চাকরি না পাওয়া পর্যন্ত বেতন চেয়ে ফের পরীক্ষায় বসতে নারাজ যোগ্যরা
সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়
———————–!
আজ গোটা রাজ্য তাকিয়ে আছে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের দিকে। প্রায় ২৬০০০ বাতিল হয়ে যাওয়া শিক্ষক শিক্ষিকা ও শিক্ষা কর্মীদের সভায় যোগ দিতে আজ নেতাজি ইন্ডোরে যাবেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বেলা পৌনে বারোটা নাগাদ নে নেতাজি ইন্ডোরে যাওয়ার কথা মুখ্যমন্ত্রীর। সুপ্রিম কোর্টের রায় আচমকা প্রায় ছাব্বিশ হাজার চাকরি বাতিল প্রসঙ্গে রাজ্য সরকারের কি বক্তব্য ? যোগ্য অথবা অযোগ্যদের নিয়েই বাকি ভাবছেন মুখ্যমন্ত্রী? যারা যোগ্য অর্থাৎ সৎ ভাবে এই প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত হয়ে চাকরি পেয়েছেন তাদের কি ফের পরীক্ষায় বসতে হবে? অযোগ্যরাও কি যোগ্যদের সমান মর্যাদা পাবে? খোদ মুখ্যমন্ত্রী মুখ থেকে সেই কথা জানতে মুখিয়ে রয়েছেন যোগ্য চাকরিহারা ও বঞ্চিত চাকরি প্রার্থীরা। সুপ্রিম কোর্টের রায় বেরোনোর পর মুখ্যমন্ত্রী নিজেই জানিয়েছিলেন যে তিনি চাকরি হারাদের কথা শুনতে চান, তাদের সঙ্গে কথা বলতে চান এবং তার কথা তাদেরকে জানাতে চান। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সদায় হারানো চাকরি ফিরে পাওয়ার আশায় নেতাজি ইন্ডোর মুখী যোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকা ও শিক্ষা কর্মীরা। ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ, ২০১৬’ তৈরি করে ইতিমধ্যেই সৎ ভাবে পাওয়া চাকরিহারা শিক্ষকরা জানিয়ে দিয়েছেন যে অযোগ্য ভাবে বা দুর্নীতি করে যারা চাকরি পেয়েছেন এ ধরনের চিহ্নিত চাকরিজীবীরা ( সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তারাও এখন চাকরিহারা) যদি এই সভায় উপস্থিত থাকেন তাহলে এই সভায় তারা থাকবেন না। যদিও সরকারপক্ষের তরফে বা শাসক দল তৃণমূলের পক্ষ থেকে এ নিয়ে কোন উচ্চবাচ্য করা হয়নি। গোটাটাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিদ্ধান্তের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের রায় বেরোনোর পর মুখ্যমন্ত্রী বরাভয় দিয়ে জানিয়েছিলেন সরকার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে হৃদয় দিয়ে বিষয়টি দেখছে। যারা নির্দোষ তারা কেন শাস্তি পাবেন? সেই প্রশ্ন নিজেই তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এই নির্দেশের প্রেক্ষিতে আইনিপথে এখনো লড়াইয়ের সুযোগ আছে সেই ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন তিনি। “আপনারা চিন্তা করবেন না সরকার আপনাদের পাশে আছে।” এখনো পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর এই বরাভয়ের দিকেই তাকিয়ে যোগ্য চাকরিহারারা।
যদিও আশায় বুক বাঁধলেও দুরাশাও কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে এই চাকরিহারা শিক্ষক শিক্ষিকা ও শিক্ষা কর্মীদের। আদালতের কাছে তারা ন্যায় বিচার পাননি। এই অসন্তোষের কথা জানিয়ে তার স্পষ্ট বক্তব্য আমরা ফের কোন পরীক্ষায় বসবো না। আমাদের চাকরি ফিরিয়ে দিতে হবে তার জন্য দায়িত্ব নিতে হবে রাজ্য সরকারকে। রিভিউ পিটিশনে ভরসা করছেন না তারা। ফের চাকরি না পাওয়া পর্যন্ত বেতন দিতে হবে তাদের এই দাবিতেও সরব হয়েছেন যোগ্য চাকরিহারারা। তা না হলে চরম সিদ্ধান্তের দিকে তারা যে এগিয়ে যেতে বাধ্য হবেন সেটাও জানাতে ভোলেননি এই যোগ্য চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তাই মুখ্যমন্ত্রীর কথা শুনতে এবং নিজেদের কথা জানাতে গতকাল দিনভর নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম এর এই সভার পাস হাতে পাওয়ার ব্যস্ততা ছিল তুঙ্গে। কেউ সদ্যোজাত অথবা কলের শিশুকে সঙ্গে নিয়ে নেতাজি ইনডোরের বাস তুলতে লাইনে দাঁড়িয়েছেন কেউবা নিজের ও পরিবারের ভবিষ্যৎ চিন্তায় চোখের জলে ভেসে গেলেও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে উপযুক্ত জবাব পেতে চাইছেন। হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ( এই এসএসসি দুর্নীতি মামলা প্রথম থেকেই যার এজলাসে ছিল) ইতিমধ্যেই সংবাদ মাধ্যমে জানিয়েছেন যোগ্য এবং অযোগ্যদের বাছাই করার কাজ এখনো সম্ভব। সিবিআই যে মাদার হার্ডডিস্ক উদ্ধার করেছিল সেখানেই সব OMR রয়েছে। এসএসসি ওই OMR গুলি খতিয়ে দেখলেই অযোগ্যদের আলাদা করা সম্ভব হবে। ফলে যোগ্যদের আর পরীক্ষায় বসতে হবে না। একটি কমিটি গঠন করে এই বাছাই প্রক্রিয়া করা হোক সেই পরামর্শ দিয়েছেন প্রাক্তন বিচারপতি তথা বর্তমান বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। যদিও যে বিচারপতির নাম মুখে আনতে চাইছেন না মুখ্যমন্ত্রী তিনি তার এই উপদেশ মানবেন তা নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন চাকরিহারারা। পাশাপাশি তাদের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, ২০২১ সাল থেকে কলকাতার রাস্তায় বঞ্চিত চাকরি প্রার্থীরা যেভাবে অনশন ধরনা অবস্থান করেছেন বা এখনো কেউ কেউ করছেন তাদের কাছে একদিনের জন্যও যাননি মুখ্যমন্ত্রী। সেই মুখ্যমন্ত্রী কি যোগ্য অযোগ্য বাছাই অথবা যোগ্য চাকরিহারাদের সহমর্মী হবেন? এই সব কিছু উত্তর মিলবে আজ নেতাজি ইনডোরের সভায়।