বীরভূম জেলার নানুর ব্লকের সাকুলিপুর গ্রামে একটি পুরনো শিবমন্দির ঘিরে তীব্র আলোড়ন শুরু হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে অবহেলায় পড়ে থাকা এই মন্দিরটি সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে কাজ শুরু হতেই এমন এক অপ্রত্যাশিত দৃশ্য সামনে আসে, যা দেখে বিস্মিত গোটা গ্রাম। মন্দিরের পুনর্গঠনের উদ্দেশ্যে মাটি খোঁড়ার কাজ শুরু হতেই একের পর এক শিবলিঙ্গ সামনে আসতে থাকে। প্রথমে এটিকে কাকতালীয় বলে মনে করা হলেও, গভীর থেকে আরও শিবলিঙ্গ উদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি ঘনীভূত রহস্যের রূপ নেয়। কেউ মনে করছেন এটি কোনও ঐশ্বরিক কীর্তি, আবার অনেকের ধারণা, এই স্থানের অতীতে কোনও লুকিয়ে থাকা ইতিহাস রয়েছে, যা এখন সামনে আসছে।
স্থানীয়দের বক্তব্য, প্রায় ছয় ফুট গভীর পর্যন্ত খননের পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, আপাতত খোঁড়ার কাজ বন্ধ রাখা হবে। তাঁদের বিশ্বাস, এখানে ‘পাতালেশ্বর শিব’ অধিষ্ঠিত রয়েছেন, তাই যত গভীরে নামা হবে, ততই নতুন শিবলিঙ্গের সন্ধান মিলবে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুরো গ্রামে ব্যাপক কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে। কেউ প্রাচীন মন্দিরের অতীত ঘেঁটে এর সত্যতা বোঝার চেষ্টা করছেন, আবার কেউ একে অলৌকিক ঘটনা বলেই মেনে নিচ্ছেন।
স্থানীয় প্রবীণদের বিশ্বাস, একসময় এই এলাকায় তিলি সম্প্রদায়ের বসবাস ছিল, এবং তাঁরাই এই শিবমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। কালের প্রবাহে তাঁরা অন্যত্র চলে গেলে, মন্দিরের আশপাশের জমির মালিকানা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের হাতে আসে। তবে যুগ পরিবর্তন হলেও, মন্দিরের প্রতি মানুষের ভক্তি ও শ্রদ্ধা কখনও কমেনি, বরং এটি সব সম্প্রদায়ের জন্য এক বিশ্বাসের কেন্দ্র হিসেবে রয়ে গেছে।
প্রবীণ বাসিন্দা মুন্সি গোলাম গউস বলেন, “আমাদের পূর্বপুরুষরা পারস্য থেকে এখানে আসেন এবং স্থানীয়দের সঙ্গে মিলেমিশে বসবাস করতে থাকেন। মন্দিরের পরিচর্যার দায়িত্ব একসময় তাঁর পূর্বপুরুষেরাও পালন করেছিলেন। আজ এত বছর পর মন্দিরের সংস্কারের কাজ শুরু হওয়ায় তিনি দারুণ উচ্ছ্বসিত।
মন্দিরের বর্তমান সেবাইত সন্তোষ বটব্যাল জানালেন, “আমার ঠাকুরদা এখানে শিবপুজো করতেন, আর এখন আমি সেই দায়িত্ব পালন করছি। মন্দির সংস্কারের কাজ যখন শুরু হয়, তখনই আমরা দেখি, যত মাটি সরানো হচ্ছে, একের পর এক শিবলিঙ্গ বেরিয়ে আসছে। লোকমুখে প্রচলিত আছে, এখানে পাতালেশ্বর অনাদিলিঙ্গের অবস্থান রয়েছে, আর এখন সেটাই বাস্তবে দেখতে পাচ্ছি।”
ইতিহাসবিদ পার্থশঙ্খ মজুমদারের মতে, সাকুলিপুরের ইতিহাস বহু পুরনো, যা শতাব্দীর পর শতাব্দী পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়। একসময় এই অঞ্চল ‘কিসমত সাখলি পুর’ নামে পরিচিত ছিল এবং ধর্মমঙ্গল কাব্যের বিভিন্ন অংশের সঙ্গে এর যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায়। শিবপুজোর ঐতিহ্য এখানে বহু প্রাচীন এবং দীর্ঘদিন ধরেই প্রচলিত। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, অতীতে মন্দিরের কিছু অংশ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মাটির নিচে চাপা পড়েছিল, যা এখন খননের ফলে প্রকাশ্যে আসছে।
এই রহস্যময় আবিষ্কার ঘিরে জনসাধারণের কৌতূহল চরমে পৌঁছেছে। আপাতত খননের কাজ বন্ধ থাকলেও, এই শিবমন্দির এবং তার অজানা অতীত নিয়ে আলোচনা ও জল্পনা গোটা রাজ্যে তীব্র আকার ধারণ করেছে।