পাকিস্তানের সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্ভাবনার ক্ষেত্রে ইসলামাবাদের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করার উপর গুরুত্ব দিলেন মুহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় পাকিস্তানের বিদেশ সচিব আমনা বালুচ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এই আহ্বান জানান।
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী প্রধান উপদেষ্টা জানান, কিছু বাধা আছে এবং সেগুলো কাটিয়ে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার উপায় খুঁজে বের করতে হবে। অতীতের নানা বিষয় উল্লেখ করে আমনা বালুচ বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে দুই দেশের মধ্যে সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর উপায় খুঁজে বের করতে হবে। দুদেশের বিশাল আন্ত-বাজার সম্ভাবনা রয়েছে বলে সহমত হন তাঁরা।
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে পাকিস্তানের ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফপিসিসিআইয়ের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করে এবং বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সই করে। পাক বিদেশ সচিবের আশা এপ্রিলের শেষ দিকে পাক উপ-প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দারের আসন্ন সফর দুই দেশের সম্পর্ককে আরও জোরদার করবে।
জুলাই আন্দোলন ও তার পরবর্তী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এক সময়ের শত্রু পাকিস্তান হয়ে উঠতে চলেছে বাংলাদেশের বন্ধু। মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃতে নতুন বাংলাদেশের সঙ্গে একসময়ের বন্ধু ভারতের দূরত্ব তৈরি হওয়ায় সেই সুযোগকেই কাজে লাগিয়ে মাঠে নেমেছে পাকিস্তান। সেই হয়ে ওঠা সুসম্পর্কের সুত্র ধরে রাজধানী ঢাকায় বসে বাংলাদেশ পাকিস্তান বিদেশ সচিব পর্যায়ের বৈঠক। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন বিদেশ সচিব মো. জসিম উদ্দিন। বৃহস্পতিবার দীর্ঘ ১৫ বছর পর ঢাকায় অনুষ্ঠিত হল দু দেশের বিদেশসচিব পর্যায়ের বৈঠক।
পাকিস্তানের জন্য মুহাম্মদ ইউনূসের দ্বার খুলে দেওয়ার পর দ্রুত বদলে যেতে চলেছে ওপারবাংলার রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক চিত্র। গত কয়েক মাসে বাংলাদেশে চরমপন্থী ও উগ্রবাদীদের আরও সোচ্চার হতে দেখা গেছে। পাশাপাশি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উত্তরাধিকার মুছে ফেলারও চেষ্টা চলছে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার সমর্থকদের উদ্দেশ্যে দেওয়া অডিও ভাষণে ইউনুসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ইতিহাস, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধে অবদান মুছে ফেলার অভিযোগ তুলেছেন। বাংলাদেশ পর্যবেক্ষকদের মতে, পাকিস্তান সেদেশে ভারত-বিরোধী শক্তিকে উৎসাহিত করতে ভূমিকা রাখছে। ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার আল-কায়েদা-সম্পর্কিত সন্ত্রাসী সংগঠন আনসারুল্লাহ্ বাংলা টিমের (এবিটি) প্রধান জশিমউদ্দিন রহমানীর মতো ব্যক্তিদের মুক্ত করে দিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ পাকিস্তান ও চিনের দিকে ঝুঁকেছে। ঢাকার সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের আঁতুড়ঘর পাকিস্তানের এই আঁতাঁতে চিন্তিত ভারতও। হাসিনা পরবর্তী সময়ে ঢাকার চিনের সঙ্গে সখ্যতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ইসলামাবাদের কাছাকাছি আসার এমন পরিস্থিতিতে গোটা বিষয়ের নজর রাখছে দিল্লি।
সময় নিউজের তথ্য অনুযায়ী প্রধান উপদেষ্টা নিউইয়র্কে রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে এবং কায়রোতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে তার বৈঠকের কথা স্মরণ করে বলেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতির ক্ষেত্রে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান সার্ক, ওআইসি ও ডি-৮ এর মতো বহুপাক্ষিক ও আঞ্চলিক ফোরামে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাবে।
Leave a comment
Leave a comment