মার্কিন অর্থনীতির ভবিষ্যৎ কোন পথে এগোচ্ছে? শুল্কনীতি কি অর্থনৈতিক ভারসাম্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে? এই নিয়ে বিশেষজ্ঞ মহলে বিতর্ক ক্রমেই বাড়ছে। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও বিষয়টি সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিচ্ছেন না। ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, দেশ এখন এমন এক অর্থনৈতিক পর্যায়ে রয়েছে, যেখানে আগাম কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছানো কঠিন। তাঁর মতে, বর্তমান পরিস্থিতি নীতি পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে, তবে তার ফলাফল সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা সম্ভব নয়। তাঁর মতে, অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসছে, যার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব কী হবে, তা নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প দায়িত্বে থাকাকালীন দেশটির বাণিজ্য নীতিতে ব্যাপক রদবদল করেছিলেন। বৈশ্বিক বাজারে আমেরিকার আধিপত্য শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে তিনি একাধিক দেশের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছিলেন। কোন দেশ মিত্র, আর কোন দেশ প্রতিদ্বন্দ্বী— সেই বিবেচনায় না গিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে নীতি প্রণয়ন করেছিলেন।
ট্রাম্পের দাবি ছিল, তার সিদ্ধান্ত দেশীয় অর্থনীতির উন্নতি ঘটাবে এবং বাণিজ্য ঘাটতির ভার কমাবে। তবে অর্থনীতিবিদদের মতে, এ ধরনের কঠোর নীতি সাময়িক সুবিধা দিলেও দীর্ঘমেয়াদে মার্কিন অর্থনীতির জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।
ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, “ভবিষ্যৎ নিয়ে নিশ্চিত কিছু বলা কঠিন, তবে একটা বিষয় পরিষ্কার—আমেরিকার অর্থনীতি একটা বড় রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমরা আমাদের অর্থনৈতিক শক্তি ফেরত আনতে চাই, কিন্তু এটি কোনো সহজ পথ নয়।” তিনি আরও স্বীকার করেছেন, কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে সময় লাগবে, তবে তার মতে, এই পরিবর্তন দেশের স্থিতিশীল ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ট্রাম্প প্রশাসন কানাডা ও মেক্সিকোর বিরুদ্ধে কঠোর বাণিজ্য নীতি গ্রহণ করেছিল। অবৈধ অভিবাসন রোধের অজুহাতে এই দুই দেশের আমদানি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। যদিও কিছুদিন পরেই সেই সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়। হোয়াইট হাউস জানায়, আপাতত ওই শুল্ক কার্যকর হবে না।
ট্রাম্পের শাসনামলে আমেরিকা ও চিনের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক চরম উত্তেজনার মধ্যে দিয়ে গিয়েছিল। শুরুতে চিন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক বসানো হলেও, পরবর্তীতে তা বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হয়। জবাবে, চিনও পাল্টা ব্যবস্থা নিয়ে আমেরিকান পণ্যের ওপর অতিরিক্ত কর আরোপ করে, যার ফলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়।ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যে দেশ আমেরিকার পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বাড়তি শুল্ক আরোপ করবে, তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মার্কিন অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন নানা মহলে উদ্বেগ বাড়ছে। বাজারে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি শুরু হয়েছে, যার প্রভাব পড়েছে শেয়ার বাজারেও। বিনিয়োগকারীরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বিধা তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি আমেরিকা বড় ধরনের মন্দার সম্মুখীন হয়, তবে তার অভিঘাত বিশ্ব অর্থনীতিতেও পড়বে।
Leave a comment
Leave a comment