গত কয়েকদিনের ব্যবধানে ফের ধাক্কা লাগল গোটা বিশ্বের শেয়ার বাজারে। সোমবার এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ২.৭ শতাংশ নিচে বন্ধ হয়েছে, যা সেপ্টেম্বরের পর সবচেয়ে নিম্ন। ডাউ জোনস ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ ২ শতাংশ নিচে নেমে নভেম্বর ৪-এর পর সবচেয়ে নিম্ন স্তরে পৌঁছেছে। ন্যাসড্যাক কম্পোজিট ৪ শতাংশ নিচে নেমে প্রায় ছয় মাসের সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছেছে। কিন্তু এমনটা কেন হচ্ছে? বাজার বিশেষজ্ঞদের অভিমত এর পিছনে রয়েছে সদ্য মসনদে বসা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কিছু সিদ্ধান্ত ও সাম্প্রতিক মন্তব্য।
ক্ষমতায় এসেই ডোনাল্ড ট্রাম্প একের পর এক দেশের উপর চাপিয়েছেন চড়া হারে শুল্ক। একচেটিয়া ঘোষণায় কখনও তা চালু করেছেন, কখনও ঘোষণার পরেও স্থগিত রেখেছেন আবার কখনও তা কবে থেকে চালু হবে তার ডেটলাইন দিয়েছেন। তাঁর সিদ্ধান্ত সঠিক কোন পথে এগোবে তা বুঝতেই হিমশিম খাচ্ছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা। যদিও ট্রাম্পের দাবি তিনি আমেরিকার অর্থনৈতিক স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়েই এই নীতি প্রণয়নের পথে হাঁটছেন। কিন্তু তাতে কী মার্কিন অর্থনীতির লাভ হবে? ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জানিয়েছেন, দেশ এখন এমন এক অর্থনৈতিক পর্যায়ে রয়েছে, যেখানে আগাম কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছানো কঠিন। তাঁর দাবি, “আমি এমন কিছু ভবিষ্যদ্বাণী করতে চাই না। আমরা একটি পরিবর্তনের সময় পার করছি। আমরা আমেরিকায় সম্পদ ফিরিয়ে আনছি, যা একটি বড় বিষয়।”
অর্থাৎ ট্রাম্পের বক্তব্য আগামীর ফলাফল সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা সম্ভব নয়। আর এখানেই আর ভরসা রাখতে পারেনি বাজার। ফের একটা মন্দার শঙ্কা তাড়া করে বেড়ানোর জেরে সোমবার থেকেই ধাক্কা খেয়েছে শেয়ার মার্কেট। ন্যাসড্যাক ১০ শতাংশের বেশি নিচে নেমে সংশোধনের পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। এমএসসিআই-এর গ্লোবাল স্টক ইনডেক্সও ২ শতাংশের বেশি নিচে নেমে জানুয়ারি ১৩-এর পর সবচেয়ে নিম্ন স্তরে পৌঁছেছে। টেসলা, এনভিডিয়া, মেটা, অ্যামাজন এবং আলফাবেটের মতো বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর শেয়ারেও তীব্র ধস দেখা গেছে।
আর এর জেরে মঙ্গলবার এশিয়ান মার্কেটেও ধস দেখা গেছে। জাপানের নিক্কেই ২২৫ সূচক ২.৫ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়ার কসপি ২.৩ শতাংশ এবং অস্ট্রেলিয়ার এসঅ্যান্ডপি/এএসএক্স ২০০ সূচক ১.৮ শতাংশ নিচে নেমেছে। মঙ্গলবার বাজার খুলতেই ধাক্কা খেয়েছে ভারতীয় শেয়ার বাজারও।সেনসেক্সের পতন হয়েছে ৪০০ পয়েন্ট।
এই অনিশ্চয়তার মধ্যে সোনা, তেল এবং ক্রিপ্টোকারেন্সির দামেও ধস দেখা গেছে। স্পট গোল্ড ০.৮৬ শতাংশ নিচে নেমে প্রতি আউন্স ২,৮৮৫.৬৩ ডলারে পৌঁছেছে। বিটকয়েন ৪.৮৮ শতাংশ নিচে নেমে ৭৯,০২৮.৫৮ ডলারে পৌঁছেছে, যা নভেম্বরের পর সবচেয়ে নিম্ন স্তর। আসলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নানা আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এতে অর্থনৈতিক মন্দার শঙ্কায় সিঁদুরে মেঘ দেখে শেয়ারবাজার হঠাৎ চঞ্চল হয়ে উঠেছে।
Leave a comment
Leave a comment