ভারতের বেশিরভাগ অংশে গ্রীষ্মকাল মানেই চরম গরম, প্রচণ্ড রোদ আর অস্বস্তিকর আবহাওয়া। অনেকের ঘরেই নেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বা এয়ার কুলার, আবার অনেকে বিদ্যুৎ বিল বাঁচাতে এসব যন্ত্র কম ব্যবহার করতে চান। কিন্তু তাই বলে কি গরমে ঠান্ডা ঘুমের আশা ছেড়ে দিতে হবে? একেবারেই নয়। কিছু সহজ ঘরোয়া উপায় মেনে চললেই বিছানাকে ঠান্ডা রাখা সম্ভব, তা কুলার বা এসি ছাড়াই।
গরমের দিনে ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রথম শর্ত হলো দিনের বেলায় ঘরের জানালা ও পর্দা বন্ধ রাখা। এতে রোদের তাপ সরাসরি ঘরে ঢুকতে পারে না, ফলে বিছানাও তুলনামূলকভাবে ঠান্ডা থাকে। যারা দিনে বাইরে থাকেন, তারা সকালে বের হওয়ার আগে ঘরের সব জানালা-দরজা বন্ধ করে হালকা রঙের মোটা পর্দা টেনে রাখলে অনেকটাই উপকার পাবেন।
রাতের ঘুম যাতে স্বস্তির হয়, তার জন্য বিছানায় সুতির হালকা রঙের চাদর ব্যবহার করা উচিত। এই ধরনের কাপড় তাপ ধরে রাখে না, ফলে শরীর ঠান্ডা থাকে। সঙ্গে ব্যবহার করা যেতে পারে শীতলপাটি, যা শরীরের তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে। অনেকেই সারা শরীরের নিচে পাটি বিছিয়ে ঘুমান, যা ঘর্মাক্ততা কমাতে কার্যকর।
শুধু বিছানাই নয়, পাখার ব্যবহারেও আনা যায় পরিবর্তন। ছাদের পাখা যদি ঘরের গরম বাতাস নিচের দিকে ঠেলে দেয়, তাহলে উল্টো ঘূর্ণিতে সেটিং করে পাখা ঘোরানো যেতে পারে, যাতে গরম বাতাস উপরে উঠে যায় এবং ঘরের মধ্যে তুলনামূলক ঠান্ডা বাতাস ঘোরাফেরা করে। পাশাপাশি, ভেজা একটি পাতলা তোয়ালে পাখার সামনে ঝুলিয়ে রাখলে ঠান্ডা বাতাস পাওয়া যায়, একে বলা হয় “DIY কুলিং ট্রিক”।
অনেকেই রাতের বেলা ঘুমানোর আগে মাথার কাছে বা বালিশের পাশে ভেজা তোয়ালে রাখেন। কেউ কেউ তোয়ালেটিকে রেফ্রিজারেটরে রেখে ঠান্ডা করে নিয়ে তারপর ব্যবহার করেন। এই প্রক্রিয়া ঘুমের সময় শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে এবং ঘুম গভীর হয়।
বিছানায় শোওয়ার সময় কাপড় নির্বাচন করাও গুরুত্বপূর্ণ। হালকা সুতির পায়জামা ও ঢিলেঢালা জামা শরীরে বাতাস চলাচল নিশ্চিত করে এবং ঘর্মাক্ততা কমায়। যারা খুব গরমে ঘুমাতে পারেন না, তারা কুলিং কম্বল বা ম্যাট্রেস প্যাড ব্যবহার করতে পারেন, যা শরীরের উষ্ণতা শোষণ করে ঘুমের সময় ঠান্ডা অনুভব দেয়।
বাজারে এখন নানা ধরনের কুলিং ম্যাট্রেস বা প্যাড পাওয়া যায়, যেগুলি বিশেষ ধরনের ফ্যাব্রিকে তৈরি এবং শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কেউ চাইলে রাতে ঘুমানোর আগে এই ধরনের প্যাড ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করে নিয়ে বিছানায় ব্যবহার করতে পারেন।
গ্রীষ্মে ঘরের তাপমাত্রা যেমন বেশি থাকে, তেমনই শরীরও ক্লান্ত ও জীর্ণ হয়ে পড়ে। তাই শারীরিক ও মানসিক স্বস্তির জন্য রাতে ভালো ঘুম অত্যন্ত জরুরি। এসি বা কুলার ছাড়াও কিছু ঘরোয়া উপায়ে বিছানাকে ঠান্ডা রেখে এক স্বস্তিদায়ক ঘুম নিশ্চিত করা যায়। পরিবেশবান্ধব এই কৌশলগুলি যেমন বিদ্যুৎ বাঁচায়, তেমনই শরীরের স্বাস্থ্যের পক্ষেও উপকারী। এভাবে একটু সচেতন হলেই, গ্রীষ্মকাল আর যন্ত্রণার বিষয় থাকে না—বরং হয়ে ওঠে আরও সহনীয়।