ভারতের রাজনৈতিক মহলে চিরাগ পাসওয়ান এক গুরুত্বপূর্ণ নেতা, বিশেষ করে বিহারের রাজনীতিতে তাঁর অবস্থান সবসময় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তিনি উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ নাকি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (RSS) প্রধান মোহন ভাগবতের মতামতকে বেশি গুরুত্ব দেন। চিরাগ কৌশলী ভঙ্গিতে উত্তরে জানান, তিনি সবসময় দলের এবং জোটের স্বার্থকে গুরুত্ব দেন। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, চিরাগের এই মন্তব্যের পেছনে গভীর কৌশল লুকিয়ে রয়েছে।
চিরাগ পাসওয়ান বরাবরই এনডিএ জোটের অন্যতম শক্তিশালী শরিক। তাঁর দল লোক জনশক্তি পার্টি (LJP) বিজেপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। বিহারে বিজেপির সাফল্যে LJP-এর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। চিরাগের কৌশল হল বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এবং RSS-এর আদর্শের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা। মোহন ভাগবত বিজেপির নীতিনির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ফলে চিরাগের জন্য মোহন ভাগবতের মতামত বেশি তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
যোগী আদিত্যনাথ বর্তমানে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এবং হিন্দুত্ব রাজনীতির অন্যতম প্রধান মুখ। কঠোর প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত ও হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভাবধারার জন্য তিনি পরিচিত। অন্যদিকে, মোহন ভাগবত ভারতের বৃহত্তম হিন্দুত্ববাদী সংগঠন RSS-এর প্রধান। RSS সরাসরি রাজনৈতিক দলে না থাকলেও বিজেপির কৌশল নির্ধারণে তাদের প্রভাব অসামান্য। চিরাগ যদি ভবিষ্যতে বিজেপির সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চান, তাহলে মোহন ভাগবতের মতামতকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
চিরাগ পাসওয়ানের রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে বিশ্লেষকদের বিভিন্ন মত রয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন, বিহারে বিজেপির শক্তি বাড়াতে হলে চিরাগকে RSS-এর ভাবধারা মেনে চলতে হবে। কারণ বিহারে বিজেপির সাফল্যের পেছনে RSS-এর সাংগঠনিক শক্তি বড় ভূমিকা রাখে। আবার কেউ মনে করছেন, যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করলে চিরাগ উত্তরপ্রদেশ এবং অন্যান্য হিন্দুত্বপ্রধান রাজ্যে নিজের প্রভাব বাড়াতে পারবেন।
চিরাগের কৌশল এখন দ্বিমুখী। একদিকে তিনি মোহন ভাগবতের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের আস্থা অর্জন করতে চাইছেন। অন্যদিকে, যোগী আদিত্যনাথের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে হিন্দুত্ববাদী ভোটব্যাংকে প্রবেশ করতে চাইছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, চিরাগ এই দুই শক্তির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারলে তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে।
বিহারে চিরাগের দল LJP মূলত দলিত এবং পশ্চাদপদ সম্প্রদায়ের মধ্যে জনপ্রিয়। এই ভোটব্যাংক ধরে রাখতে হলে বিজেপির সমর্থন গুরুত্বপূর্ণ। তবে RSS-এর মতাদর্শ এবং যোগী আদিত্যনাথের হিন্দুত্ব রাজনীতির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে না পারলে চিরাগের জন্য রাজনৈতিক ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। চিরাগ ইতিমধ্যে বিহারে বিজেপির সঙ্গে মিলে বিভিন্ন রাজনৈতিক কৌশল গ্রহণ করেছেন। ভবিষ্যতে মোহন ভাগবতের সমর্থন পেলে চিরাগের দল আরও শক্তিশালী হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
যদিও চিরাগ এখনো স্পষ্ট করে বলেননি যে তিনি যোগী আদিত্যনাথ না মোহন ভাগবতের মতামতকে বেশি গুরুত্ব দেন, তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মোহন ভাগবতের মতামতই চিরাগের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বিজেপির কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারণে RSS-এর ভূমিকা অনেক বড়। যোগী আদিত্যনাথের জনপ্রিয়তা চিরাগকে হিন্দুত্ববাদী সমর্থনের দিকে টানতে পারে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে RSS-এর সমর্থন ছাড়া চিরাগের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ মজবুত হবে না।
চিরাগ পাসওয়ান ইতিমধ্যে RSS-এর বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছেন। তিনি বিহারে RSS-এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভবিষ্যতে চিরাগ যদি বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সমর্থন নিশ্চিত করতে পারেন, তাহলে বিহারে তাঁর অবস্থান আরও শক্তিশালী হবে। তবে এর জন্য তাঁকে যোগী আদিত্যনাথ এবং মোহন ভাগবতের মতের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।
উপসংহারে বলা যায়, চিরাগ পাসওয়ানের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে যোগী আদিত্যনাথ ও মোহন ভাগবতের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের ওপর। যোগীর জনপ্রিয়তা এবং ভাগবতের আদর্শের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারলে চিরাগের দল বিহারে শক্তিশালী হয়ে উঠবে। তবে এই ভারসাম্য রক্ষা করতে ব্যর্থ হলে চিরাগের জন্য রাজনৈতিক ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। সময়ই বলে দেবে চিরাগ কোন পথ বেছে নেন এবং এই কৌশল তাঁকে কতটা সাফল্য এনে দেয়।