ফেসবুকের প্রাক্তন সিওও শেরিল স্যান্ডবার্গকে নিয়ে ফের বিতর্কের আগুন জ্বলেছে। একসময়ের সহকর্মী উইন-উইলিয়ামস তাঁর বিরুদ্ধে কিছু গুরুতর অভিযোগ এনেছেন, যা সামাজিক মাধ্যমে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। তাঁর দাবি, ইউরোপ সফরের সময় স্যান্ডবার্গ ও তাঁর নারী সহকারী সম্পর্কের সীমারেখা অতিক্রম করেছিলেন এবং অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন।
দীর্ঘ সফরের সময় স্যান্ডবার্গ ও তাঁর সহকারী একে অপরের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে থাকতেন, এমনকি গাড়িতে ভ্রমণের সময় পরস্পরের আরাম নিশ্চিত করতে মাথা রাখতেন একে অপরের কোলে এবং চুলে আলতোভাবে হাত চালাতেন। এমন আচরণ একটি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা ও পেশাদার কর্মসংস্কৃতির পরিপন্থী বলে মনে করছেন অনেকে।
কিন্তু বিতর্ক এখানেই শেষ নয়। উইন-উইলিয়ামসের দাবি, একবার স্যান্ডবার্গ তাঁকে বিশেষ ধরনের অন্তর্বাস কেনার নির্দেশ দেন, যার জন্য বিপুল অঙ্কের টাকা, প্রায় ১১.৩ লক্ষ, খরচ করা হয়।
তবে যা সবচেয়ে বেশি চাঞ্চল্যের জন্ম দিয়েছে তা হলো স্যান্ডবার্গের আচরণ নিয়ে অভিযোগ। উইন-উইলিয়ামসের দাবি, ব্যক্তিগত বিমানে ফেরার সময় স্যান্ডবার্গ তাঁকে ঘনিষ্ঠ হওয়ার প্রস্তাব দেন। কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করায় স্যান্ডবার্গ বিরক্ত হন, যা পরবর্তী সময়ে তাঁদের পেশাগত সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
এমন অভিযোগ সামনে আসার পর মেটা (সাবেক ফেসবুক) কঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। সংস্থার একজন মুখপাত্র এই অভিযোগকে ‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে উড়িয়ে দিয়ে জানান, এটি শুধুমাত্র এক প্রাক্তন কর্মীর অসন্তোষপ্রসূত দাবি, যার সঙ্গে বাস্তবের কোনো সম্পর্ক নেই।
মেটার এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, উইন-উইলিয়ামসকে আট বছর আগে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল তার কর্মদক্ষতার ঘাটতি ও অপ্রত্যাশিত আচরণের কারণে। সংস্থার অভ্যন্তরীণ তদন্তেও তখন তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো নিরর্থক প্রমাণিত হয়েছিল।
তবে উইন-উইলিয়ামসের অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দু শুধু শেরিল স্যান্ডবার্গই নন। তাঁর সদ্য প্রকাশিত বই ‘কেয়ারলেস পিপল: আ ক্যাউশনারি টেল অফ পাওয়ার, গ্রিড এন্ড লস্ট আইডিয়ালিজম’-এ মেটার সিইও মার্ক জাকারবার্গকেও নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন।
উইন-উইলিয়ামসের মতে, একসময় জাকারবার্গ প্রযুক্তি ও কোডিংয়ের প্রতি গভীরভাবে মনোযোগী ছিলেন, তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি জনপ্রিয়তা ও ক্ষমতার আকর্ষণে বদলে যান। বইটিতে উল্লেখ রয়েছে, ইন্দোনেশিয়া সফরের সময় বিশাল জনসমাগমের ব্যবস্থা করার দায়িত্ব তাঁকে দেওয়া হয়েছিল, যাতে লক্ষাধিক মানুষ উপস্থিত থাকে। প্রকাশের আগে বইটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হলেও, বাজারে আসার পর তা সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
উইন-উইলিয়ামস তাঁর লেখায় শেরিল স্যান্ডবার্গ ও মার্ক জাকারবার্গকে এমন নেতারূপে চিত্রিত করেছেন, যারা ক্ষমতার মোহে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন এবং দায়িত্বশীলতার অভাব দেখিয়েছেন। তবে তাঁর দাবিগুলি নিয়ে নানা বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এটি আসলে এক প্রাক্তন কর্মীর ব্যক্তিগত অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ, যেখানে সত্যের চেয়ে প্রতিশোধস্পৃহাই বেশি কাজ করছে।