সামনেই বসন্ত উৎসব। এই উৎসবে মাতবে গোটা রাজ্য। আর বসন্ত উৎসব মানেই তো শান্তিনিকেতন এর লাল মাটিতে পলাশের হাসি গায়ে মেখে ঘুরে বেড়ানো। বসন্ত উৎসবে রঙিন হয়ে ঘুরে বেড়ানো এদিক ওদিক শান্তিনিকেতনের সোনাঝুড়ির খোয়াই এর হাটে। সোনাঝুড়ির জঙ্গলে রং খেলা, কলকাতা থেকে লং ড্রাইভে চলে এসে গাড়ি পার্কিং করে জঙ্গলে লুকিয়ে পড়া ভালোবাসার মানুষের হাত ধরে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ানো। আর সাথে সুন্দর ভিডিওগ্রাফি করা ড্রোন ক্যামেরায়। এটাই এখন আপাতত হাল ফ্যাশন এই বসন্তের সময়। শহরে ফিরে গিয়ে স্ট্যাটাস আপডেট করে বলা সোনাঝুরিতে রং খেললাম, জঙ্গলে লুকিয়ে বেড়ালাম। আর কি চাই এটাই তো আসল জীবন উপভোগ করা তাই না। তাতে জঙ্গলের ক্ষতি হোক। তাতে পরিবেশ দূষণ হোক। তাতে জঙ্গলে শব্দ দূষণ হোক তাতে কার কি আর আসে যায় বলুন তো। এই জঙ্গলকে ঘিরেই হাজার হাজার মানুষের ভীড় উপচে পড়ে প্রতিবছর খোয়াই এর হাটে। সেই খোয়াই এর হাটে হাট কমিটি আর বোলপুরের এক নম্বর ওয়ার্ড কমিটি বসন্ত উৎসব করে প্রতি বছর এই কিছুদিন ধরে। জঙ্গলের মধ্য যে বসন্ত উৎসব নিয়ে হৈ চৈ হুল্লোড় এর শেষ নেই। কিন্তু এই বছর আর বসন্ত উৎসব উপলক্ষে শান্তিনিকেতনের সোনাঝুড়ির খোয়াই এর হাটে নিষিদ্ধ করা হলো রং খেলা। গাড়ি পার্কিং, আর ড্রোন ক্যামেরায় ভিডিগ্রাফি করা। যা সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ করলো বনদফতর। আর এটা নিয়েই এখন শুরু হয়েছে জোর হৈ চৈ হুল্লোড়। কিন্তু কেনো বন্ধ হলো এই রং খেলা। কাদের জন্য আর কাদের স্বার্থে বন্ধ হলো এটা। সেই নিয়েই খোঁজ খবর শুরু করলাম আমি। দোল উপলক্ষে শান্তিনিকেতনে চলে তিন দিনের হোটেল বুকিং ব্যবসা। তিনদিন এর কম বুকিং করলে হবে না এই সময়ে। সেটাই দস্তুর এই উৎসবের সময়ে। যা হয় পৌষ মেলার সময়েও। আর দোল এর সময় ঘরের ভাড়া কম নয়। এই সোনাঝুড়ির জঙ্গলে নিয়ম অনুযায়ী বন দফতরের কথা শুনে কোনো হোটেল বা রিসর্ট তৈরি হয়নি এই জঙ্গল এলাকায় এমনটাই অভিযোগ। আর সেই জায়গায় পর্যটকদের খুশী রাখতেই হোটেল ও রিসর্ট ব্যবসায়ী যারা, তাঁরা বন দফতরের কাছে আবেদন করে যে বনের ভিতর প্রতিবছর যে বসন্ত উৎসবের আয়োজন করে হাট কমিটি ও বোলপুর পুরসভার এক নম্বর ওয়ার্ড কমিটি। সেই উৎসবে বহু মানুষের ভীড় হয় এই জঙ্গল এলাকায়। গান বাজনা নাচ সব হয় বেশ করে। যাঁরা পর্যটক আসেন তারা সব এই সোনাঝুড়ির এলাকায় ভীড় এর কারনে কোথাও যেতে পারেন না বের হতে পারেন না তাঁরা হোটেল থেকে। প্রচণ্ড যানজট হয় এই এলাকায়। রিসর্ট বা হোটেলে নিরালা নির্জন জায়গায় সময় কাটাতে এসে তাদের সমস্যা হয় খুব। আর সেই জন্য হোটেল এর তরফে বন দফতরের কাছে আবেদন করা হয় এই বসন্ত উৎসব বন্ধ করার জন্য। আর সেই কথা শুনে বন দফতর সিলমোহর দেয় হোটেল ও রিসর্ট এর ব্যবসায়ীদের আবেদনে সাড়া দিয়ে।