সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়
বাড়ি বাড়ি নলবাহিত জল পৌঁছে দেওয়ার জন্য ‘জল জীবন মিশন’ প্রকল্পে এরাজ্যে কেন্দ্রীয় সদিচ্ছার অভাব ফুটে উঠল সরকারি পরিসংখ্যানে। রাজ্য সরকার সূত্রে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘জলস্বপ্ন’ প্রকল্প যা কেন্দ্রীয় সরকারের ‘জল জীবন মিশন’ নামে পরিচিত সেই প্রকল্পে ইন্দ্র ও রাজ্য যৌথ সহযোগিতার মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে। সরকারি তথ্য সূত্রে জানা গেছে,এই প্রকল্পের জন্য কেন্দ্রের শেয়ার অনুযায়ী যে প্রকল্প খরচ ধার্য করা হযেছে সে তুলনায় বরাদ্দের ব্যাপারে কেন্দ্র অত্যন্ত “কৃপণ”। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে এই জল জীবন মিশন প্রকল্পের জন্য কেন্দ্র মোট প্রকল্প খরচ ধার্য করেছিল ৫০৪৯.৯৮ কোটি টাকা। যদিও কেন্দ্রীয় সরকার এখনো পর্যন্ত বরাদ্দ করেছে ২৫২৪.৯৯ কোটি। শতাংশের বিচারে বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছে দেওয়ার এই প্রকল্পের জন্য এখনো পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প খরচের শেয়ার অনুযায়ী প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ বাজেট বরাদ্দ করেছে মোদি সরকার। পক্ষান্তরে, একই প্রকল্পের জন্য রাজ্য সরকারের শেয়ার অনুযায়ী প্রকল্প খরচ ধার্য করা হয়েছিল ৪৯৯০.৫২ কোটি টাকা। যার মধ্যে এখনো পর্যন্ত রাজ্য সরকার বরাদ্দ করেছে ৩৭৫৭.৪৫ কোটি টাকা। শতাংশের বিচারে মোট প্রকল্প খরচের রাজ্যের শেয়ার অনুযায়ী বরাদ্দ করা হয়েছে ৭৫ শতাংশেরও বেশি টাকা। অর্থাৎ রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় শেয়ারের বাইরে গিয়ে জল জীবন মিশন বা মুখ্যমন্ত্রীর জলস্বপ্ন প্রকল্পে অতিরিক্ত ১২৯১.৩৮ কোটি টাকা এখনো পর্যন্ত অতিরিক্ত বেশি খরচ করেছে। রাজ্য সরকারি কর্তা ব্যক্তিদের মতে, এই সরকারি পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট যে বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছে দেওয়ার মত জনহিতকর প্রকল্পের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের তুলনায় রাজ্যের সদিচ্ছা ও কাজের অগ্রগতি যথেষ্ট বেশি এবং জন উন্নয়নের ক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নরেন্দ্র মোদি সরকারের থেকে অনেকটাই এগিয়ে। পাশাপাশি জল জীবন মিশন প্রকল্প নিয়ে কেন্দ্র তথা রাজ্যের বিরোধী দল বিজেপি নানাভাবে রাজ্য সরকারকে অপদস্ত করার চেষ্টা করলেও এই প্রকল্প বাস্তবায়নে কেন্দ্রের সদিচ্ছা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সরকারি কর্তা ব্যক্তিরা। উল্লেখযোগ্য, এই জল জীবন মিশন প্রকল্প নিয়ে প্রথম থেকে কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কে যথেষ্ট জলঘোলা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রকল্প নিয়ে কিছু টেকনিক্যাল প্রশ্ন তোলেন এবং প্রথম থেকেই এই প্রকল্পে কেন্দ্রের অসহযোগিতার কথা জানিয়ে সরব হয়েছিলেন। এমনকি এ রাজ্যে জল জীবন মিশন প্রকল্পের জন্য কেন্দ্রীয় বরাদ্দ নিয়েও অসহযোগিতার অভিযোগ অগেই করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। যদিও কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে অভিযোগ উড়িয়ে বরং দেরিতে প্রকল্প শুরু করা হয়েছে বলেও কটাক্ষ করা হয় রাজ্যকে। অন্যদিকে রাজ্যের বিরোধীপক্ষ বিজেপি নেতৃত্ব বাড়ি বাড়ি জল পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে পদ্ধতিগত নানা ত্রুটি এমন কি বেশ কিছু ক্ষেত্রে দুর্নীতিরও অভিযোগ সামনে আনে।
‘জল জীবন মিশন’বা মুখ্যমন্ত্রীর ‘জলস্বপ্ন’ প্রকল্পে কেন্দ্র ও রাজ্যের শেয়ার অনুযায়ী প্রকল্প খরচ এবং বাজেট বরাদ্দে বৈষম্যের এই প্রামাণ্য তথ্য তুলে ধরে এবার পাল্টা রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলার প্রস্তুতিও নিচ্ছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল বলে জানা গেছে। তৃণমূল সুত্রে দাবি, সরকারি পরিসংখ্যানই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে জন উন্নয়নের ক্ষেত্রে বা রাজ্যবাসীর উন্নয়ন প্রকল্পে মোদি সরকার নয়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সব সময় মানবিক এবং অন্যান্যদের থেকে এগিয়ে থাকেন।