সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো সেনাবাহিনী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের মধ্যে দূরত্ব বাড়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে বিশ্লেষকদের মত। পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে, সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ জামান সোমবার ঢাকার সেনানিবাসে উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
বাংলাদেশে সেনাবাহিনী ও ছাত্র আন্দোলনের সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, কারণ কিছু ঘটনা টানাপোড়েনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এই পরিস্থিতি নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের আলোচনা বাড়ছে। অনেকে মনে করছেন, সেনাবাহিনীর সাম্প্রতিক কার্যক্রম ও ছাত্র আন্দোলনের প্রতিক্রিয়া ভবিষ্যৎ পরিস্থিতিকে আরও স্পষ্ট করে তুলবে।
এই বৈঠককে অনেকেই বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সম্পর্ক কোন দিকে এগোচ্ছে, তা নিয়ে নানা জল্পনা তৈরি হয়েছে। তবে, এই বিষয়ে সেনাবাহিনীর কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য এখনো পাওয়া যায়নি।
একটি সেনা সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ‘প্রথম আলো’ জানিয়েছে যে সাম্প্রতিক এক বৈঠকে সেনাপ্রধান দেশে ভুয়া খবর ও গুজব ছড়ানোর ঘটনায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি, তিনি সেনা কর্মকর্তাদের ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি সামলানোর নির্দেশ দেন।
অন্যদিকে, এই বৈঠককে কেন্দ্র করে নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দুই শীর্ষ নেতার মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। প্রধান সংগঠক হাসনাত আবদুল্লার মতে, সেনাবাহিনী আওয়ামী লীগের কিছু পরিচ্ছন্ন ইমেজের নেতাকে রাজনীতিতে পুনরায় যুক্ত করার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে।
তবে দলের অপর নেতা সারজিস আলম এই অভিযোগ মানতে নারাজ। তিনি বলেন, সেনার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রয়াস কি চলছে, তা নিয়ে ঢাকার রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সমন্বয়ে এনসিপি গঠিত হয়। গত জুলাই ও অগস্টের আন্দোলনে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রক্রিয়ায় সেনাবাহিনীর ভূমিকা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। একই সঙ্গে, কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে এনসিপির ঘনিষ্ঠতা লক্ষ করা যায়।
রাজনৈতিক পরিবর্তনের এই সময়ে সংগঠনটি বিভিন্ন আলোচনায় সক্রিয় থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সেনাবাহিনী ও ছাত্রনেতাদের এই সম্পর্ক দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন দিক উন্মোচন করেছে, যা ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
তবে পরে উভয় পক্ষের মধ্যে মতপার্থক্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সেনাপ্রধানের বক্তব্য বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি ক্ষমতার ভারসাম্যে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে পারে।
সেনাপ্রধান এক বৈঠকে জানান, দেশে গুজব ছড়ানোর প্রবণতা বাড়লেও জরুরি অবস্থা জারি করা হয়নি। তিনি সতর্ক করেন যে, বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে পরিস্থিতি অস্থির করার প্রচেষ্টা চলছে। সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর প্রধান লক্ষ্য দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। প্রথম আলো-এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সেনাপ্রধান জনগণের সেবাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
পাশাপাশি, তিনি দেশকে স্থিতিশীল রাখতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন এবং নিশ্চিত করেন যে, সেনাবাহিনী সর্বদা জনগণের পাশে রয়েছে। পাশাপাশি, সেনা কর্মকর্তাদের সতর্ক করে বলেন, উস্কানির ফাঁদে পা দেওয়া চলবে না, যাতে কারও উদ্দেশ্য সফল না হয়।