রবিবার এক আশ্চর্য ঘটনার সাক্ষী থাকল নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু।”রাজা ফিরে আসুন, দেশ বাঁচান”, “আমরা রাজতন্ত্র চাই” এমন স্লোগানে মুখরিত হল কাঠমান্ডুর আকাশ বাতাস। নেপালের পশ্চিমাঞ্চল সফর শেষ করে রবিবার জ্ঞানেন্দ্র কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছন। তাঁকে স্বাগত জানাতে হাজির ছিলেন বিপুল সংখ্যক সাধারণ নাগরিক। রোববার, যখন হাজার হাজার মানুষ প্রাক্তন রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহকে স্বাগত জানাতে লাইন দিয়ে দাড়িয়েছিলেন, যেখানে একটাই দাবি ছিল — নেপালে হিন্দু রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনুন। উত্তেজিত রাজতন্ত্রপন্থী ব্যক্তি এবং সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলগুলো জ্ঞানেন্দ্রকে স্বাগত জানাতে প্রায় ৪ লক্ষ মানুষের জমায়েত হয়েছিল বলে দাবি করলেও সংবাদসংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী এই সংখ্যা ছিল প্রায় ১০ হাজার। ২০০৮ সালে নেপাল একটি ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতন্ত্রে পরিণত হওয়ার আগে পর্যন্ত নেপাল ছিল শেষ হিন্দু রাজতন্ত্র।
জ্ঞানেন্দ্র রাজা হওয়া এবং রাজতন্ত্রের অবসান
নেপালে ২৪০ বছর ধরে চলেছে একটি হিন্দু রাজতন্ত্র। ১৯৯০ সালে, একের পর এক গণআন্দোলনের পর, বীরেন্দ্র নেপালকে একটি নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্র থেকে সাংবিধানিক রাজতন্ত্রে রূপান্তর করতে সম্মত হন, একটি নির্বাচিত সংসদের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগ করে নেন। ক্রাউন প্রিন্স দীপেন্দ্র মদ্যপ অবস্থায় ২০০১ সালের ১জুন রাজা বীরেন্দ্র, রানী ঐশ্বর্যা এবং আরও আটজন রাজপরিবারের সদস্যকে হত্যা করেন।দীপেন্দ্র তিন দিন কোমায় থাকার পর মারা যান, এবং এরপর জ্ঞানেন্দ্র শাহ রাজা হন।
২০০৬ সালের এপ্রিলে সাতটি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে জনআন্দোলন শুরু হয়, যেখানে রাজার সরাসরি শাসনের অবসান দাবি করা হয়। জ্ঞানেন্দ্র চাপের মুখে নতি স্বীকার করেন এবং ২০০৭ সালে সংসদ পুনর্বহাল করেন। ২০০৮ সালে, মাওবাদী বিদ্রোহীদের আধিপত্যে নির্বাচিত সংবিধান সভা রাজতন্ত্র বিলুপ্ত করার পক্ষে ভোট দেয়। ২৮ মে, ২০০৮ সালে নেপাল আনুষ্ঠানিকভাবে একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষিত হয়, এবং রাজা জ্ঞানেন্দ্র নারায়ণহিতি প্রাসাদ ছেড়ে দেন। নেপাল, শেষ হিন্দু রাজতন্ত্র, একটি ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়। এবং নারায়ণহিতি প্রাসাদ এখন একটি জাদুঘরে পরিণত হয়েছে।
রাজার জন্য কী এবার খালি হবে নারায়ণহিতি প্রাসাদ?
নারায়ণহিতি প্রাসাদই এখন সেই জায়গা যেখানে মানুষ চায় জ্ঞানেন্দ্র রাজা হিসেবে ফিরে আসুন। কাঠমান্ডুর অলিতে গলিতে উঠছে সেই স্লোগান।২০০৮ সালেই নেপালের ২৪০ বছরের পুরোনো হিন্দু রাজতন্ত্রকে বিলুপ্ত করে ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন থেকে নেপালের মানুষ পেয়েছে ১৩টি সরকার। কেউ কেউ বলছেন দেশটির অনেকেই প্রজাতন্ত্রব্যবস্থার প্রতি হতাশ হয়ে পড়েছেন। তাঁদের দাবি, প্রজাতন্ত্রের সরকার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়েছে। অর্থনীতির খারাপ অবস্থা এবং ব্যাপক দুর্নীতির জন্যও অনেকে প্রজাতন্ত্রকে দায়ী করেছেন।
তবে রাজনৈতিক নেতারা এমনটা মানতে নারাজ।তাঁদের দাবি নেপালে রাজতন্ত্র এখন ইতিহাসের বিষয়। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং সিপিএন-ইউনিফাইড সোশ্যালিস্টের চেয়ারম্যান মাধব কুমার নেপাল বলেছেন যে রাজতন্ত্র পুনরুদ্ধারের কোনো সম্ভাবনা নেই। সিপিএন-মাওবাদী চেয়ারম্যান প্রচণ্ড প্রাক্তন রাজা জ্ঞানেন্দ্রকে সতর্ক করে বলেছেন, “যদি তিনি রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনার নামে বোকামি করেন, তবে তার জন্য এটি খারাপই হবে।” তবে রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র পার্টি (আরপিপি) নেপালের বিভিন্ন অংশে হিন্দু রাজতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য ইভেন্ট এবং র্যা লি আয়োজন করছে। তবে এখানেই শেষ নয়। নতুন করে ইতিহাস লিখে নেপাল ফের রাজতন্ত্রকে ফেরাবে কী না তা ভবিষ্যতই বলবে।