ওয়াকফ বিল নিয়ে কেন্দ্র ও বিরোধীদের জবাব মুখ্যমন্ত্রীর
সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়
বাংলায় কারো সম্পত্তি কেড়ে নেওয়া হবে না। divide and rule বা বিভাজনের নীতি বাংলায় বরদাস্ত করা হবে না। জিও অর জিনে দো এটাই বাংলার স্লোগান। গুলি করে মারলেও বাংলা ঐক্যের পথ ছাড়বে না। আজ নেতাজি ইন্ডোরে জৈন ধর্মাবলম্বীদের অনুষ্ঠানে রাজ্যের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে এই বার্তাই দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে ওয়াকফ বিল নিয়ে কেন্দ্রীয় নীতির বিরুদ্ধে জোর সওয়াল করলেন মুখ্যমন্ত্রী।
মমতার কথায়, স্বাধীনতার আগে থেকেই এই একতার ধর্ম ভারতবর্ষের পরম্পরা। ব্রিটিশরা ডিভাইড এন্ড রুল পলিসি তৈরি করেছিল। স্বাধীন ভারতে সেই বিভাজনের নীতি কেন হবে? সমালোচনাও করলেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য” ভাগাভাগি করলে দেশ ভাগ হয়ে যাবে। দেশের একতা রক্ষা করতে হবে কারো সম্পত্তি কেড়ে নেওয়ার অধিকার সরকারের নেই। সবার অধিকারকে বাঁচিয়ে না রাখলে নিজেদের অধিকার থাকবে না। রাজ্যের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে মমতার বার্তা “আপনারা কোন উস্কানি বা প্ররোচনায় পা দেবেন না। মানবতা একতা ও সম্প্রীতি বাংলার গর্ব। বাংলায় সব ধর্মের মানুষ নিরাপদে থাকবেন। ভরসা রাখুন, কোনও রাজনৈতিক দল পাশে না থাকলেও আমরা আপনাদের পাশে আগেও ছিলাম এখনো আছি ভবিষ্যতেও থাকবো।”
আগামীকাল মহাবীর জয়ন্তী। সেই উপলক্ষে আজ নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে সর্বধর্ম সমন্বয়ে সভার আয়োজন করে জৈন সম্প্রদায়। সেই সভায় মূল বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বক্তব্য রাখতে গিয়ে ভারতের সনাতন ধর্মের মূল আদর্শ এবং ভারতের সংস্কৃতির মূল ভাবধারার প্রসঙ্গ টেনে আনেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য শুধু নয় সব ধর্ম সব ভাষাভাষী মানুষের সমান অধিকার এটাই ভারতীয় সংবিধানের মূল কথা। বাংলায় হিন্দু ধর্মের স্বার্থ রক্ষা করা হয় না বিরোধীদের এই বক্তব্যেরও এদিন উত্তর দেন মমতা।
এক একজনের ধর্মীয় আচার বা প্রার্থনার সিস্টেম আলাদা আলাদা। তা নিয়ে বিভেদ তৈরি করা অর্থহীন এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার নামান্তর। ভারতীয় সনাতনী সংস্কৃতি বা ধর্মীয় ভাবধারার এই মূল কথা উল্লেখ করে মমতার প্রশ্ন ” ধর্মপ্রাণ সংখ্যালঘুরা তাদের মত করে তাদের ধর্ম পালন করবে এতে বাধা কোথায়? আমি মুসলিম সংখ্যালঘুদের অনুষ্ঠানে গেলে কেন প্রশ্ন তোলা হবে? আমি যদি জৈন ধর্মাবলম্বীদের সভায় যাই তাহলেই বা কেন প্রশ্ন উঠবে?” মমতার কথায়, মানুষের গায়ে রক্ত আছে আর সেই মানুষই আসল মানুষ যে সবাইকে ভালোবাসে। তাই কেউ যদি সংখ্যালঘুদের কোন সভায় যেতে আমাকে বাধা দেয় তবুও আমি সেখানে যাবোই সে জয়েন হোক খ্রিস্টান হোক শিখ হোক বা মুসলমান হোক। মমতা জানান, বাংলায় রাজ্য সরকার কোন ধর্মীয় ভেদাভেদকে প্রশ্রয় দেয় না। মমতার বাংলায় যেমন মসজিদের সংস্কার হয়েছে তেমনি দক্ষিণেশ্বর কালীঘাট মন্দিরের সংস্কার হয়েছে গুরুদ্বারার উন্নয়ন হয়েছে, খ্রিস্টানদের চার্চের উন্নয়ন সরকার সাহায্য করেছে। একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নতুন ইসকন মন্দির তৈরির জন্য মায়াপুর ইসকনকে ৭০০ একর জমি দিয়েছে রাজ্য। দক্ষিণেশ্বরের উন্নয়নের পাশাপাশি স্বামী বিবেকানন্দের জন্মভিটের লাইট অ্যান্ড সাউন্ড চালানোর খরচ যোগায় রাজ্য সরকার বলে উল্লেখ করেন মমতা। এমনকি তিনি রেলমন্ত্রী থাকাকালীন সমস্ত ধর্মস্থানের রেল স্টেশনগুলিকে মডেল স্টেশন তৈরির পরিকল্পনা করেছিলেন সে কথাও জানাতে ভোলেননি মমতা। পরিশেষে মুখ্যমন্ত্রী বার্তা দেন ” বাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য মেনে সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষ একসঙ্গে বসবাস করুন। ভাগাভাগি বা বিভেদের প্ররোচনায় পা দেবেন না। এই বাংলা সবার এই বাংলায় সবার সমান অধিকার। কারো অধিকার বা সম্পত্তি এই বাংলায় কেউ কেড়ে নেবে না। আমি আপনাদের পাশে আছি, থাকবো।”