মুসলিম সমাজের সঙ্গে বৈঠক মুখ্যমন্ত্রীর
সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়
ওয়াকফ সংশোধনী আইন নিয়ে উত্তাপের আগুন এখনো পুরোপুরি নেভেনি রাজ্যে। মুর্শিদাবাদ সহ রাজ্যের একাধিক জেলায় ওয়াক অফ অশান্তির জেরে উত্তপ্ত পরিস্থিতি ধীরে ধীরে ছন্দে ফিরছে। পরিস্থিতি এতটাই অগ্নিগর্ভ হয়েছিল যে আধাসেনা নামিয়ে তা নিয়ন্ত্রণে আনতে হয়। এই অবস্থায় আজ কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ইমাম-মোয়াজ্জেন ও মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই বৈঠকে মুসলিম সমাজের সর্বস্তরের প্রতিনিধি ও মুসলিম গুণীজনদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছেন যে নতুন ওয়াকফ সংশোধনী আইন ই রাজ্যে কার্যকর করা হবে না। শুধু তাই নয়, নেতাজি ইনডোরের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আগেই জানিয়েছিলেন যে বাংলায় কারো সম্পত্তি কেড়ে নেওয়া হবে না। বাংলায় সব ধর্মের সাংবিধানিক অধিকার সুরক্ষিত থাকবে বলেও আশ্বাস দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তবে প্রশাসনিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, সংসদের দুই কক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জেরে পাস হয়েছে ওয়াক অফ সংশোধনী বিল ২০২৫। যা রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে ওয়াকফ সংশোধনী আইনে পরিণত। অর্থাৎ সংসদের দুই কক্ষে পাস হওয়া ও রাষ্ট্রপতির অনুমতি প্রাপ্ত এই সর্বভারতীয় আইন একটি অঙ্গরাজ্যে কিভাবে নাকচ করা যায়? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বা বিতর্কের সমাধানসূত্র বের করতে আজকের বৈঠকের অবতারণা বলে মনে করছে প্রশাসনিক মহল। মূলত সংবিধানিক রীতিনীতি অনুযায়ী একটি কেন্দ্রীয় আইন গোটা দেশেই সমভাবে প্রযোজ্য। সেক্ষেত্রে একটি অঙ্গরাজ্য হিসেবে পশ্চিমবঙ্গ বিপরীতমুখী রাস্তায় হাঁটবে কোন পথে সেই রাস্তা খুঁজে বের করতেই আজ মুসলিম সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সর্বভারতীয় এই আইনের সারবত্তা কি? আইনের প্রস্তাবনায় যা যা রয়েছে তার সঙ্গে মুসলিম ধর্মের বিরোধ কোথায়? কোন পথে আইন বাঁচিয়ে মুসলিম সমাজের স্বার্থ রক্ষা করা যায় বা সাংবিধানিক অধিকার বজায় রাখা যায় সেই দিকেই দিক নির্দেশ করতে এই বৈঠকের আয়োজন বলে সরকারি মহলের ধারণা। বিশেষ করে এই বৈঠকে উপস্থিত থাকা মুসলিম সমাজের গুণীজন বা বিশিষ্টজনদের বক্তব্য কি তা শুনতে চান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি রাজ্যে ধর্মের নামে যে অধার্মিক আচরণ চলছে তা নিয়েও বার্তা দিতে চান মুখ্যমন্ত্রী বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কেন্দ্রীয় সরকারের আইনের বিরোধিতা করতে গিয়ে রাজ্যে নিজের হাতে আইন তুলে নিয়ে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি যে রাজ্য সরকার বরদাস্ত করবে না সে কথাও এদিনের বৈঠকে বুঝিয়ে দিতে চাইবেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে একদিকে সাংবিধানিক অধিকার রক্ষা করতে কেন্দ্রীয় আইনের বিকল্প রাস্তা খোঁজা এবং অন্যদিকে রাজ ধর্ম পালনের স্বার্থে ধর্মের নামে অধার্মিক কাজ করা বার্তা দেওয়া এই দুইয়ের লক্ষ্যেই রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এই বৈঠক বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।