নকশাল সমস্যায় দীর্ঘদিন ধরে জর্জরিত ছত্তীসগড়ের জন্য বড় ঘোষণা এল কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে। রাজ্যের প্রতিটি গ্রামকে নকশালমুক্ত করে তোলার লক্ষ্যে নতুন পরিকল্পনার কথা জানানো হয়েছে। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, ছত্তীসগড়ের প্রতিটি গ্রামকে এক কোটি টাকার আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে, যাতে তারা নিজস্ব উন্নয়ন ঘটাতে পারে এবং নকশাল প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে পারে।
এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য হল গ্রামাঞ্চলের যুব সমাজকে মূল স্রোতে ফেরানো, যাতে তারা জঙ্গলের পথ না বেছে নিয়ে শিক্ষার, কর্মসংস্থানের ও উন্নয়নের পথে হাঁটে। দীর্ঘদিন ধরে নকশাল প্রভাবিত এলাকাগুলিতে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে মাওবাদীদের সংঘর্ষের ইতিহাস রয়েছে। বহু নিরাপরাধ গ্রামবাসী এই সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন। এর ফলে ওইসব এলাকায় সরকারি কাজকর্ম, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিকাঠামো উন্নয়ন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে।
কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে, প্রতিটি গ্রাম যাতে নিজেদের চাহিদা অনুযায়ী উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি করতে পারে, তার জন্য নির্দিষ্ট গাইডলাইন তৈরি করা হবে। এই আর্থিক সাহায্য গ্রামবাসীদের হাতে নয়, বরং নির্দিষ্ট প্রশাসনিক ব্যবস্থার মাধ্যমে ব্যয় করা হবে। যাতে কোনও ধরনের দুর্নীতি বা অপব্যবহার না হয়।
এই ঘোষণাকে ঘিরে রাজ্যের নানা স্তরের মানুষজন আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। বিশেষত সীমান্তবর্তী বা গভীর জঙ্গলে থাকা গ্রামগুলির জন্য এটি একটি বড় পরিবর্তনের সূচনা হতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। দীর্ঘদিন ধরেই এই গ্রামগুলি সরকারি পরিষেবার বাইরে ছিল। সেখানে বিদ্যুৎ, জল, রাস্তা এমনকি স্কুলও ছিল না। নকশালদের প্রভাব এতটাই ছিল যে সরকার কোনও স্থায়ী পরিষেবা চালু করতে পারত না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি এই প্রকল্প সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়, তাহলে শুধু নকশাল সমস্যা নিয়ন্ত্রণেই নয়, ছত্তীসগড়ের সার্বিক উন্নয়নেও তা দৃষ্টান্ত হয়ে উঠবে। কারণ সমস্যার মূলে রয়েছে দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও প্রশাসনিক ব্যর্থতা। আর্থিক সাহায্য এবং উন্নয়নের মাধ্যমে যদি মানুষের জীবনে বদল আনা যায়, তাহলে তারা নিজেরাই নকশালপন্থার বিরোধিতা করবে।
রাজ্য সরকারও কেন্দ্রের এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে। প্রশাসনের একাংশ জানিয়েছে, অতীতে বহু প্রকল্প প্রস্তাব হলেও নানা কারণে তা বাস্তবায়িত হয়নি। তবে এবারের প্রকল্পে কেন্দ্রের সরাসরি নজরদারির ফলে দ্রুত বাস্তবায়নের সম্ভাবনা অনেক বেশি। ইতিমধ্যে নির্দিষ্ট কয়েকটি গ্রামকে মডেল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে এই প্রকল্পের প্রাথমিক ধাপ শুরু হবে।
অন্যদিকে, বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছে এই প্রকল্পের সময় ও উদ্দেশ্য নিয়ে। তাঁদের মতে, একাধিক নির্বাচনের মুখে এই ঘোষণা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। যদিও সাধারণ মানুষ আপাতত তা নিয়ে না ভেবে বাস্তবিক উন্নয়নই চাইছেন।
গ্রামে কাজের সুযোগ, স্বাস্থ্য পরিষেবা, শিক্ষার পরিকাঠামো, ও কৃষির উন্নয়ন যদি সত্যিই হয়, তাহলে ভবিষ্যতে ছত্তীসগড় নতুন দিশায় এগোবে বলেই মনে করছেন অনেকে। রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যারা গত কয়েক দশক ধরে অবহেলিত থেকেছেন, তাঁদের কাছে এই ঘোষণাটি এক আশার আলো।
এই উদ্যোগ কতটা বাস্তবায়িত হয় এবং কতটা বদল আনে ছত্তীসগড়ের মানুষের জীবনে—তা সময়ই বলবে।