অভিজিৎ বসু
চারিদিকেই এখন বদলে যাওয়ার হিড়িক পড়ে গেছে গোটা বিশ্ব জুড়েই। আট থেকে আশি সবাই এখন গিবলি জ্বরে আক্রান্ত। সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে এখন শুধুই বদলে যাওয়ার ছবি থিক থিক করছে আর গিজ গিজ করছে চারিদিকে। পাড়ার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা পল্টু বদলে যাচ্ছে এক নিমিষে ঝাঁ করে কাউকে কিছু না বলেই। পাশের বাড়ির লো কাট ব্লাউজ পড়া, মুখে স্নো পাউডার মাখা কল্পনা বৌদি যে বয়স লুকিয়ে প্রেম করার চেষ্টা করছে এই পড়ন্ত যৌবনেও, সেও কেমন ঝাঁ করে বদলে নিচ্ছে এক লহমায় নিজেকে এই ভার্চুয়াল দুনিয়ায়। সদ্য কলেজে প্রেমে পড়া সুদেষ্ণা আর সুদর্শন যুবক কৃষ্ণ এক লহমায় বদলে যাচ্ছে কেমন করে ম্যাজিক এর মতোই। সত্যিই এই বদলে যাওয়া বেশ ভালোই।
আমাদের জীবনের দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রণা আর পরশ্রীকাতরতার মাঝে বদলে যাওয়া হাসি হাসি মুখের ছবি ভেসে উঠছে ফেসবুকের পর্দায়। আসলে এটা একটা বেশ ভালো ব্যাপার চলছে গোটা বিশ্ব জুড়েই। পুঁজিবাদের জমানায় এই দ্রুত হারে নিজেকে বদলে ফেলার চেষ্টা করা। সমাজতন্ত্রের স্বপ্ন দেখা একদা যে পৃথিবী এখন দ্রুত গতিতে ছুটছে পুঁজিবাদের তালে তাল মিলিয়ে। টোকিও থেকে ম্যানহাটন, জার্মান থেকে গ্রেট ব্রিটেন গোটা বিশ্ব জুড়েই এখন উদার অর্থনীতির খোলা হাওয়া। যে হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে মুখের বলিরেখার ওপর হালকা পলেস্তারা দিয়ে একটু বদলে নেবার চেষ্টা করা আর কি।
আচ্ছা বদল কি এই আমার আর আপনার এই হাল আমলে একবিংশ শতকে এসে হলো। সদ্য আমরা এই ভার্চুয়াল দুনিয়ায় নিজেকে বদলে নেবার খেলায় মেতে উঠলাম নতুন করেই। না, মনে হয় সেই কৈশোর আর যৌবনের আমি যে কবেই বদলে গেছি। সেই কলেজে পড়ার সময় অচেনা অজানা এক দীঘল চোখের মেয়ের প্রেমে পড়ে ঘরছাড়ার স্বপ্ন দেখা আমি যে কবেই বদলে গিয়ে অতীত ভুলে গেছি নিজে নিজেই আজ। সেই একান্নবর্তী পরিবারের সদস্য হওয়া আমি কবেই যে বদলে গিয়ে এখন এক একাই বাঁচি নিজের মতো করেই। নিজের দুনিয়ায় আর নিজের সাড়ে সাতশো স্কোয়ার ফিটের ছোট্ট সংসারে। যে বাঁচার মধ্যে লুকিয়ে বাঁচা আছে, যে বাঁচার মধ্যে একে অপরকে টপকে বাঁচা আছে। যে বাঁচার মধ্যে এই বদলে যাওয়া জীবনের একটা প্রাণহীন বাঁচা আছে। যে বাঁচার মধ্যে শুধুই লোক দেখানো বেঁচে থাকার উজ্জ্বল ছবির মধ্য বাঁচা আছে। আর এই ভার্চুয়াল দুনিয়ায় নিজেকে ভাসিয়ে দিয়ে বাঁচা আছে।
আর তাই বোধহয় এই ভার্চুয়াল দুনিয়ায় নিজেকে ভাসিয়ে দিয়ে বেঁচে থাকা। আর তাই বোধহয় বদলে যাওয়া মানুষটার নিজেকে একটু পরখ করে নেওয়া। সত্যিই বদলানোর ছবিটা কেমন লাগে দেখতে আমায় এই এতদিন পর। যে বদলে যাওয়া পল্টু, পাড়ার কল্পনা বৌদি, সুদেষ্ণা আর কৃষ্ণর মত নিজেকে বদলে ফেলে এখন নতুন রূপে নিজেকে আবিষ্কার করা। সত্যিই অসাধারণ এই বদলে যাওয়া জীবন আর জীবনের মোহ। যে জীবন এখন শুধুই গিবলি জ্বরে আক্রান্ত। জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। দ্রুত হারে নিজে নিজেই বদলে যাচ্ছে সে। আর এ আই এর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সেই বদলে যাওয়া অবয়ব দেখে মিটিমিটি হাসছে।