সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ রায়ে জানিয়ে দিয়েছে, তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল আর এন রবি সংবিধানের সীমার বাইরে গিয়ে কাজ করেছেন। রাজ্য সরকার যে দশটি বিল বিধানসভায় পাশ করিয়ে পাঠিয়েছিল, সেগুলিকে রাজ্যপাল অনুমোদন না দিয়ে দীর্ঘ সময় আটকে রাখেন এবং পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য পাঠান। এই পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করেই তামিলনাড়ুর ডিএমকে সরকার সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করে।
আদালতের মতে, সংবিধানের ২০০ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, রাজ্যপাল বিল পেলে সেটি সম্পর্কে তিনটি পদক্ষেপের মধ্যে একটি নিতে পারেন—স্বীকৃতি প্রদান, আপত্তি জানিয়ে ফেরত পাঠানো, অথবা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো। তবে এই পদক্ষেপগুলি গ্রহণের নির্দিষ্ট সময়সীমা রয়েছে। রাজ্যপাল চাইলেও কোনও বিল অনির্দিষ্টকালের জন্য আটকে রাখতে পারেন না। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, এক মাসের বেশি বিল আটকে রাখা আইনসিদ্ধ নয়। আর যদি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর প্রয়োজন হয়, তাহলে সেটিও তিন মাসের মধ্যে করতে হবে।
এই প্রসঙ্গে আদালত পর্যবেক্ষণ করে বলে, রাজ্যপালের ভূমিকা হবে “গাইড” বা “মার্গদর্শক”-এর মতো, তিনি যেন কোনও রাজনৈতিক পক্ষপাত না দেখান বা নির্বাচিত সরকারকে বাধা না দেন। আদালত স্পষ্ট করে দেয়, রাজ্যপাল রাজনীতির অংশ নন, বরং তিনি সংবিধান রক্ষার দায়িত্বে নিযুক্ত একজন সাংবিধানিক প্রধান।
রায়ে বিচারপতিদের মন্তব্যে উঠে এসেছে, রাজ্যের গণতান্ত্রিক কাঠামো এবং কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করাটাই মূল কথা। রাজ্য সরকার যে দ্বিতীয়বারও একই বিল বিধানসভায় পাশ করিয়ে পাঠিয়েছিল, সেটিও আদালতের নজরে আসে। বিচারপতিরা বলেন, দ্বিতীয়বার পাস হওয়া বিল রাজ্যপালের কাছে কোনও প্রশ্ন না তুলে সরাসরি অনুমোদনের যোগ্য হওয়া উচিত ছিল।
এই রায়ের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্ট শুধু তামিলনাড়ুর নয়, দেশের অন্যান্য রাজ্যেও রাজ্যপালের ভূমিকার উপর নির্ভরশীলতা, রাজনৈতিক ব্যাখ্যার সীমা এবং সাংবিধানিক শৃঙ্খলা পুনর্নির্ধারণ করল। আদালতের এই পর্যবেক্ষণ ভবিষ্যতে রাজ্য সরকার ও রাজ্যপালের সম্পর্ক নিয়ে নানা বিতর্কের মীমাংসায় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
রাজ্যপাল ও নির্বাচিত সরকারের মধ্যেকার সম্পর্ক সব সময়ই সংবেদনশীল। সুপ্রিম কোর্ট এই মামলার রায়ে সেই সম্পর্কের দায়িত্ব, সীমাবদ্ধতা এবং স্বচ্ছতা নিয়ে নতুন আলো ফেলে দিল। রায়টি প্রমাণ করল, রাজনীতির উর্দ্ধে থেকে সাংবিধানিক মূল্যবোধ রক্ষা করাই রাজ্যপালের প্রধান কাজ।