সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়
নির্বাচন কমিশনের দেওয়া ভোটার তালিকায় নাকি ভূতের উপদ্রব! এমনই অভিযোগ রাজ্যের শাসক থেকে বিরোধী সকলের। এই অবস্থায় রাজ্যের ভোটার তালিকা থেকে মৃত ভোটারের নাম বাদ দিতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তা খতিয়ে দেখতে চায় কমিশন। যেহেতু নির্বাচন কমিশন একটি স্বশাসিত সংস্থা এবং তার নিজের কোন শাখা নেই তাই প্রত্যেক রাজ্যের সরকারের কর্মচারীদের দিয়েই নির্বাচন কমিশন তার কাজ করায়। এক্ষেত্রে বুথ লেভেল অফিসার ও এআরও দের এই সমীক্ষার কাজে পাঠানো হবে বলে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক দফতর সুত্রে খবর। আজ বিকেলেই নির্বাচন কমিশন বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে আগামী তিন মাসের মধ্যে ভোটার তালিকায ভুতুড়ে ভোটার নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে তা খুঁটিয়ে দেখে দেশজুড়ে ইউনিক ভোটার নম্বর চালু করবে। কমিশন আরো জানিয়েছে যে বুথ লেবেল অফিসাররা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা তথ্যখুঁটিয়ে দেখবে এবং সেই তথ্য সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার বা জেলাশাসকদের কাছে পৌঁছে দেবে। রিটার্নিং অফিসাররা সেই তথ্য খুটিয়ে দেখে কমিশনকে রিপোর্ট দেবে। সেই মোতাবেক নির্বাচন কমিশন তিন মাস পর দেশজুড়ে ইউনিক ভোটার আইডি নম্বর ঘোষনা করবে।
১৯৯৫ সালে দেশের তত্কালীন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার টি এন সেশন শুরু করেছিলেন সচিত্র ভোটার আই কার্ডের। তখন থেকেই সচিত্র ভোটার আই কার্ড আজও চলছে দেশজুড়ে। তবে নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী ভোটার আই কার্ড ব্যতীত আরো ১৫ টি ডকুমেন্ট আছে যেগুলির সাহায্যে একজন ভোটার তাঁর ভোট দান করতে পারবেন। কিন্তু তার আগে অবশ্যই ভোটার তালিকায় তার নাম থাকাটা অত্যাবশ্যকীয়। যদিও নির্বাচন কমিশনের স্পষ্ট বক্তব্য, ভুয়ো ভোটার বলতে কিছুই হয় না। তার কারণ কোন ব্যক্তির কাছে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া ভোটার আই কার্ড থাকা মানেই ওই ব্যক্তি যে ভোট দিতে পারবেন এমন কোন কথা নেই। একজন মানুষ তখনই ভোট দিতে পারবেন যখন নির্বাচন কমিশনের তৈরী করা ভোটার তালিকায় তাঁর নাম থাকবে।
একটা সময় ছিল যখন নির্বাচন কমিশনের কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকায় নাম তোলার কাজ করতেন। কিন্তু কালের বিবর্তনে আজ নির্বাচন কমিশন প্রযুক্তিনির্ভর। সে কারণেই নতুনভাবে নাম তোলা থেকে শুরু করে ভোটার আই কার্ডের কোন তথ্য পরিবর্তন করা অথবা এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় স্থানান্তরিত হওয়ার কাজ এখন মাউসের এক ক্লিকেই বা স্মার্টফোনের সাহায্যে এক নিমেষেই করে ফেলতে পারেন যে কেউ।
অনলাইনের মাধ্যমে ভোটার তালিকায় নাম তোলা বা সংশোধন করার কাজ করলেও নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট সেই ব্যক্তির সবকিছু যাচাই করা হয় এখন রাজ্যে অবস্থিত প্রত্যেক জেলার নির্দিষ্ট দপ্তরে। তারপরেই সেই সংশোধিত নাম এবং তথ্য নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। এই নিয়মের বাইরে কোনোভাবেই কেউই ভোটার তালিকায় নাম তুলতে সক্ষম হয় না। আর এই কারণেই নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য ভুয়ো ভোটার বলতে কিছুই নেই। কমিশনের মত, একজন ভোটারের যেমন কর্তব্য নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকায় নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করানো ঠিক সেরকমই কোন ব্যক্তি মারা গেলে তাঁর নামটিকে কমিশনের ভোটার তালিকা থেকে মুছে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানোর কাজটাও সংশ্লিষ্ট সেই ব্যক্তি বা পরিবারের উপর বর্তায়। বর্তমানে যা কোন ক্ষেত্রেই দেখা যায় না। যার ফলে কমিশনের কাছে একটা বড় বাধা তৈরি হয়েছে মৃত ভোটারমুক্ত ভোটার তালিকা তৈরি করা। অন্যদিকে, নির্বাচন কমিশন জানাচ্ছে ভোটার তালিকা সংশোধনের সময় নতুন নাম সংযুক্তিকরণ থেকে শুরু করে নাম সংশোধন সবকিছুই যারা প্রথমে করেন তাঁরা নির্বাচন কমিশনের স্বীকৃত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি থেকে শুরু করে কর্মী। প্রত্যেক বুথেই তাঁরা নিজেরা থেকে এই কাজটা করেন। রাজনৈতিক দলের কর্মীরা প্রত্যেক বুথে সেই সমস্ত কিছু যাচাই করার পর তা নির্বাচন কমিশনের হাতে তুলে দেয়। এরপর কমিশন সবকিছুকে দেখেই তারপর ভোটার তালিকায় নাম নথিভূক্ত থেকে শুরু করে সংশোধন সবকিছুই করে। যে কারণে কমিশনের স্পষ্ট বক্তব্য, ভুয়ো ভোটার বলতে কিছুই হয় না।