সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়
হাইকোর্টের নির্দেশের পরেও রাজ্যে নিষিদ্ধ ওবিসি তালিকার মাধ্যমে নিয়োগ। রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে ভৎসনা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের। ভুল স্বীকার করে এ যাত্রায় রক্ষা মুখ্য সচিবের। হাইকোর্টের নির্দেশনামার নির্যাস নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির কারণেই সমস্যা হয়েছে। এবার সমস্ত সংশয় দূর হয়েছে, ভুল সংশোধনের জন্য পদক্ষেপ করা হবে। ভবিষ্যতে এ ধরনের ভুল আর হবে না। এই মর্মে ডিভিশন বেঞ্চের কাছে ভুল স্বীকার করে পদক্ষেপের আশ্বাস মুখ্য সচিব মনোজ পন্থের।মুখ্যসচিবের পদক্ষেপ হলফনামায় জানাতে নির্দেশ হাইকোর্টের। ২ এপ্রিলের মধ্যে জানাতে নির্দেশ বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা ডিভিশন বেঞ্চের। ২০১০ আগের OBC শংসাপত্র দেখে নিয়োগ প্রক্রিয়া করতে পারে রাজ্য। নতুবা রায় মেনে নিয়োগ করতে পারে রাজ্য। মুখ্যসচিব কে এজলাসে রেখে বার্তা হাইকোর্টের।
১২ লাখ OBC শংসাপত্র বাতিল মামলায় রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ আজ কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার ডিভিশন বেঞ্চে ভার্চুয়াল হাজিরা দেন।
মুখ্যসচিবের কাছে বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা জানতে চান “আপনারা বার বার কোর্টে আশ্বাস দেওয়ার পরেও হাইকোর্টের নির্দেশ ভেঙে কীভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে?
মুখ্য সচিবের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই রাজ্যের বিভিন্ন দপ্তরের ওপর ?” উত্তরে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ বলেন “আমরা বারংবার আদালতের নির্দেশ সব বিভাগে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। তারপরেও কিছু বুঝতে ভুল হয়েছে সম্ভবত । তবে আর কোনও সংশয় নেই। আর হাইকোর্টের নির্দেশ ভেঙে নিয়োগ হবে না।” যদিও মুখ্য সচিবের বক্তব্য সম্পূর্ণ সন্তুষ্ট হতে পারেননি বিচারপতিরা।
বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা মুখ্যসচিবের উদ্দেশ্যে জানতে চান “১০ টা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি তারপরেও কি করে জারি হয়? সচিব হিসেবে আপনি রাজ্যের মাথায় বসে থাকার পরেও আপনার অধস্তনরা আপনার কথা শুনছে না! এটা আমাদের কাছে যন্ত্রণার। সরকারি আইনজীবী এখানে একাধিক হলফনামা দিয়ে আশ্বাস দিয়েছেন, অথচ রাজ্য সরকার তার পাশে নেই ? এটা হচ্ছে! যদি কেউ আপনাদের নির্দেশ না মানে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কেনো ব্যাবস্থা নেবেন না? অন্তত সেই অফিসারদের ডেকে তাদের ব্যাখ্যা তলব করুন আপনি।”
প্রত্যুত্তরে মুখ্যসচিব জানান
“আর নির্দেশের নির্যাস বোঝায় ভুল হবে না। আমরা পদক্ষেপ করবো।” বিচারপতি মান্থা বলেন
” আমরা আগেও করেছি, আবার স্পষ্ট করে দিচ্ছি, আমরা নিয়োগ বন্ধ করতে বলিনি। নির্দিষ্ট ভাবে ২০১০ সালের আগের পদ্ধতিতে নিয়োগে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। ওই সব অফিসারদের শো কজ করে ব্যাখ্যা আপনার চাওয়া উচিত।”
অন্যদিকে মামলাকারীর আইনজীবী সুবীর স্যানাল আদালতকে জানান,
হাইকোর্টের অর্ডারের জুজু দেখিয়ে সব নিয়োগ বন্ধ বলে প্রচার করা হচ্ছে। হাইকোর্ট প্রশাসনও হাইকোর্টের অর্ডার না মেনে নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এদিকে হাইকোর্ট প্রশাসনও এই রায় না মানায় আদালত অবমাননার ফাঁদে পড়েছে। মামলাকারীর আইনজীবীর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে দুই বিচারপতি জানান, হাইকোর্ট প্রশাসন যদি নির্দেশ না মানে তাহলে রাজ্যের দপ্তরগুলো নির্দেশ মানবে এমনটা আশা করবো কি করে! আপনারা এখনই সংশোধনী বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আপাতত ২ এপ্রিল পর্যন্ত সব নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রাখার কথা বলুন।
হাইকোর্টের নির্দেশের ভুল ব্যাখা করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বন্ধে কি কি পদক্ষেপ হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে হাইকোর্ট প্রশাসনকেও। ২ এপ্রিলের মধ্যে পেশ করতে হবে হলফনামা।