আশঙ্কা ছিলই, এবার সত্যি সত্যিই বড় সড় ধাক্কা লাগল শেয়ার বাজারে।ট্রাম্পের শুল্ক নীতির ধাক্কায় বিশ্বজুড়ে তৈরি হওয়া আর্থিক অস্থিরতায় ১০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গেল ভারতীয় শেয়ার বাজারের সূচকগুলো।আর এর ফলে বিশেষজ্ঞদের হিসেব বলছে মাত্র ১০ সেকেন্ডে উড়ে গেল বিনিয়োগকারীদের ২০ লক্ষ কোটি টাকার সম্পদ। ট্রাম্পের ‘র্যা ডিক্যাল’ শুল্ক ঘোষণার পর এশীয় বাজারগুলিতে ব্যাপক বিক্রি শুরু হয় এবং মার্কিন ফিউচার মার্কেটও বিশাল ক্ষতির ইঙ্গিত দেয়। যার প্রতিফলন পড়ে ভারতীয় বাজারে। ‘ব্ল্যাক মানডে’ আতঙ্ক নিয়েই সোমবার এশীয় শেয়ার বাজারগুলো খোলে রক্তাক্ত অবস্থায়। এদিন বাজার খুলতেই ভারতীয় শেয়ার বাজারেও দেখা যায় বড় ধাক্কা। সোমবার সকালে বাজার খুলতেই সেনসেক্স প্রায় ৪,০০০ পয়েন্ট পড়ে যায়, যা আগের সেশনের তুলনায় ৩.৫% কম। নিফটি হারায় ১,০০০ পয়েন্টেরও বেশি। সকাল ৯টায় বাজার খুলতেই সেনসেক্স ৩,৯৩৯.৬৮ পয়েন্ট পড়ে ৭১,৪২৫.০১-এ নেমে আসে, আর নিফটি নামে ১,১৬০.৮ পয়েন্ট, দাঁড়ায় ২১,৭৪৩.৬৫-এ।
ধাক্কা লেগেছে টাকার দামেও
সোমবার সকালে বাজার খোলার সঙ্গে সঙ্গে টাকার দামও পড়ে যায়।৩০ পয়সা কমে ডলারের বিপরীতে টাকার দাম হয় ৮৫.৭৪ হয়। বাজার বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শুধুমাত্র ভারতের বাজার নয়, আন্তর্জাতিক পোর্টফোলিও ফ্লোর চেইনের অংশ হিসেবেই ভারত এই ধাক্কা খাচ্ছে।‘আমেরিকান শিল্পের সোনালি যুগ’-এর সূচনা বলে দাবি করে ট্রাম্পের চাপানো নতুন শুল্কনীতিতে ভারতের ক্ষেত্রে নির্ধারিত হার ২৬%,এর সঙ্গে সবার ওপরই আরোপিত অতিরিক্ত ১০% বেসলাইন ডিউটি।আর এর জেরেই ভারতীয় রপ্তানিকারকদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।এতে শেয়ার বিক্রির ঢল নামায় বাজারের সঙ্গে পড়েছে টাকার দামও।
বিশ্বজুড়ে শেয়ারবাজারে ধসের ছবি
বিশ্বের প্রথম খোলা বাজার অর্থাৎ এশীয় দেশগুলোর শেয়ারবাজারে সোমবার শুরুতেই ধস নামে। চিন, জাপান, তাইওয়ান, হংকং — সর্বত্রই শুল্কনীতির অভিঘাতে ব্যাপক বিক্রি শুরু হয়েছে। চিনে শেয়ারবাজার পড়েছে ৪%-এর বেশি, হংকংয়ে হ্যাং সেং সূচক ১০% পড়ে গেছে। জাপানে নিক্কেই সূচক ৬.৫% পড়ে গেছে, যা আগে দিনে ৮% পর্যন্ত নেমেছিল। তাইওয়ান ও সিঙ্গাপুরেও ধস ৮-১০% পর্যন্ত। বিনিয়োগারীদের শেয়ার বিক্রির হিড়িকে প্রভাব পড়েছে নিক্কেই থেকে কোসপি, হ্যাং সেঙে। তাইওয়ানের তাইওয়ান ওয়েটেড ইনডেক্সেও বড় ধরনের পতন দেখা গিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার বেঞ্চমার্ক সূচক এসঅ্যান্ডপি/এএসএক্স ২০০-ও ৩.৮২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
আমেরিকান বাজারেও অশনি সংকেত
নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জের ফিউচার এগ্রিমেন্ট ইতিমধ্যেই বড়সড় পতনের ইঙ্গিত দিচ্ছে, যা সোমবার মার্কিন বাজার খোলার পরই বোঝা যাবে।সোমবার এশীয় শেয়ার বাজারগুলো রক্তাক্ত অবস্থায় খোলার পর মার্কিন ফিউচারগুলো ওয়াল স্ট্রিটে উল্লেখযোগ্য ক্ষতির ইঙ্গিত দিয়েছে। বাজারে ‘ফ্রি-ফল’ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বাজার বিশেষজ্ঞ এসপিআই অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের স্টিফেন ইনেস বলছেন, “বাজারে আবারও পতনের ঢেউ চলছে, প্রতিরোধ স্তর ভেঙে পড়ছে একের পর এক। ট্রাম্পের টিম যেন চোখই বন্ধ করে আছে।এই শুল্কগুলোকে তারা জয় হিসেবে দেখছে।”
বিশ্বব্যাপী শেয়ার বাজার ক্রাশ করার পর, জেপি মরগানের অর্থনীতির প্রধান ব্রুস কাসম্যান ৬০ শতাংশ মন্দার বিপদের কথা ঘোষণা করেছেন।সিএনবিসির জিম ক্রেমার সতর্ক করে বলেছেন, বিশ্ব বাজারে রক্তপাত ১৯৮৭ সালের ‘ব্ল্যাক মানডে’র মতো পরিণতি হতে পারে। যদিও ঘরে বাইরে নানা সমালোচনা আর প্রতিবাদ সত্ত্বেও ট্রাম্প প্রশাসন তাদের ব্যাপক ট্যারিফ পরিকল্পনা থেকে পিছু হটার কোনো লক্ষণ দেখায়নি। ট্যারিফ হামলা শুরুর পর থেকে মার্কিন কোম্পানিগুলোর থেকে ট্রিলিয়ন ডলার মুছে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, ওষুধ কাজ করছে।তিনি আগেই জানান, কখনো কখনো কিছু ঠিক করতে ওষুধ খেতে হয়।