যক্ষ্মা মুক্ত অভিযানে সাফল্যের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রশংসা করল কেন্দ্রীয় সরকার। রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগ যক্ষ্মা মুক্তির লক্ষ্যে যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তা প্রশংসার দাবিদার বলে মন্তব্য করেছে কেন্দ্র। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই সাফল্য রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতির ক্ষেত্রে একটি বড় মাইলফলক হিসাবে চিহ্নিত হচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গ সরকার যক্ষ্মা মুক্ত অভিযানে দীর্ঘদিন ধরে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বিশেষত, গ্রামীণ এবং শহুরে অঞ্চলে যক্ষ্মা নিরাময়ের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা এবং ওষুধ সরবরাহের পাশাপাশি সচেতনতামূলক কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে প্রতিটি এলাকায় যক্ষ্মার লক্ষণ চিহ্নিত করার কাজ করা হয়েছে। আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য মোবাইল ক্লিনিক এবং স্বাস্থ্য শিবিরের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, যক্ষ্মা মুক্তির লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে আরও উদ্যোগ নেওয়া হবে।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার যেভাবে যক্ষ্মা মুক্তির লক্ষ্যে কাজ করেছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। তিনি বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রচেষ্টা ও সাধারণ মানুষের সহযোগিতার কারণেই এই সাফল্য এসেছে। যক্ষ্মা আক্রান্তদের নিরাময়ের পাশাপাশি সচেতনতার ক্ষেত্রেও রাজ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।” তিনি আরও জানান, পশ্চিমবঙ্গের এই সাফল্য গোটা দেশের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে যক্ষ্মা আক্রান্তদের মধ্যে নিরাময়ের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় এই বছর যক্ষ্মা নিরাময়ের হার প্রায় ২০% বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নয়ন এবং গ্রাসরুট পর্যায়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের কার্যকর ভূমিকার কারণে এই সাফল্য সম্ভব হয়েছে। এছাড়া, রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর নিয়মিতভাবে যক্ষ্মা আক্রান্তদের জন্য বিনামূল্যে ওষুধ ও চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করছে।
রাজ্যের স্বাস্থ্য মন্ত্রী জানিয়েছেন, “যক্ষ্মা মুক্তির লক্ষ্যে রাজ্য সরকার প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছে। গ্রামীণ এবং শহরাঞ্চলে যক্ষ্মা চিহ্নিত করার জন্য বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি, স্বাস্থ্য কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে যাতে তারা আরও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে পারে। রাজ্যের স্বাস্থ্য কর্মীরা ঘরে ঘরে গিয়ে যক্ষ্মার লক্ষণ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করছেন এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করাচ্ছেন।”
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই উদ্যোগ ভবিষ্যতে রাজ্যের যক্ষ্মা পরিস্থিতি আরও উন্নত করবে। যক্ষ্মা আক্রান্তদের দ্রুত শনাক্তকরণ এবং চিকিৎসার মাধ্যমে যক্ষ্মা নিরাময়ের হার আরও বৃদ্ধি পাবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এক কর্মকর্তা জানান, “যক্ষ্মা মুক্ত অভিযানে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ভূমিকা প্রশংসনীয়। কেন্দ্র এই মডেলকে দেশের অন্যান্য রাজ্যেও কার্যকর করার পরিকল্পনা করছে।”
রাজ্যের যক্ষ্মা মুক্ত অভিযানে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হল সচেতনতা বৃদ্ধি। রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগ বিভিন্ন স্কুল, কলেজ এবং জনবহুল এলাকায় যক্ষ্মা সম্পর্কে সচেতনতা কর্মসূচি পরিচালনা করছে। যক্ষ্মা নিরাময়ের জন্য বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ এবং রোগীদের পুষ্টিকর খাবার প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া, যক্ষ্মা আক্রান্তদের মানসিকভাবে সমর্থন করার জন্য বিশেষ পরামর্শ সেশনের আয়োজন করা হচ্ছে।
যক্ষ্মা মুক্ত অভিযানে রাজ্যের স্বাস্থ্য কর্মীদের অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। স্বাস্থ্য কর্মীরা নিয়মিতভাবে যক্ষ্মা আক্রান্তদের ঘরে ঘরে গিয়ে চিকিৎসা দিচ্ছেন এবং তাদের চিকিৎসা সংক্রান্ত পরামর্শ দিচ্ছেন। এছাড়া, রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যক্ষ্মা আক্রান্তদের জন্য আলাদা বিভাগ চালু করা হয়েছে। এই বিভাগে রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা এবং ওষুধ প্রদান করা হচ্ছে।
যক্ষ্মা মুক্ত অভিযানে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সাফল্য সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “রাজ্যের প্রতিটি মানুষ যাতে ভালো স্বাস্থ্য পরিষেবা পায়, তা নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য। যক্ষ্মা মুক্তির ক্ষেত্রে রাজ্যের সাফল্য আমাদের আরও উৎসাহ দিচ্ছে। আমরা এই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব এবং নিশ্চিত করব যে আগামী দিনে রাজ্য সম্পূর্ণভাবে যক্ষ্মা মুক্ত হবে।”
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই সাফল্যের কথা জানতে পেরে কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের এই মডেল দেশের অন্যান্য রাজ্যে কার্যকর করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ সরকার যেভাবে যক্ষ্মা মুক্তির জন্য কাজ করেছে, তা দেশের অন্যান্য রাজ্যের জন্য মডেল হয়ে থাকবে। রাজ্যের এই সাফল্য ভবিষ্যতে যক্ষ্মা মুক্ত ভারতের লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।