পেট ভরাতে ভরসা রেশনের চালের পান্তা ভাত আর আলু সেদ্ধ। তবুও বড় ফুটবলার হওয়ার স্বপ্নে অবিচল মল্লিকা টুডু। খেলার মাঠে পায়ে ফুটবল পড়লেই প্রবল পরাক্রমী হয়ে ওঠে পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষের সগড়াই গ্রামের এই আদিবাসী কন্যা। পায়ের জাদুতে প্রতিপক্ষকে রীতিমত নাস্তানাবুদ করে তোলেন তিনি। পায়ে ফুটবল পেলেই তা গোল পোস্টের জালে পৌঁছে দিয়ে তবেই খান্ত হন মল্লিকা টুডু ।এইভাবেই বাংলার হয়ে ফুটবল খেলে মাঠ কাঁপিয়ে এখন মল্লিকা দেশের বিভিন্ত প্রান্তের মাঠে নিজেকে তুলে ধরছে। তাঁর স্বপ্ন ভায়তীয় মহিলা ফুটবল দলের হয়ে ময়দান কাঁপানো। সেই স্বপ্নকে আঁকড়ে মল্লিকা কঠোর অনুশীলনে ব্যস্ত এখন।
ছোট থেকে অভাব-অনটন ছিল নিত্যসঙ্গী তাঁর ঘরে। কিন্তু স্বপ্ন দেখার পথে কোনও বাধাই তাকে আটকাতে পারেনি। খণ্ডঘোষের সগড়াই গ্রামের মেয়ে মল্লিকা টুডু প্রমাণ করেছেন, প্রতিভা ও পরিশ্রমের কাছে দারিদ্র্য কখনও বাধা হতে পারে না। গ্রামের মাঠে ফুটবল খেলা শুরু করা মেয়েটা এখন বাংলার হয়ে ফুটবল মাঠ কাঁপিয়ে চলেছে। দেশের হয়ে খেলার জন্যেও সে নিজেকে তৈরি করে চলেছে জোরকদমে।
দু’চোখে নেই আলো, ছাপোষা ঘরের মেয়েটির অদম্য জেদ আর লড়াইয়ের কাহিনী শিহরণ জাগাবে। অভাব-অনটন মল্লিকাদের পরিবারের নিত্যদিনের সঙ্গী। বাইরের কোনও অতিথি এলে ঘরে বসার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা পর্যন্ত তাঁদের নেই। সংসার চলে রেশনের চাল আর আলু সিদ্ধের ভরসায়। প্রায় প্রতিদিনই একবেলা ভাত ফুটিয়ে, তা পরের দিন পান্তা ভাত হিসেবে তাঁকে খেতে হয়। তবুও সেই পান্তা ভাত খেয়ে মাঠে নেমেই মাঠ দাপিয়ে বেড়ায় মল্লিকা। ছোটবেলাতেই বাবাকে হারিয়েছে সে। মা শারীরিকভাবে অসুস্থ। কাজ করা দূরের কথা তিনি ভালো করে হাঁটতেও পারেন না। সংসারের ভার বহন করেন রাইসমিল শ্রমিক মল্লিকার দাদা। অল্প আয়ের সংসারে অনটনের ছাপ স্পষ্ট। তবে সেই বাধাকে জয় করেই মল্লিকা ফুটবল পায়ে নিয়ে ময়দান কাঁপানোর জন্য নিজেকে যোগ্য করে তুলেছে।
ফুটবল খেলায় অসাধারণ নৈপুণ্যতা দেখিয়ে মল্লিকা রাজ্যের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় নজর কেড়েছে। সে বাংলার হয়ে ইতিমধ্যেই গুয়াহাটিতে অনূর্ধ্ব-১৭ হিরো ন্যাশনাল কাপ এবং অনূর্ধ্ব-১৯ ক্যাটাগরিতে প্রতিনিধিত্ব করেছে। এর আগে মল্লিকা হরিয়ানায় অনুষ্ঠিত জাতীয় প্রতিযোগিতাতেও বাংলার জার্সিতে মাঠে নেমেছিল। পূর্ব বর্ধমান জেলাপরিষদের অধ্যক্ষ অপার্থিব ইসলাম বলেন , ‘মল্লিকা টুডু গ্রাম গঞ্জের মহিলা খেলোয়াড়দের কাছে অবশ্যই অনুপ্রেরণা। ভালো ফুটবলার হওয়ার অদম্য জেদ নিয়ে মল্লিকা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এই অদম্য জেদ ও লড়াই করার মানসিকতা ধরে রাখতে পারলে মল্লিকা হয়তো একদিন জাতীয় বা আন্তর্জাতিক স্তরের ফুটবল খেলায় নিজেকে মেলে ধরতে পারবে। সেই দিনটা দেখার জন্য খণ্ডঘোষবাসী মুখিয়ে রয়েছেন”।