার কথাও বলেন তিনি। বিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক কৌশিক বেরা জানান। মূলত স্কুলের বাচ্চারা এই কাজে খুব অনুপ্রাণিত। গত বছর আমরা করেছিলাম এ বছরও ছাত্র-ছাত্রীরা রিকোয়েস্ট করছে কখন রং প্রস্তুত হবে।সেই মত এবারেও পলাশ ফুল, নিমপাতা,সিমপাতা,সিন্দরীগাছের বীজ, পালং শাক এবং কাঁচা হলুদ সহকারে বিভিন্ন রং প্রস্তুত করা হচ্ছে। একই সাথে এবারে বিভিন্ন ফুল পাতা নিয়ে গ্রিটিংস কার্ডও তৈরি করা হচ্ছে।