রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)-এর সাধারণ সম্পাদক দত্তাত্রেয় হোসাবলে দেশের শীর্ষ আর্থিক নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই)-এর নাম পরিবর্তন করার প্রস্তাব করেছেন। দিল্লির এক আলোচনাসভায় বক্তব্য রাখার সময় তিনি বলেন, “যদি সরকারি নথিতে ‘ভারত’ শব্দটি গ্রহণযোগ্য হয়, তাহলে দেশের অন্যতম প্রধান আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নামেও সেটি ব্যবহার করা উচিত।” তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন, “আমরা এখনও কেন ‘ইন্ডিয়া’ শব্দের ওপর নির্ভর করব? যখন সংবিধানে স্পষ্টভাবে ‘ভারত’ উল্লেখ করা হয়েছে, তখন অন্যান্য ক্ষেত্রে ‘ইন্ডিয়া’ ব্যবহারের যৌক্তিকতা কী?”
দেশের নাম নিয়ে বিতর্ক নতুন কিছু নয়, তবে সাম্প্রতিক সময়ে এটি আবারও রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। বিশেষত, বিরোধী দলগুলোর জোট ‘INDIA’ নাম গ্রহণ করার পর থেকেই এই বিতর্ক আরও জোরদার হয়েছে। শাসক ও বিরোধী দুই পক্ষের নেতারাই বিষয়টি নিয়ে নিজেদের মতামত তুলে ধরছেন, যা জাতীয় রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
শুধু রাজনৈতিক মহলেই নয়, শিক্ষাক্ষেত্রেও এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম পর্ষদ (NCERT) পাঠ্যবই সংশোধনের প্রস্তাবে ‘ইন্ডিয়া’ শব্দের বদলে ‘ভারত’ ব্যবহারের সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া, সরকারি দপ্তরেও পরিবর্তনের ইঙ্গিত মিলছে। কেন্দ্রীয় রেল মন্ত্রকের বেশ কিছু নথিতে ‘ইন্ডিয়া’-র পরিবর্তে ‘ভারত’ শব্দ ব্যবহারের প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে।
এই পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে নানা মহলে তর্ক-বিতর্ক অব্যাহত। অনেকে একে জাতীয় পরিচয়ের প্রতি সম্মান জানানো বলে মনে করছেন, আবার অনেকে মনে করছেন এটি নিছক রাজনৈতিক চাল। তবে যাই হোক, ‘ভারত বনাম ইন্ডিয়া’ বিতর্ক যে দ্রুত মিটবে না, তা স্পষ্ট।
জি২০ সম্মেলনের সময় পাঠানো আমন্ত্রণপত্রেও এই পরিবর্তনের ছাপ দেখা গিয়েছিল, যেখানে ‘প্রেসিডেন্ট অফ ইন্ডিয়া’-র পরিবর্তে ‘প্রেসিডেন্ট অফ ভারত’ লেখা হয়েছিল। কিছুদিন পরে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-এর নামও সরকারি নথিতে ‘প্রাইম মিনিস্টার অফ ভারত’ হিসেবে দেখা যায়। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার একটি অংশ, যা প্রশাসনিক ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে পারে।
দত্তাত্রেয় হোসাবলে মনে করেন, “যদি সংবিধানে দেশের নাম ‘ভারত’ হিসেবে উল্লেখ করা থাকে, তাহলে তা প্রতিটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের নামেও প্রতিফলিত হওয়া উচিত।” তাঁর দাবি, এটি শুধু নাম পরিবর্তন নয়, বরং দেশের ঔপনিবেশিক ঐতিহ্যকে ঝেড়ে ফেলে, ভারতের নিজস্ব সংস্কৃতিগত ও ঐতিহাসিক পরিচয়কে আরও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করার একটি পদক্ষেপ।
তবে, বিরোধী দলগুলি এই দাবিকে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে দেখছে এবং মনে করছে, সরকার এইভাবে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে।
তাদের মতে, এটি লোকসভা নির্বাচনের আগে ‘ভারত বনাম ইন্ডিয়া’ বিতর্ককে উসকে দিয়ে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা মাত্র। অন্যদিকে, বিজেপি সমর্থকরা বলছেন, এটি জাতীয় সংস্কৃতিকে গুরুত্ব দেওয়ার একটি উদ্যোগ, যাতে দেশের ঐতিহ্য রক্ষা করা যায়।
Leave a comment
Leave a comment