সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়
অনিয়ম নয়, বরং গত বিধানসভা নির্বাচনে হারের প্রতিশোধ নিতেই কেন্দ্রীয় সরকার একশ দিনের কাজ, গ্রামীণ আবাস, সড়ক যোজনার মতো কেন্দ্রীয় প্রকল্পে রাজ্যকে টাকা দেওয়া বন্ধ করে রেখেছে। এই অভিযোগ তুলে রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রাম উন্নয়ন মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার জানান, আগামী অর্থ বর্ষে গ্রাম বাংলার আরও ১২ হাজার পরিবারকে বাংলার বাড়ি প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পঞ্চায়েত মন্ত্রী জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা গ্রামীণ প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকার অনুদান না দেওয়ায় রাজ্য সরকার নিজের টাকায় বাংলার বাড়ি গ্রামীণ নামে নতুন আবাসন প্রকল্প শুরু করেছে। এই প্রকল্পে ১২ হাজার পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য ১৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা প্রয়োজন। ইতিমধ্যেই এই প্রকল্পে ৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা মঞ্জুর করা হয়েছে। আগামী আর্থিক বছরে এই প্রকল্পের জন্য ১৫ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারের আরও অভিযোগ, “ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট নিয়ে রাজ্যের বিরুদ্ধে অসত্য অভিযোগ তুলছে কেন্দ্র। মিথ্যাচার করে কেন্দ্রীয় সরকার এরাজ্যের গরীব মানুষকে আইনসিদ্ধ ন্যায্য প্রাপ্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে।” তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বলেছেন পশ্চিমবঙ্গে ২০ লাখ ভুয়ো জব কার্ড আছে। কিন্তু বিজেপি শাসিত অন্যান্য রাজ্যে ভুয়ো জব কার্ড বাতিলের সংখ্যা অনেক বেশি। পরিসংখ্যান তুলে ধরে পঞ্চায়েত মন্ত্রী জানান, ২০২০-‘২১ থেকে ২০২৩-‘২৪ পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশে ৮৯ লক্ষ ৬৭ হাজার ৪০৭ টি, অন্ধ্র প্রদেশে ৩৪ লাখ ৪১ হাজার ৫২৮ টি, মধ্যপ্রদেশে ৩২ লাখ ২৪ হাজার ১৮৯ টি জব কার্ড বাতিল হয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে ২৩ লাখ ৯৪ হাজার ৩৪২টি জব কার্ড বাতিল করা হয়েছে। এমনকি সংসদের স্থায়ী কমিটিও বলেছে রাজ্যকে ১০০ দিনের কাজের বকেয়া টাকা দিতে হবে। ১০০ দিনের প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকার অনুদান বন্ধ করায় রাজ্য সরকার ওই প্রকল্পের জব কার্ড হোল্ডারদের নিয়ে কর্মশ্রী প্রকল্প চালু করেছে। এর উদ্দেশ্য রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে রূপায়িত কাজের মাধ্যমে প্রতি আর্থিক বছরে রাজ্যের জব কার্ড হোল্ডার পরিবারগুলিকে কমপক্ষে ৫০ দিনের কাজ দেওয়া। চলতি আর্থিক বছরের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত এই প্রকল্পে ৩০ কোটির বেশি শ্রমদিবস সৃষ্টি হয়েছে বলেও জানান পঞ্চায়েত মন্ত্রী। ওই প্রকল্পে এপর্যন্ত সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ করেছে সরকার। জব কার্ড ধারী পরিবার গুলির গড়ে ৫৬ দিনের কাজ শেষ হয়েছে। আগামী আর্থিক বছরে কর্মশ্রী প্রকল্পের অধীনে ৩৩ কোটি শ্রমদিবস তৈরীর লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছে রাজ্য পঞ্চায়েত গ্রাম উন্নয়ন দপ্তর। পাশাপাশি পথশ্রী প্রকল্পে দেড় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে আগামী আর্থিক বছরের জন্য পঞ্চায়েত ও গ্রাম উন্নয়ন দপ্তরে ৪৪ হাজার ১২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে রাজ্য সরকার। যদিও বিজেপি পরিষদীয় দলের নেত্রী অগ্নিমিত্রা পালের দাবি, “২৬ এর নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে গ্রাম বাংলার উন্নয়নের নামে এই সব কিছুই পরিসংখ্যানের ফুলঝুরি মাত্র। গ্রামীণ মানুষের আর্থ-সামাজিক মান উন্নয়ন এবং দারিদ্র দূরীকরণের ক্ষেত্রে কাজের কাজ কিছুই হয়নি হবেও না।”