বিশ্বব্যাপী বায়ুদূষণের পরিস্থিতি দিন দিন আরও জটিল হয়ে উঠছে। ২০২৪ সালের ‘আইকিউ এয়ার’ রিপোর্টে প্রকাশিত সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানও সেই আশঙ্কাকেই দৃঢ় করেছে। গবেষণায় উঠে এসেছে এমন কিছু তথ্য, যা পরিবেশবিদদের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত ২০টি শহরের মধ্যে ১১টি ভারতের হলেও, পশ্চিমবঙ্গের কোনও শহর সেই তালিকার শীর্ষে নেই। তবে রাজ্যের বায়ু গুণমানের চিত্র আশাব্যঞ্জক নয়। সাতটি শহরের বাতাসেই দূষণের মাত্রা উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় বিপদের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
অসম ও মেঘালয়ের সীমান্তবর্তী শহর বিরনিহাট বাতাসের গুণমান সূচক (AQI) ১২৮.২ নিয়ে ভারতের সবচেয়ে দূষিত শহর হিসেবে উঠে এসেছে তালিকার শীর্ষে। অন্যদিকে, দূষণের মাত্রা তুলনামূলকভাবে অনেকটাই কম কলকাতায়, যা ১৮৩ নম্বরে রয়েছে এবং শহরটির বার্ষিক গড় AQI ৪৫.৬।
পশ্চিমবঙ্গের দূষণের সমস্যা শুধুমাত্র কলকাতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, রাজ্যের অন্যান্য শহরগুলিও ক্রমশ দূষণের মারাত্মক প্রভাবের শিকার হচ্ছে। বিশেষ করে দুর্গাপুর, আসানসোল, ব্যারাকপুর, হাওড়া, শিলিগুড়ি এবং হলদিয়ার বাতাসের গুণমান বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য গুরুতর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গে বায়ুদূষণের নিরিখে সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে রয়েছে দুর্গাপুর, যা তালিকার ৩৭তম স্থানে উঠে এসেছে, যেখানে বার্ষিক গড় AQI ৭২.৩। এর ঠিক পরেই রয়েছে আসানসোল, যা ৩৮তম স্থানে রয়েছে (AQI ৭২.২)। দূষণের মাত্রায় পিছিয়ে নেই ব্যারাকপুরও, যার অবস্থান ৭৩ নম্বরে (AQI ৫৮.৪)। হাওড়ার পরিস্থিতিও বেশ উদ্বেগজনক, এই শহর রয়েছে ৭৯তম স্থানে, AQI ৫৭.১। দূষণের মাত্রা তুলনামূলকভাবে কম হলেও শিলিগুড়ি (স্থান ৩০৯, AQI ৩৯.৪) এবং হলদিয়া (স্থান ৩৭৫, AQI ৩৬.৫) এই তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে, যা রাজ্যের বাতাসের গুণমান সম্পর্কে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
সুইডেনের ‘আইকিউ এয়ার’ সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে দূষণের নিরিখে ভারত বিশ্বের পঞ্চম স্থানে রয়েছে। ২০২৩ সালে এই স্থান ছিল তৃতীয়, অর্থাৎ সামান্য উন্নতি হলেও সামগ্রিক পরিস্থিতি এখনও যথেষ্ট চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গবেষণা অনুযায়ী, ভারতের বাতাসে পিএম ২.৫ দূষক কণার গড় ঘনত্ব প্রতি ঘনমিটারে ৫০.৬ মাইক্রোগ্রাম, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) নির্ধারিত আদর্শ মাত্রার (৫ মাইক্রোগ্রাম) তুলনায় বহু গুণ বেশি, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক।
২০২৪ সালে ভারতের বাতাসে ক্ষতিকর কণার পরিমাণ ২০২৩ সালের তুলনায় ৭ শতাংশ হ্রাস পেলেও, দেশের সামগ্রিক বায়ুদূষণের মাত্রা এখনও চিন্তার কারণ রয়ে গেছে। পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন না ঘটায় জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি বহাল রয়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকার বায়ুদূষণ রোধে ২০১৯ সালে একটি বিশেষ প্রকল্প শুরু করেছিল, যার বিষয়ে সম্প্রতি সংসদে বক্তব্য রেখেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিমন্ত্রী কীর্তিবর্ধন সিংহ। তিনি জানান, প্রকল্পটির আওতায় পশ্চিমবঙ্গের ছ’টি শহর— কলকাতা, দুর্গাপুর, আসানসোল, হাওড়া, হলদিয়া ও ব্যারাকপুর— দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য কেন্দ্র থেকে মোট ১০৮৯.৭৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। সুইস সংস্থার এই গবেষণার ফলাফল কেন্দ্রের তথ্যের সঙ্গে মিলে গেছে, যা পরিস্থিতির গুরুত্ব আরও স্পষ্ট করছে।
Leave a comment
Leave a comment