সৌদি আরবে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে সম্মত হয়ে খেলা ঘুরিয়ে দিল ইউক্রেন। জানা যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্থাপন করা ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে রাজি হয়েছে ইউক্রেন। মঙ্গলবার সৌদি আরবের জেদ্দায় আমেরিকা ও ইউক্রেনের আলোচনার শেষে সহমতের ভিত্তিতে এক যৌথ বিবৃতিতে কিয়েভের এই সম্মতির কথা জানানো হয়েছে। আর এটাকেই যুদ্ধ থামাতে বড় অগ্রগতি হিসেবে মেনে নেওয়া হচ্ছে।জেলেনস্কির এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও। আমেরিকার তরফে জানানো হয়েছে, এ বার রাশিয়াকেও যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মানতে বলবে ওয়াশিংটন।
অথচ কয়েকদিন আগেই হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির নজিরবিহীন বাগ্বিতণ্ডার পর এক টালমাটাল অবস্থার মধ্যে পড়ে ইউক্রেন- রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতি। । হোয়াইট হাউস থেকে বেড়িয়েই ইংল্যান্ডে ছুটে যান জেলেনস্কি।ইউক্রেনের বিপদ আমাদের বিপদ এমনটা বুঝে আরও শক্তি বাড়ানোর পথে হাঁটতে শুরু করে ইউরোপের দেশগুলো।এদিকে ডোভাল অফিসে এমন তর্ক-বিতর্কের পর ওয়াশিংটন ইউক্রেনের সঙ্গে সামরিক সহায়তা এবং গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এমতাবস্থায় তিন বছর ধরে চলা রুশ- ইউক্রেন যুদ্ধ কী থামবে তার উত্তর খুঁজতে সৌদি আরবে শুরু হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র – ইউক্রেন শান্তি আলোচনা। সৌদি আরবের জেদ্দায় ইউক্রেনের সঙ্গে এই আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের তরফে নেতৃত্ব দিয়েছেন সেক্রেটারি অফ স্টেট মার্কো রুবিও। ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের নেতৃত্ব দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির অফিসের প্রধান আন্দ্রি ইয়ারমাক। ইয়ারমাক জানান সৌদি বন্দর শহর জেদ্দায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনা ইতিবাচকভাবে শুরু হয়েছে। তারপরেই এসেছে সুখবর।
জেড্ডায় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি এবং খনিজচুক্তি নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা।ইউক্রেন জানিয়ে দিয়েছে যে তারা আমেরিকার দেওয়া ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মানতে রাজি।পাশাপাশি রাশিয়ার সঙ্গেও এ নিয়ে আলোচনায় বসতে রাজি ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট। আর ইউক্রেনের এমন ইতিবাচক ভাবনার পরে মনে করা হচ্ছে যে এ বার ইউক্রেনের উপর সামরিক সাহায্য বন্ধের স্থগিতাদেশও তুলে নিতে পারে ট্রাম্প প্রশাসন। অর্থাৎ এবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যাদি প্রস্তাব মেনে নেন্তাহলে শেষ হতে পারে তিন বছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ।
তবে ইউক্রেন যে কোনও ভাবে যুদ্ধ বিরতিতে রাজি হলেও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তা নিয়ে কী ভাবছেন সেটাই বড় প্রশ্ন।বৈঠকের আগের রাতেও ইউক্রেনের উপর হামলা থামায় নি পুতিনের বাহিনী! ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে রাতভর চলে বিমানহামলা। সোমবার সারা রাত ধরেই কিয়েভ ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। রাশিয়া ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রায় আক্রমণ শুরু করেছিল। গত তিন বছরে রুশ বাহিনী ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ ভূখণ্ড নিজেদের দখলে নিয়েছে।
তবে বৈঠক শেষে মার্কিন বিদেশমন্ত্রী মার্কো রুবিও সাংবাদিকদের বলেন, ‘বল এখন রাশিয়ানদের কোর্টে।’ এখন মস্কোর কাছে যুদ্ধবিরতির এই প্রস্তাব নিয়ে যাওয়া হবে এবং রাশিয়ানরা যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হবে বলে তিনি আশা করছেন। তবে তারা যদি এতে রাজি না হয় তবে ‘দুর্ভাগ্যবশত সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কী প্রতিবন্ধকতা আছে, তা আমরা বুঝতে পারব’ বলে উল্লেখ করেছেন রুবিও।
হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে। আশা করি প্রেসিডেন্ট পুতিনও রাজি হবেন। তিনি আরও বলেন যে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি যেদিন শেষবার হোয়াইট হাউসে উপস্থিত ছিলেন, সেদিনের তুলনায় বর্তমান পরিস্থিতি একেবারেই আলাদা।
Leave a comment
Leave a comment