দুই প্রতিবেশী দেশের রাজনৈতিক টানাপোড়েনের আবহে বহু জল্পনার ইতি টেনে, ২০২৫ সালের ৪ঠা এপ্রিল বহুল প্রতীক্ষিত দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুস। প্রায় চল্লিশ মিনিট ধরে চলা এই সংলাপে উঠে আসে দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নানা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।
বাংলাদেশে বসবাসকারী সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, তিনি স্পষ্ট বার্তায় জানান—উস্কানিমূলক আচরণ বা ধর্মীয় নিপীড়নের মতো ঘটনায় ভারত কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেবে না। পাশাপাশি, তিনি গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। আলোচনার এক পর্যায়ে উঠে আসে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রসঙ্গও, যা বৈঠকে এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করে। ঢাকা এই সংলাপকে ফলপ্রসূ ও আন্তরিক বলে মন্তব্য করেছে। এদিকে, বিএনপিও এই আলোচনাকে ইতিবাচক পরিবর্তনের সম্ভাব্য সূচনা হিসেবে বিবেচনা করছে।
ধাপে ধাপে জমে থাকা কূটনৈতিক সম্পর্কের জট খুলতে এই বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তাঁর ভাষ্যে, ভূরাজনৈতিক টানাপোড়েনের এই সংকটকালে দুই দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের আন্তরিকতা পারস্পরিক আস্থার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
ভারতের পক্ষে বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্র জানান, বৈঠকে সীমান্তে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধ এবং সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষার বিষয়ে সুস্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে। ইউনুসের দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, বৈঠকে শুধুমাত্র কূটনৈতিক সৌজন্য নয়, বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ প্রসঙ্গটি গুরুত্বের সঙ্গে তোলা হয়। পাশাপাশি, দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা তিস্তা ও গঙ্গার পানিবণ্টনের বিষয়ে দুই পক্ষ সরাসরি মত বিনিময় করেছে। জলনীতি ও আন্তঃদেশীয় স্বার্থের দৃষ্টিকোণ থেকে এই আলোচনা তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
যদিও আয়োজক ছিল বাংলাদেশ, তবুও ভারত যে এই সংলাপে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে, তা স্পষ্টতই কূটনৈতিক বার্তা বহন করে। একে ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা হিসেবেও দেখছেন অনেকে। সাম্প্রতিক ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এমন উচ্চ পর্যায়ের সংলাপ অনেককে আশাবাদী করেছে। দুই দেশের মধ্যে নতুন সম্পর্কের ভিত্তি তৈরি হচ্ছে বলেই ধারণা। আলোচনা শুরুর পর থেকে নানা মহলে এই বৈঠককে এক নতুন অধ্যায়ের সূত্রপাত হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। সম্পর্কের জমাট বাঁধা বরফ যেন ধীরে ধীরে গলতে শুরু করেছে।