বুধবার থেকেই ভারতে কার্যকর হচ্ছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাপানো মার্কিন শুল্কনীতি।আর এই আর্থিক অনিশ্চয়তার মাঝেই ঋণগ্রহীতাদের জন্য স্বস্তির খবর শোনালেন আরবিআই গভর্নর সঞ্জয় মলহোত্রা।এদিন রেপো রেট ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা জানিয়েছেন তিনি। মনেটারি পলিসি কমিটির বৈঠকের পর আজ রেপো রেট কমানোর ঘোষণা করলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রধান।এই নিয়ে টানা দ্বিতীয় দফায় রেপো রেট কমানোর সিদ্ধান্ত নিল আরবিআই।এর আগে ফেব্রুয়ারিতে রেপো রেট কমিয়ে ৬.২৫ শতাংশ করা হয়েছিল।রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রা জানান, মুদ্রানীতি কমিটি সর্বসম্মতভাবে এই রেপো রেট কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।গত ৭ তারিখ থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত চলে মনেটারি পলিসি কমিটির বৈঠক।এর ফলে ঋণ নিলে ইএমআই পরিশোধের ক্ষেত্রে স্বস্তি পেতে পারেন আম জনতা।
কাকে বলে রেপো রেট?
রেপো রেটকে পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্ট রেটও বলা হয়।এটি হলো সেই হার যার ভিত্তিতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে ঋণ দেয়।এই হার কমলে সাধারণত ব্যাঙ্কগুলি গ্রাহকদেরও সেই সুবিধা দিয়ে থাকে।এই সিদ্ধান্তে ব্যাঙ্কগুলোর জন্য ঋণের খরচ কমবে, যার ফলে তারা গ্রাহকদের আরও কম সুদে ঋণ দিতে পারবে।এর প্রভাব সরাসরি পড়বে হোম লোন, গাড়ি লোনের মতো ঋণের উপর,কমবে মাসিক ইএমআই।মুদ্রানীতি কমিটি সর্বসম্মতভাবে এই রেপো রেট কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।এর আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে রেপো রেট ০.২৫ শতাংশ কমিয়ে ৬.৫ থেকে ৬.২৫ শতাংশ করা হয়েছিল।
রেপো রেট কমায় কী লাভ গ্রাহকের?
রেপো রেট কমায় কমতে পারে বাড়ি এবং গাড়ির ঋণে মাসিক কিস্তি।রেপো রেট কমলে এর সঙ্গে যুক্ত সমস্ত বহিরাগত ঋণে সুদের হার কমে।এই হার কমলে সাধারণত ব্যাঙ্কগুলি গ্রাহকদেরও সেই সুবিধা দিয়ে থাকে।এর জেরে স্বস্তি পায় ব্যাঙ্ক ঋণ নেওয়া আমজনতা।কমে তাদের মাসিক কিস্তির অঙ্ক। সে কারণে এবার রিজার্ভ ব্যাঙ্ক রেপো রেট কমাতেই হাসি ফুটেছে ঋণ গ্রহণকারীদের মুখে।
ট্রাম্প শুল্ক লাগুর দিনেই জিডিপি হারে বদল
ভারত থেকে আমদানি পণ্যের ওপর ২৬ শতাংশ শুল্ক আগেই ঘোষণা করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বুধবার থেকেই কার্যকর হয়ে গেল সেই ট্যারিফ।ট্রাম্পের স্বস্তি পাওয়া দেশগুলির তালিকায় আছে ভারত। ট্রাম্প ভারতের উপর আরোপিত পারস্পরিক শুল্ক ২৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৬ শতাংশ করেন।এদিকে এদিনই আরবিআই-এর তরফ থেকে ভারতের জিডিপি বৃদ্ধির হারের পূর্বাভাস পরিবর্তন করা হয়েছে। আগে বলা হয়েছিল চলতি অর্থবর্ষে ভারতের অর্থনীতি ৬.৭ হারে বৃদ্ধি পেতে পারে।চলতি অর্থবছরের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ২০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৬.৫ শতাংশ করা হয়েছে।আরবিআই গভর্নর জানান,২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে সার্বিক ভাবে ভারতের রিয়েল জিডিপি থাকবে ৬.৫ শতাংশ।প্রথম কোয়ার্টারে তা থাকবে ৬.৫ শতাংশ, দ্বিতীয় কোয়ার্টারে ৬.৭ শতাংশ, তৃতীয় কোয়ার্টারে ৬.৬ শতাংশ এবং চতুর্থ কোয়ার্টারে ৬.৩ শতাংশ। গভর্নর জানিয়েছেন, “বৈশ্বিক বাণিজ্য সংঘাতের কারণে বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ক্ষতি হতে পারে,যার প্রভাব ভারতের অভ্যন্তরীণ বৃদ্ধির উপরও পড়বে।উচ্চ হারে ট্যারিফ রপ্তানির উপর প্রভাব ফেলতে পারে। ভারত এ বিষয়ে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যোগাযোগ রেখে চলেছে।”
মুদ্রাস্ফীতির হারেও এল বড় বদল
আগামী দিনে কমতে চলেছে মুদ্রাস্ফীতির হার,সংশোধিত মুদ্রাস্ফীতির হার প্রকাশ করে সেই ইঙ্গিত দিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া।মুদ্রানীতি কমিটির বৈঠকের শেষে সম্ভাব্য সংশোধিত মুদ্রাস্ফীতির হার ঘোষণা করে আরবিআই গভর্নর জানান চলতি আর্থিক বছরে তা আরও ২০ বেসিস পয়েন্ট কমবে।এই অর্থবর্ষের প্রথম তিন মাসে মুদ্রাস্ফীতির হার ৪.৫ শতাংশ থাকবে বলে মনে করা হয়েছিল।আরবিআই সেই সূচক ৩.৬ শতাংশে নামিয়ে এনেছে।সে ক্ষেত্রে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দর যে হ্রাস পাবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।অর্থাৎ বাংলা নতুন বছরের আগে স্বস্তির খবরই পেলেন সাধারণ মানুষ।