পরিতোষ সাহা: বীরভূম
তৃণমূলের বিধায়ককেই ‘বয়কট’ করল তৃণমূল নেতৃত্ব।হাঁসনের তৃণমূল বিধায়ক ও পেশায় স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ অশোক চট্টোপাধ্যায়কে বয়কট করল রামপুরহাট ২ ব্লক তৃণমূল নেতৃত্ব।আর এই ব্লকের অধীনেই পড়ে তারাপীঠ।কার্যত তারাপীঠ যাওয়া বন্ধ বিধায়কের। গত দু’মাসে একবারও দলের বৈঠকে বা যোগদান পর্বে বিধায়ককে ডাকেনি ব্লক নেতৃত্ব।ফলে ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনের আগে শাসক দলের মধ্যে বড় ফাটল দেখা দিল।
রামপুরহাটের বাসিন্দা ও চিকিৎসক হওয়ার সুবাদে গত বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল নেতৃত্ব তাকে টিকিট দেয়।কারণ,তিনি চিকিৎসক হওয়ার জন্য তার পরিচিতি ছিল এলাকায়।পাশাপাশি বীরভূম জেলার এগারোটি বিধানসভার মধ্যে শুধুমাত্র হাঁসন বিধানসভা তৃণমূলের দখলে ছিল না।২০১৬-২০২১ সাল পর্যন্ত বা তার আগে এই বিধানসভাটি ছিল কংগ্রেসের দখলে।এই পাঁচ বছরে এই বিধানসভার বিধায়ক ছিলেন কংগ্রেসের বর্তমান জেলা সভাপতি মিল্টন রসিদ।এলাকায় তাঁর গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নাতীত। ফলে সেই বিধানসভাকে দখল করতে স্বয়ং তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারে বারে এসেছেন।সভা করেছেন।২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে হাঁসন বিধানসভা দখল করে তৃণমূল। বিধায়ক হন অশোক চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিধায়ক ও রামপুরহাট ২ ব্লক তৃণমূল নেতৃত্বের মধ্যে বড়সড় ফাটল দেখা দিয়েছে।ইতিমধ্যেই দু’তরফই জেলা নেতৃত্বকে বিষয়টি জানিয়েছে।
কিন্তু কেন? তৃণমূল সূত্রে জানা গেছে,গত ২৩ ডিসেম্বর তারাপীঠ মন্দির কমিটির সম্পাদক ও রামপুরহাট ২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি সুকুমার মুখোপাধ্যায় ঘনিষ্ট তারাময় মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রী সুজাতা মুখোপাধ্যায় স্ত্রী রোগের চিকিৎসা করাতে অশোক চট্টোপাধ্যায়ের কাছে যান।কিন্তু সেই চিকিৎসায় তিনি মারা যান।তারাপীঠের সেবাইতরা অশোক চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ দেখায়।কার্যত তারপর থেকেই অশোক চট্টোপাধ্যায়কে বয়কট করেছে রামপুরহাট ২ তৃণমূল ব্লক কমিটি।এমনকি গত ৬ ফেব্রুয়ারী তারাপীঠে মহা যোগদান অনুষ্ঠানেও বিধায়ককে ডাকা হয়নি।ফলে নিজের বিধানসভা ক্ষেত্রে প্রায় একঘরে বিধায়ক।অশোক চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ আমি এখনও একবছর এলাকার বিধায়ক।অনেকেই বিভিন্ন পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।দলকে সবটাই জানিয়েছি।দল যা নির্দেশ দেবে তেমন হবে।”যদিও তৃণমূলের রামপুরহাট ২ ব্লকের সভাপতি সুকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন,“ গত চার বছরে উনি সংগঠনের কিছুই দেখেননি।উনি শুধু ভাষণ দিয়েছেন।এই পরিস্থিতিতে এলাকায় উনি এলে সংগঠনের ক্ষতি হবে।”বছর ঘুরতেই বিধানসভা নির্বাচন।তার আগেই এই দ্বন্দ্ব। বীরভূম তৃণমূল কোর কমিটির চেয়ারম্যান বিকাশ রায় চৌধুরী বলেন,“ এই ব্যাপারে আমার কাছে কোন খবর নেই।খবর নিয়ে দেখব।আর যদি এই ঘটনা ঘটে থাকলে তা আলোচনার ভিত্তিতে মিটিয়ে নেওয়া হবে।”তবে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে আগে হাঁসন বিধানসভার বিধায়ক বনাম ব্লক সভাপতির লড়াই-এ মুচকি হাঁসছে বিজেপি। বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সাধারণ-সম্পাদক শ্যামসুন্দর গড়াঁই বলেন,“ এটা তৃণমূলের আভ্যন্তরীণ বিষয়।এখানে বিজেপির কোন ভূমিকা নেই।তবে এই লড়াই ভাগের।এখন তৃণমূল বিধায়ক নিজের এলাকায় ঢুকতে পারছেন না।ছাব্বিশের পর আর বিধানসভায় ঢুকতে পারবে না।”