দু’দিনের সফরে মঙ্গলবার নতুন দিল্লিতে এসে পৌঁছোন দুবাইয়ের যুবরাজ শেখ হামদান বিন মোহাম্মদ আল মাকতুম।বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুরেশ গোপি। দুবাইয়ের যুবরাজের এটিই প্রথম সরকারি ভারত সফর। তাঁর সঙ্গে ভারতে এসেছেন মন্ত্রী, সরকারের শীর্ষ আধিকারিক ও উচ্চস্তরীয় এক বাণিজ্য প্রতিনিধি দল। বিমানবন্দরে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে গার্ড অফ অনার প্রদান করা হয় এবং প্রতিমন্ত্রী সুরেশ গোপী তাঁকে স্বাগত জানান।
দুবাইয়ের যুবরাজ ইউএইর উপপ্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীও। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ভারত- আমিরশাহি সম্পর্কের প্রশংসা করেন তিনি। দুবাইয়ের যুবরাজের সঙ্গে সাক্ষাতের পর প্রধানমন্ত্রী মোদী এক্স বার্তায় জানিয়েছেন, “দুবাইয়ের যুবরাজ শেখ হামদান বিন মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুমের সঙ্গে দেখা করে খুশি হলাম। ভারত-সংযুক্ত আরব আমিরাশাহীর ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্বকে এগিয়ে নিতে দুবাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এই বিশেষ সফর আমাদের গভীর বন্ধুত্বকে পুনঃনিশ্চিত করে এবং ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী সহযোগিতার পথ প্রশস্ত করবে।”
প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে বৈঠকের পর এক্স -এ শেখ হামদান লেখেন, “আজ নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাতে দারুণ আনন্দ পেয়েছি। আমাদের আলাপচারিতা ভারত-আমিরশাহি সম্পর্কের দৃঢ়তা পুনর্ব্যক্ত করেছে — যা বিশ্বাসের ওপর প্রতিষ্ঠিত, ইতিহাস দ্বারা গঠিত এবং এক যৌথ ভবিষ্যতের স্বপ্নে চালিত, যা সুযোগ, উদ্ভাবন ও টেকসই সমৃদ্ধিতে পরিপূর্ণ।”
প্রধানমন্ত্রী মোদী যুবরাজের সম্মানে একটি ভোজসভার আয়োজন করেন। যুবরাজ বৈঠক করেন বিদেশ মন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের সঙ্গে। বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর বলেন, “দুবাইয়ের যুবরাজ ও ইউএই-এর উপপ্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী মাননীয় হামদান মোহাম্মদ-কে ভারত সফরের শুরুতেই স্বাগত জানাতে পেরে আনন্দিত। আমাদের বিস্তৃত সহযোগিতা ও প্রাণবন্ত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জন্য তাঁর ইতিবাচক মনোভাবকে আমি যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছি।” এদিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন দুবাইয়ের যুবরাজ। তাঁদের মধ্যে প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠক হয়।
ভারত ও ইউএই-এর মধ্যে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী মোদীর ঐতিহাসিক সফরের পর থেকে, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদেশমন্ত্রকের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “ঐতিহ্যগতভাবে, দুবাই ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির বাণিজ্যিক, সাংস্কৃতিক এবং জনগণের মধ্যে যোগাযোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। মহামান্য ক্রাউন প্রিন্সের এই সফর ভারত-সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্বকে আরও মজবুত করবে এবং দুবাইয়ের সঙ্গে আমাদের বহুমুখী সম্পর্ককে শক্তিশালী করবে।”
দিল্লির পর ক্রাউন প্রিন্স বা দুবাইয়ের যুবরাজ মুম্বই সফর করবেন এবং উভয় দেশের বিশিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একটি ব্যবসায়িক গোলটেবিলে অংশ নেবেন। এই আলোচনা ভারত-সংযুক্ত আরব আমিরশাহির অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতাকে ঐতিহ্যগত এবং ভবিষ্যৎ-মুখী ক্ষেত্রে আরও শক্তিশালী করবে। এই গোলটেবিলে পরিকাঠামো এবং শক্তির মতো ঐতিহ্যগত ক্ষেত্রগুলির পাশাপাশি ফিনটেক, উদ্ভাবন এবং টেকসই উন্নয়নের মতো উদীয়মান ক্ষেত্রে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির সুযোগ খুঁজে বের করা হবে।মুম্বইয়ে শিল্পপতিদের সঙ্গে বাণিজ্যিক গোলটেবিল বৈঠক দুদেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতাকে আরও শক্তিশালী করবে।তা হবে ঐতিহ্যবাহী ক্ষেত্রগুলির পাশাপাশি ভবিষ্যতমুখী বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও।
দুবাই দীর্ঘদিন ধরে ভারতের সঙ্গে ইউএই-এর বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে আসছে। আমিরশাহিতে বসবাসকারী প্রায় ৪৩ লক্ষ ভারতীয় প্রবাসী সম্প্রদায়ের একটি বড় অংশ দুবাইয়ে বসবাস করে, যা দুই দেশের মধ্যে গভীর জনগণের সম্পর্কের ভিত্তি। এই সফর ভারত-ইউএই ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্বে নতুন গতি যোগ করবে এবং দুবাইয়ের সঙ্গে ভারতের প্রাতিষ্ঠানিক ও জনগণের স্তরের সম্পর্ককে আরও উন্নত করবে।
Leave a comment
Leave a comment