জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেস রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বর্তমান অবস্থা সরেজমিনে পরিদর্শনের জন্য বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে আসছেন। সফরের মূল লক্ষ্য হচ্ছে রোহিঙ্গা সংকটের সার্বিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করা এবং সংকট সমাধানে জাতিসংঘের ভূমিকা আরও কার্যকর করার উপায় নিয়ে আলোচনা করা।
এ সফরে তিনি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন, যেখানে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন এবং সংকট মোকাবিলার দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। একই সঙ্গে, তিনি সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি এবং সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে মতবিনিময় করবেন।
বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে আসছে, এবং জাতিসংঘ এ সংকট মোকাবিলায় সবসময় সহায়তা করে যাচ্ছে। গুতেরেসের এই সফর রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের পথকে আরও সুস্পষ্ট করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গত মাসে গুতেরেস এক চিঠিতে ইউনূসকে জানান, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে মায়ানমারে অনুকূল পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য জাতিসংঘ নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এই লক্ষ্যে তাঁর বাংলাদেশ সফরকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
চার দিনের সফরের প্রথম দিনে গুতেরেস ঢাকায় সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। শুক্রবার জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেস কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করবেন। তিনি সেখানে গিয়ে বাস্তব পরিস্থিতি স্বচক্ষে দেখবেন এবং শরণার্থীদের দুঃখ-দুর্দশার কথা সরাসরি শুনবেন। এ সময় তিনি স্থানীয় প্রশাসন, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও ত্রাণ সহায়তা প্রদানকারী সংগঠনগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করবেন, যাতে সংকট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যায়। একই দিনে সন্ধ্যায়, পবিত্র রমজান উপলক্ষে তিনি শরণার্থীদের সঙ্গে ইফতারে অংশ নেবেন, যা তাদের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সংহতির প্রকাশ হিসেবেও দেখা হচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরে গুতেরেস শরণার্থী সমস্যা এবং মানবাধিকার ইস্যুতে সক্রিয়ভাবে কাজ করে আসছেন। ২০০৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি, যেখানে বৈশ্বিক শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। ২০১৭ সালে জাতিসংঘের মহাসচিবের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই আন্তোনিয়ো গুতেরেস রোহিঙ্গা সংকটকে অগ্রাধিকার দিয়ে দেখছেন। সংকট নিরসনে তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে নিয়মিত বিভিন্ন কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিয়েছেন এবং জাতিসংঘের মাধ্যমে কার্যকর সমাধানের পথ খোঁজার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এর আগে, ২০১৮ সালে তিনি বাংলাদেশ সফর করেছিলেন, যেখানে তিনি কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির ঘুরে দেখেন এবং বিশ্ববাসীর কাছে রোহিঙ্গাদের মানবেতর পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরেন। এবারও তাঁর সফরকে কেন্দ্র করে কূটনৈতিক মহলে আলোচনা চলছে, বিশেষ করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে নতুন কোনো অগ্রগতি বা আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের ঘোষণা আসতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।
এদিকে, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের প্রসঙ্গে বরাবরই উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন মুহাম্মদ ইউনূস। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে গুতেরেসকে পাঠানো এক চিঠিতে তিনি জানান, মায়ানমারের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এখনো রোহিঙ্গাদের ফেরার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়নি, যা সংকট সমাধানে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
Leave a comment
Leave a comment