আর তাতেই এই নির্দেশিকা যে খোয়াইয়ে এইবার এর বসন্ত উৎসব হবে না। এই প্রসঙ্গে সোনাঝুড়ির হাট কমিটির এক সদস্য আনন্দ মণ্ডলের কথায়, আমাদের বন দফতরের কথা মেনেই চলতে হবে। কিন্তু যাঁরা দোল উপলক্ষে এই এলাকায় আসবেন তাহলে তারা তো সেই আগে যেমন গৌর প্রাঙ্গণে স্টেজ বেঁধে বসন্ত উৎসব হতো সেটা বন্ধ হয়ে গেছে দেখতে পাবেন না একদমই। সেই আম্র কুঞ্জের সেই বিখ্যাত দোল উপলক্ষে অনুষ্ঠান সেটাও কবেই বন্ধ হয়ে গেছে সর্ব সাধারণের জন্য অনেক আগেই। সেই ২০১৮ সালে এই শান্তিনিকেতনে দোল উপলক্ষে প্রচুর লোক সমাগম হয়। পদপিষ্ট হবার মত পরিস্থিতি হয়। আর তারপর থেকেই বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ এই দোল উৎসবকে বন্ধ করে দেন। তাঁরা বিভিন্ন ভবনে ভবনে অনুষ্ঠান করবেন কিন্তু সেটা শুধুমাত্র ছাত্র ছাত্রীদের জন্য। আর সেটা হবে দোল এর আগেই। যদিও ২০১৭ সালে পূর্বপল্লীর মাঠে এই দোল উৎসব করে বিশ্বভারতী একবার। কিন্তু পরের বছর এই দুর্ঘটনার পরে সেটা বন্ধ করে দেওয়া হয় একদম। তাহলে শান্তিনিকেতনের দোল দেখতে এসে কি পাবেন দর্শকরা। কবিগুরুর সেই দোল এর অনুষ্ঠান পাবেন না। সেই দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো খোয়াইতে যে বসন্ত উৎসব হতো সেটাও সোনাঝুড়ির হোটেল আর রিসর্ট ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষিত করে বন দফতর নির্দেশিকা জারি করে বন্ধ করে দিলো দু পক্ষে একটা ভালো আন্ডারস্ট্যান্ডিং করে। তাহলে হাজার হাজার টাকা খরচ করে আসা পর্যটকরা কী পাবেন এই সাধের শান্তিনিকেতনে এসে দোলের সময়। শুধু কী কিছু ব্যবসা করা মানুষদের স্বার্থ দেখতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হলো সেই প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ পর্যটকরা। সত্যজিৎ মণ্ডল এর কথায় এরপর সব বন্ধ হয়ে যাবে শুধুই ব্যবসা করার জন্য আর ব্যবসার মুনাফার জন্য আমরা সাধারণ মানুষরা তাহলে কী করবো কোথায় যাবো। আর যে সব পর্যটকরা মুখিয়ে থাকেন বছরের এই একটি দিন তাঁরা তাহলে কি করবেন এখানে এসে শুধু হোটেল বন্দী হয়ে চুপ করে তিনদিন ঘরে বসে থাকবেন। আর মনে মনে গাইবেন লাগলো যে দোল। সত্যিই ভালো নির্দেশিকা বন দফতরের, যাতে মনে হবে জঙ্গল এর স্বার্থে কত ভালো কাজ না করলো তাঁরা। আসলে সাদা চোখে সেটা মনে হলেও এর মধ্য গূঢ় রহস্য লুকিয়ে আছে। যে রহস্য উন্মোচন করতে গেলে কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বেড়িয়ে পড়তে পারে। তাই চুপ থাকাই ভালো কি বলেন। বিশ্বকবির প্রাণের জায়গায় এখন শুধুই পুঁজির জন্য দৌড়ে বেড়ানো আর ছুটে বেড়ানো। সেটা ন্যায় পথে হোক বা অন্যায় পথে হোক।