পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দ্বীপ গ্রিনল্যান্ডের ভোটের ফলাফলের দিকে তাকিয়েছিল গোটা দুনিয়া।কারণ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ডকে দখল করে নেওয়ার হুঁশিয়ারির পর সেই দ্বীপাঞ্চলের মানুষজন তাঁদের ভোটে কী প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে তা জানতে উন্মুখ হয়ে ছিল গোটা বিশ্ব।অবশেষে জানা গেল কিছুটা ট্রাম্পের মুখে ঝামা ঘসে দিয়েই মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত সংসদীয় নির্বাচনে জয়লাভ করেছে গ্রিনল্যান্ডের ডোনাল্ড ট্রাম্প-বিরোধী মধ্য- ডানপন্থী দল ডেমোক্র্যাটস পার্টি। প্রাথমিক সরকারি ফলাফল অনুযায়ী, বামপন্থী শাসক দলকে পিছনে ফেলে মধ্য- ডানপন্থী দল ডেমোক্রাটিক পার্টি ২৯.৯% ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছে।বিরোধী দল নালেরাক, যা ডেনমার্কের সঙ্গে সম্পর্ক দ্রুত ছিন্ন করার প্রচারণা চালিয়েছিল, ২৪.৫% ভোট পেয়েছে। বর্তমান শাসক দল ২১.৪% ভোট নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে।
গ্রিনল্যান্ড চলে কেমন করে?
আসলে ডেনমার্কের তত্ত্বাবধানে স্বায়ত্ত্বশাসন ভোগ করে গ্রিনল্যান্ড।ডেনমার্কের মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় ৩০০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই চির তুষার ভূমি।৫৬ হাজার জনসংখ্যার এই বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপ প্রায় ৩০০ বছর ধরে কোপেনহাগেনের নিয়ন্ত্রণে। তবে সেখানে একটি স্বাধীন সরকার আছে। তবে বিদেশনীতি, সামরিক নীতি এবং অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করে ডেনমার্ক। গ্রিনল্যান্ডে মোট ভোটদাতার সংখ্যা ৪০ হাজার। পার্লামেন্টে আসন ৩১টি। ভোটদাতারা এই ভোটের মাধ্যমে পার্লামেন্টের প্রতিনিধিদের নির্বাচিত করেন। সেই নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই ঠিক করেন পরবর্তী পদক্ষেপ।দীর্ঘদিন ধরেই গ্রিনল্যান্ডের এক অংশের মানুষ পূর্ণ স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের দাবি করছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণার পর এই দাবি আরও জোরালো হয়েছে। ডেনমার্কের তত্ত্বাবধানেই হয় ‘গ্রিনল্যান্ড স্বশাসিত অঞ্চলের’ আইনসভার নির্বাচন। ৩১ আসনের গ্রিনল্যান্ড পার্লামেন্টের নির্বাচনে ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৪৪ হাজার। পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের জন্য ম্যাজিক ফিগার হল ১৬।
কেন গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবারের ভোট?
পরিবেশের দিক থেকে গ্রিনল্যান্ড অত্যন্ত সংকটে। বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে বরফ গলে যাচ্ছে। ভেঙে পড়ছে হিমবাহ। এই পরিস্থিতিতে খনিজ তোলা শুরু হলে পরিবেশের আরো ক্ষতি হবে বলে মনে করা হচ্ছে। অভিযোগ যে গ্রিনল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ তেল, খনিজ, সোনা, ইউরেনিয়াম এবং জিঙ্ক সঞ্চিত আছে। অ্যামেরিকা এই খনিজ নিজেদের দখলে নিতে চায়। সে কারণেই গ্রিনল্যান্ড অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে ট্রাম্প এতটা আগ্রহী। বস্তুত, ২০০৯ সাল থেকে পূর্ণ সার্বভৌম রাষ্ট্রের দাবি জানাচ্ছে গ্রিনল্যান্ড। তারা ডেনমার্ক থেকেও আলাদা হয়ে যেতে চাইছে।ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ড হস্তগত করার উদ্যম নিতেই আলাদা হওয়ার দাবি আরও ডালপালা মেলেছে। জনমত সমীক্ষায় স্পষ্ট দেখা গেছে গ্রিনল্যান্ডের অধিকাংশ মানুষ অ্যামেরিকার অংশই হতে চান না, তাঁদের অনেকেই পূর্ণ স্বাধীনতার পক্ষে। ট্রাম্পের ‘রক্তচক্ষু’ উপেক্ষা করেই মঙ্গলবার গ্রিনল্যান্ডের আঞ্চলিক পার্লামেন্টের হওয়া ভোটগ্রহণে উত্তর দিয়েছে মানুষ।
কিসের পক্ষে রায় দিল গ্রিনল্যান্ড?
জানুয়ারিতে ড্যানিশ এবং গ্রিনল্যান্ডের বিভিন্ন সংবাদপত্র দ্বারা পরিচালিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ৮৫% গ্রিনল্যান্ডার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হতে চান না, প্রায় অর্ধেক বলেছেন যে ট্রাম্পের আগ্রহ একটি হুমকি।এ বারের নির্বাচনে যে মোট ছ’টি দলের প্রার্থীরা লড়ছেন তাদের মধ্যে চারটি দলই ডেনমার্কের নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গ্রিনল্যান্ডের পূর্ণ স্বাধীনতার পক্ষে। মানুষের ভোট পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প-বিরোধী মধ্য- ডানপন্থী দল সহ পূর্ণ স্বাধীনতার সমর্থক দলেরাই।কাজেই এ বারেও জোট সরকার হলেও তারা গাইবেন যেকোনও পরাধীনতা থেকে মুক্তির জয়গান।