মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাব মত ইউক্রেন অস্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে সহমত হওয়ার পর গোটা বিশ্ব তাকিয়ে ছিল রাশিয়ার দিকে। কিন্তু অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানই করে দিল ক্রেমলিন। রাশিয়ার সিনিয়র ক্রেমলিন কর্তা প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সহকারী ইউরি উশাকভ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের প্রস্তাবিত অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির ধারণা বাতিল করে দিয়েছেন। রাশিয়ান মিডিয়া এই তথ্য জানিয়েছে।
ইউরি উশাকভ রাশিয়া-১ টিভি চ্যানেলকে একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে রাশিয়া শুধুমাত্র ইউক্রেন সংঘাতের একটি দীর্ঘমেয়াদী সমাধানে আগ্রহী। ইন্টারফ্যাক্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, উশাকভ বলেছেন, “আমরা বিশ্বাস করি যে আমাদের লক্ষ্য হলো একটি দীর্ঘমেয়াদী শান্তিপূর্ণ সমাধান, আমরা এর জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। এমন একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান, যা আমাদের দেশের বৈধ স্বার্থ এবং আমাদের সুপরিচিত উদ্বেগগুলিকে বিবেচনা করে।”
ইউরি উশাকভ আরও বলেন, “আমার মনে হয়, এই পরিস্থিতিতে শান্তিপূর্ণ কর্মকাণ্ডের ভান করা কোনও পদক্ষেপ কারও প্রয়োজন নেই।” অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি সম্পর্কে রাশিয়ার অবস্থান হলো, “এটি ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনীর জন্য অস্থায়ী বিরতি ছাড়া আর কিছুই নয়।” তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজের সাথে ফোনে কথা বলার পর এই মন্তব্য করেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন “দীর্ঘমেয়াদী শান্তিপূর্ণ সমাধান” বিষয়ে কোনও বার্তা দিতে পারেন বলেও জানিয়েছেন উশাকভ।
এমন ঘটনার পর রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তি কীভাবে হবে তা নিয়ে একটা বিরাট প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হল। সৌদি আরবে ভালয় ভালয় শেষ হয়েছিল ইউক্রেন যুদ্ধ থামানোর আলোচনা। জেদ্দায় যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে সম্মত হয়ে ট্রাম্পের সমর্থন আদায় করে নেন জেলেনেস্কি। আমেরিকার তরফে জানানো হয় এ বার রাশিয়াকেও যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মানতে বলবে ওয়াশিংটন। সেই মতই কাজ শুরু করে ট্রাম্প প্রশাসন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, “ আশা করি আমরা রাশিয়ার কাছ থেকে যুদ্ধবিরতি মেনে নেওয়ার অবস্থান পেতে পারব।” তিনি আরও বলেন, “এবং যদি আমরা তা পাই, আমি মনে করি এই ভয়াবহ রক্তপাত বন্ধ করার পথে ৮০ শতাংশ এগিয়ে যাব।” যদিও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন যে তিনি এখনও রাশিয়াকে বিশ্বাস করেন না।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ভ্লাদিমির পুতিনের সহমত ও সখ্যতা ইতিমধ্যেও গোটা বিশ্বের চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে। তবে ট্রাম্প নিজে কবে পুতিনকে ফোন করে এই বিষয়ে কথা বলবেন তা জানাননি। তিনি আগেই জানিয়েছেন, “এখন সিদ্ধান্ত রাশিয়ার হাতে। আমি কিছু ইতিবাচক বার্তা পেয়েছি, কিন্তু ইতিবাচক বার্তার মানে কিছুই নয়। এটি একটি অত্যন্ত গুরুতর পরিস্থিতি, এটি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করতে পারে।”
পাশাপাশি ট্রাম্প হুঁশিয়ারিও দিয়ে রেখেছেন যে রাশিয়া যদি যুদ্ধবিরতিতে স্বাক্ষর না করে তবে তিনি মস্কোর উপর ‘ধ্বংসাত্মক’ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারেন। তিনি বলেছেন, “আমি আর্থিকভাবে এমন কিছু করতে পারি যা রাশিয়ার জন্য খুব খারাপ হবে। আমি তা করতে চাই না কারণ আমি শান্তি চাই।” ট্রাম্প আরও বলেন, “আমি আশা করি যে এটি প্রয়োজন হবে না।” তবে এবার রাশিয়া এই অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে রাজি না হওয়ার ফল কোন দিকে গড়ায় সেদিকেই তাকিয়ে আছে বিশ্ব।
Leave a comment
Leave a comment